বিশ্বের একেক স্থানের জীবনযাপনের ধরন, খাবার, পোশাক, সংস্কৃতি একেক রকম। পৃথিবীতে এমন অনেক জায়গা রয়েছে, যেখানকার অদ্ভূত রীতিনীতি, ঐতিহ্য দেখলে বা শুনতে আশ্চর্য লাগে। এ রকমই এক অদ্ভূত স্থান হলো যুক্তরাজ্যের হার্টফোর্ডশায়ারের একটি গ্রাম। যেখানে পোশাক ছাড়াই ঘুরে বেড়ান বাসিন্দারা।

শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি। এই গ্রামের কেউ পোশাক পড়েন না। এমনকি, বাইরের কেউ যদি সেই গ্রামে বাস করতে চান তাহলে তাকেও সম্পূর্ণ উলঙ্গ হয়ে গ্রামে থাকতে হয়। এটাই শর্ত।

যুক্তরাজ্যের হার্টফোর্ডশায়ারে স্পিলপ্ল্যাটজ নামে একটি গ্রাম রয়েছে। স্পিলপ্ল্যাটজ শব্দের অর্থ খেলার মাঠ। এই গ্রামটিকে সিক্রেট ভিলেজ নামেও ডাকা হয়। ১৯২৯ সালে চার্লস ম্যাককাস্কি এই গ্রামটির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। গ্রামটিকে গোপন গ্রাম হিসাবেও দেখা হয়। বহু বছর ধরে মানুষ এই জায়গায় কাপড় ছাড়াই ঘুরে বেড়াচ্ছে। আট থেকে আশি মানে শিশু থেকে বৃদ্ধ, নারী পুরুষ নির্বিশেষে এই গ্রামে কেউ পোশাক পরেন না।

গ্রামের অনেক বাসিন্দা আছেন যারা দীর্ঘ প্রায় ৯০ বছরেরও বেশি সময় এখানে বসবাস করছেন। এবং এত বছর তারা পোশাক ছাড়াই গ্রামে কাটিয়েছেন। এমনকি, এই গ্রামে নগ্ন হলেই আপনি জমি কিনতে পারবেন এবং বাড়ি-ঘর বা বসবাস করতে হবে নগ্ন হয়েই। দীর্ঘদিন ধরে এই রীতিই চলে আসছে ওই গ্রামে। এই গ্রামে থাকতে হলে তাদের রীতি মেনেই থাকতে হবে। ওই গ্রামের মানুষেরা নগ্নতার মধ্যে অসভ্যতার কিছু দেখেন না।

এই গ্রামের মানুষের বিশ্বাস যে, সৃষ্টিকর্তা মানুষকে পোশাক ছাড়াই এই দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন, তাই পোশাক ব্যাপারটাই লোকদেখানো। তাই এই পোশাক পরা উচিত নয়। যুক্তরাজ্যের হার্টফোর্ডশায়ারে স্পিলপ্ল্যাটজ গ্রামের মানুষরা পোশাক পরেন না ঠিকই, কিন্তু তা বলে ভাববেন না যে তারা আদিমযুগে বসবাস করছেন।

আধুনিক জীবন যাপনের যাবতীয় সুযোগ সুবিধা রয়েছে এই গ্রামে। বড় বড় বিলাসবহুল বাড়ি, সুইমিং পুল, বার, রেস্তোরাঁ সবই রয়েছে এখানে। গ্রামের বেশিরভাগ বাড়িই বালো প্যাটার্নের। এই বাড়িগুলির মূল্য লক্ষাধিক পাউন্ড। বাড়িতে রয়েছে যাবতীয় বিলাসব্যসনের ব্যবস্থাও সুযোগ সুবিধা। বাইরে থেকে কোনও ব্যক্তি ই গ্রামে থাকতে চাইলে বা সেখানে বাড়ি কিনে বসবাস করতে চাইলে তাকের পোশাক বর্জন করতে হয়। না হলে নগ্নতার গ্রামে প্রবেশ নিষেধ।

এই গ্রামটি পর্যটকদের কাছেও বেশ পরিচিত। দূরদূরান্ত থেকে বহু পর্যটক এখানে আসেন। তাদের ক্ষেত্রেও নিয়মের কোনও ব্যতিক্রম হয় না। পর্যটকরা যদি ওই গ্রামে থাকেন, তা হলে তাদেরও বিনা পোশাকে থাকতে হবে। না হলে থাকার অনুমতি দেওয়া হয় না। দীর্ঘ দিন ধরে এমনটাই এখানে হয়ে আসছে।