• শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০২:১৩ অপরাহ্ন
Notice
We are Updating Our Website

বজ্রপাতে একদিনে ১১ জনের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেট : শুক্রবার, ৩ মে, ২০২৪

দেশের পাঁচ জেলায় বজ্রপাতে একদিনে নারীসহ ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাঙ্গামাটিতে তিনজন, কক্সবাজারের পেকুয়ায় দুইজন, কুমিল্লায় চারজন, সিলেটের কানাইঘাটে একজন ও খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় এক স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

রাঙ্গামাটি: জেলার দুই উপজেলায় বজ্রপাতে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। সকালে রাঙ্গামাটি শহরের সিলেটিপাড়া ও বাঘাইছড়ি উপজেলার রুপাকারী ইউনিয়নের মুসলিম ব্লকে এবং দুপুরে একই উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের লুইনথিয়ান পাড়ায় এসব বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- সদর উপজেলার সিলেটিপাড়া এলাকার বাসিন্দা নজির (৫০), বাঘাইছড়ি উপজেলার রুপাকারী ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের মুসলিম ব্লক গ্রামের লাল মিয়ার স্ত্রী বাহারজান বেগম (৫৫) ও সাজেক ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের লুইনথিয়ান পাড়ায়বেটলিং মৌজার কারবারি মিথুন ত্রিপুরার বোন তনিবালা ত্রিপুরা (২৫)।

রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক শওকত আকবর বলেন, সকালে শহরের সিলেটিপাড়া থেকে একজনকে হাসপাতালে আনা হয়। তিনি বজ্রপাতে মারা গেছেন।

অন্যদিকে বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিরীন আক্তার বলেন, বাঘাইছড়ি উপজেলায় বজ্রপাতে মোট দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থকে প্রতি পরিবারকে ১০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

কক্সবাজার: জেলার পেকুয়ায় বজ্রপাতে কিশোরসহ দুই লবণ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। ভোরে উপজেলার মগনামা ও রাজাখালী ইউনিয়ন এলাকার লবণের মাঠে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত দিদারুল ইসলাম (৩০) মগনামা ইউনিয়নের কোলাইল্লাদিয়া এলাকার জমির উদ্দিনের ছেলে। অপরজন, আরাফাত হোসাইন (১৪) উপজেলার রাজাখালী ইউনিয়নের ছরিপাড়া এলাকার জামাল হোসেনের ছেলে।

নিহত দিদারের চাচা জাকের হোসাইন বলেন, ভোর ৪টার দিকে আকাশে মেঘ জমলে ভাতিজা দিদারকে নিয়ে আমিও লবণ তুলতে মাঠে যাই। এ সময় বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই মারা যান দিদারুল ইসলাম।

মগনামা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) প্যানেল চেয়ারম্যান বদিউল আলম বলেন, দিদার আমার পার্শ্ববর্তী আবুল কালামের লবণ মাঠে কাজ করতেন। ভোরে আকাশে মেঘ দেখা গেলে অন্য শ্রমিকের মতো লবণ তুলতে গিয়ে বজ্রাঘাতের কবলে পড়েন তিনি। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

অপরদিকে, একই সময়ে লবণ তুলতে বাবার সঙ্গে মাঠে গিয়ে বজ্রপাতে মারা গেছে কিশোর ফরহাদ হোসাইন। তাকে মাঠ থেকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য নুরুল আবছার বদু।

পেকুয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুদীপ্ত ভট্টাচার্য বলেন, এখনও থানায় এ সংক্রান্ত তথ্য আসেনি। আমরা খোঁজ নিচ্ছি।

পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইফুল ইসলাম জয় বলেন, ৩টার দিকে মাঠে লবণ তুলতে গিয়ে বজ্রপাতে দুইজন মারা গেছেন। তাদের পরিবারকে প্রশাসনিক সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

কুমিল্লা: বিকেলে পৃথক সময়ে জেলার চান্দিনা, সদর দক্ষিণ, বুড়িচং ও দেবিদ্বারে বজ্রপাতে চারজনের মৃত্যু হয়েছে।

বজ্রপাতে মারা যাওয়া ব্যক্তিরা হলেন- চান্দিনা উপজেলার বরকইট ইউনিয়নের কিছমত-শ্রীমন্তপুর গ্রামের সুন্দর আলীর ছেলে দৌলতুর রহমান (৪৭), সদর দক্ষিণ উপজেলার গলিয়ার ইউনিয়নের উত্তর সূর্যনগর গ্রামের আতিকুল ইসলাম (৫০), কুমিল্লা দেবিদ্বার উপজেলার ধামতী গ্রামের মোখলেছুর রহমান (৫৮) এবং বুড়িচং উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের পাচোরা গ্রামের কুদ্দুস মিয়ার আলম হোসেন।

সংশ্লিষ্ট থানার ওসি ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লার চান্দিনায় বরকইট ইউপির কিছমত-শ্রীমন্তপুর গ্রামে কৃষিকাজ করার সময় বজ্রপাতে দৌলতুর রহমানের মৃত্যু হয়। বুড়িচংয়ের রাজাপুর ইউনিয়ন নোয়াপাড়া গ্রামে মো. আলম হোসেন ধান কাটার সময় বজ্রপাতে মারা যান। আর বাকি দুইজন বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই মারা যান।

সিলেট: জেলার কানাইঘাটে ধান কাটতে গিয়ে বজ্রপাতে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। দুপুরে কানাইঘাট উপজেলার দিঘীরপাড় পূর্ব ইউনিয়নের শফিক হাওরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। মৃত কৃষক বাবুল আহমদ (৪৮) উপজেলার দক্ষিণ কুয়রের মাটি এলাকার মৃত আব্দুস সালামের ছেলে।

স্থানীয়রা জানান, দুপুরে বাবুল হাওরে ধান কাটতে যান। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন ভাতিজা ফাহিম আহমদ ও প্রদীপ বিশ্বাসসহ আরো দুইজন। হঠাৎ বজ্রপাত তাদের ওপর পড়লে গুরুতর আহত হন। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসকরা বাবুলকে মৃত ঘোষণা করেন।

কানাইঘাট থানার ওসি জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বজ্রপাতে বাবুল আহমদের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

খাগড়াছড়ি: জেলার মাটিরাঙ্গায় বজ্রপাতে ইয়াছিন আরাফাত (১৩) নামে এক স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। সকালে উপজেলার বড়নাল ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ইব্রাহিম পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। মৃত ইয়াছিন আরাফাত বড়নাল ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ইব্রাহিম পাড়ার বাসিন্দা ইউসুফ মিয়ার ছেলে। সে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ছিল।

জানা যায়, সকালে বৃষ্টি ও ঝোড়ো বাতাসের মধ্যে বাড়ির উঠানের পাশে কাঁচা আম কুড়াতে যায় দুই ভাই। এ সময় আকস্মিক বজ্রপাতে ছোট ভাই প্রাণে বেঁচে গেলেও বড় ভাই ইয়াছিন আরাফাত ঘটনাস্থলেই মারা যায়।

মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ডেজী চক্রবর্তী বলেন, সকালে বজ্রাঘাতে এক স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। এ মৃত্যু বড়ই মর্মান্তিক। তাদের পরিবারকে প্রশাসনিক সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।


আপনার মতামত লিখুন :
এ জাতীয় আরও খবর