• রবিবার, ১২ মে ২০২৪, ০৭:৫০ অপরাহ্ন
Notice
We are Updating Our Website

‘নেশার টাকা না পেয়ে’ বালিশচাপা দিয়ে স্ত্রী-কন্যাকে হত্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেট : বুধবার, ৬ জানুয়ারী, ২০২১

ডেস্ক রিপোর্ট: নেশার টাকার জন্য স্ত্রীর নাকফুল ও কানের দুল বিক্রি করতে চেয়েছিল স্বামী ফিরোজ মন্ডল (৩৫)। কিন্তু দিতে রাজি না হওয়ায় স্ত্রীর ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে রাতে বালিশচাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে স্ত্রী ও পাঁচ মাসের কন্যা শিশুকে খুন করে ফিরোজ।

তারপর স্ত্রীর কানের দুল ও নাকফুল খুলে নিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। হত্যার পর নিজে আত্মহত্যাও করতে চেয়েছিল, কিন্তু করেনি। শেষ পর্যন্ত ঢাকায় গিয়ে আত্মগোপন করে।

রাজশাহীর পুঠিয়ায় জোড়া খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর পুলিশের কাছে এসব স্বীকার করেছে ঘাতক ফিরোজ মন্ডল।

রাজধানীর দারুস সালাম থানা থেকে মঙ্গলবার রাতে রাজশাহীর পুঠিয়ায় নিয়ে আসা হয় ফিরোজকে। বুধবার বিকেলে ফিরোজ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় সে। রাজশাহীর আমলি আদালত-৩ এর বিচারক রাসেল মাহমুদের কাছে তিনি ঘটনার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। পুঠিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) খালেদুর রহমান স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেন।

এ ঘটনায় ফিরোজের বাবা ও মাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুধবার তাদেরও আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পরে তিনজনকেই রাজশাহী কারাগারে পাঠানো হয়।

পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, ঢাকায় গাবতলীতে গ্রেপ্তারের পর পুঠিয়া থানা পুলিশের একটি দল তাকে ঢাকা থেকে পুঠিয়ায় নিয়ে আসে। রাতে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সে স্ত্রী ও তার শিশু কন্যাকে হত্যার কথা স্বীকারও করে।

ফিরোজ জানিয়েছে, সে চরম আর্থিক অনটনের মধ্যে রয়েছে, ঋণগ্রস্তও। এসব নিয়ে মানসিক অশান্তির মধ্যে ছিল। কয়েক বছর আগে সে একটি ঢাকা কোচে সুপার ভাইজারের চাকরি করত। একটি দুর্ঘটনায় তার বাম পায়ের নিচের দিক কেটে ফেলতে হয়। এর পর আর্থিক কষ্ট আরো বেড়ে যায়। এক সময় সে অটোরিকশা চালালেও এখন সেটিও নাই। টাকার জন্য সে মাঝেমধ্যেই স্ত্রীর কাছে হাত পাতত। নেশার টাকা জোগাড় করা ছিল তার জন্য বড় চাপ। সোমবার সন্ধ্যায় সে তার স্ত্রীর নাকের ফুল ও কানের দুল চেয়েছিল। কিন্তু তার স্ত্রী সেটা দিতে রাজি হয়নি। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে ঝগড়া হয়। রাতে ঝগড়ার একপর্যায়ে সে ক্ষিপ্ত হয়ে পলি বেগমকে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে। পাশেই শুয়ে ছিল পাঁচ মাসের শিশু সন্তান ফারিয়া ও আড়াই বছরের সন্তান ফাহিম আলী। ফিরোজের ভাষ্য ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে ফারিয়া চাপা পড়ে যায়। দুজনের মৃত্যুর পর ফিরোজ পালিয়ে যায় বাড়ি থেকে।

সে জানায়, রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী রাত ১২টায় ছেড়ে যাওয়া বাসটি পুঠিয়ায় পৌঁছে ১২টা ৪০ মিনিটে। পুঠিয়া বাজার থেকে সেই বাসে উঠে ঢাকায় রওনা হয় সে। উদ্দেশ্য ছিল আত্মগোপন করা। ভোর ৫টা ২০ মিনিটে গাবতলি এলাকায় পৌঁছার পরপরই দারুস সালাম থানা পুলিশ ফিরোজকে আটক করে।

পুঠিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) খালেদুর রহমান জানান, মা ও মেয়ে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে নিহত পলি বেগমের ভাই মো. কাজল বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এ মামলায় ফিরোজ ছাড়াও তার বাবা হাসিব আলী ও মা চায়না বেগমকে আসামি করা হয়েছে। তাদেরও মঙ্গলবারই গ্রেপ্তার করা হয়।

রাজশাহী জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইফতেখায়ের আলম জানান, ফিরোজ ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। সে দাবি করেছে, আর্থিক অনটন ঋণের বোঝা নিয়ে সে চরম মানসিক অশান্তিতে ছিল। এসব নিয়েই স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়াও হয়। এরই জের ধরে সে হত্যার ঘটনাটি ঘটিয়েছে। তবে স্ত্রীকে মারার সময় চাপা পড়ে তার পাঁচ মাসের কন্যা শিশুটি মারা যায় বলে সে দাবি করেছে।

 


আপনার মতামত লিখুন :
এ জাতীয় আরও খবর