আচ্ছা আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন কাঠঠোকরারা কেনো গাছে এমনভাবে ঠোকরায়? তবে আমি নিজে আগে মনে করতাম কোনো অপরাধের ফলে ঈশ্বর সম্ভবত এভাবে তাদের সাজা দিচ্ছে! বা তারা শারীরিক কোনো উত্তেজনার ফলে এমন করছে! আসলে আমি ভুল চিন্তা করেছিলাম।
তাদের এমন উদ্ভট আচরণের বেশকিছু যুক্তিযুক্ত কারণ রয়েছে। আসলে এই আচরণ তাদের বেঁচে থাকার জন্য খুবই গুরুতবপূর্ন।
আজ দৈনিক এইদিনের পাঠকদের কাছে কাঠঠোকরাদের এমন আচরণের কারণ সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা থাকবে, যা জানলে আপনি অবাক হতে বাধ্য…
১. কাঠঠোকরা খাদ্যের সন্ধানে গাছে ঠোকরায়
পৃথিবীর সকল প্রাণীর খাদ্য সংগ্রহের নিজস্ব উপায় রয়েছে, কাঠঠোকরাদের এমন আচরণের অন্যতম কারণ নিজেদের বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য সংগ্রহ করা।
যেমন কিছু ঈগল মাছ ধরতে পানির নিচে নিজেদের পা ডুবিয়ে রাখে, মাছেরা তার পায়ের কাছাকাছি আসলে অমনি গলা ডুবিয়ে সে মাছটিকে ধরে ফেলে। তেমনি কাঠঠোকরারা লার্ভা, পিঁপড়া বা অন্য কোনও পোকামাকড় গাছের ছিদ্রে ঢুকতে দেখে সেখানে ঠুকরিয়ে তাদের ধরে খায়। তবে এখানে মজার ব্যাপার হচ্ছে কীটপতঙ্গগুলি ধরে খেতে সে তার লম্বা ঠোঠের পরিবর্তে জিহ্বা ব্যবহার করে।
২. কাঠঠোকরারা পারস্পারিক যোগাযোগ রক্ষার্থে গাছে ঠোকরায়
অন্যান্য পাখিরা যেমন কিচিরমিচির করে ডাকে পারস্পারিক যোগাযোগ রক্ষা করে, কাঠঠোকরারা তেমন নিজস্ব শব্দ করতে পারে না। একারণে তারা তাদের শক্ত ঠোঠ দিয়ে গাছের গায়ে হাতুড়ি পেটার মত শব্দ করে নিজ প্রজাতিসহ অন্য প্রানীদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে।
তবে মজার বিষয় হল এই শব্দটি তাদের সম্ভাব্য শিকারী এবং প্রতিদ্বন্দ্বীদের ভয় দেখাতে বেশি ব্যবহার করে। এছাড়া সঙ্গীকে আকর্ষণ করতেও তারা গাছে ঠোকরায়।
৩. কাঠঠোকরা গাছে ঠোকরিয়ে নিজের বাসা তৈরি করে
বেশিরভাগ পাখি নিজেদের পালক গাছের পাতা ব্যবহার করে বাসা বানায়, তবে এরা গাছ খোদাই করে নিজেদের বাসা তৈরি করে। সহজ কথায় নিজেদের বাসা বানাতে এরা খোদাই শিল্পের উপর নির্ভরশীল।
তবে মজার বিষয় হচ্ছে- আপনি যদি দেখেন কোনো গাছে এরা ছোট ছোট একাধিক গর্ত তৈরি করেছে তাহলে সেখানে সে খাদ্যের খোজে ঠোকরিয়েছে, আর নিজেদের বাসা বানাতে সাধারণত এরা গভীর এবং বড় আকৃতির গর্ত করে।
৪. কাঠঠোকরা গাছে ঠোকরায় কারণ তাদের এই ক্ষমতা আছে
পৃথিবীতে আর এমন কোনো পাখি নেই যাদের এমন ক্ষমতা আছে। অন্যান্য পাখিদের চেয়ে কাঠঠোকরাদের ঘাড় অনেক শক্ত থাকে। এ কারণে এরা নিজেদের কোনো ক্ষতি না করেই ঘাছে ঠোকর দিতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে এরা একদিনে কমপক্ষে ১০,০০০ বার গাছে ঠোকর দিতে সক্ষম। তাদের ঘাড় বিশেষ রকম শক্ত থাকার কারণে এটা ঠোকরের কম্পন থেকে নিজেদের কোনোরকম ক্ষতি ছাড়া রক্ষা করতে পারে।
৫. কাঠঠোকরা নিজেদের সীমানা চিহ্ন ঠোকরের মাধ্যমে দিয়ে থাকে
মানুষ থেকে শুরু করে প্রায় সকল প্রানীই নিজেদের সীমানা সম্পত্তি নির্দিষ্ট করে রাখে। যেমন মানুষেরা প্রাচীর দিয়ে নিজেদের সীমানা নির্দিষ্ট করে, আবার কুকুরেরা প্রসাবের মাধ্যমে নিজেদের সীমানা নির্দিষ্ট করে। ঠিক তেমনি গাছ ঠুকরিয়ে কাঠঠোকরারা নিজেদের সীমানা নির্দিষ্ট করে নেয়।
৬. শারীরিক বৈশিষ্ট্যের কারণে তারা ঠোকরায়
আসলে কাঠঠোকরা গাছের ক্ষতি করার জন্য গাছে ঠোকরায় না, জন্মগত বৈশিষ্ট্যের কারণে নিজেদের টিকিয়ে রাখতে এবং ঠোঠের আকার বৃদ্ধি রুখতে তারা গাছে ঠোকরায়। তারা এ কাজ করে নিজেসের টিকিয়ে রাখে।