
শিশুরা জাতির ভবিষ্যৎ, সমাজের নির্মল পুষ্প। তাদের হৃদয়, কোমলতা এবং স্নেহে বিকশিত হলে তারা গড়ে ওঠে আলোকিত মানুষ রূপে। আর এই কোমল প্রাণদের প্রতি সবচেয়ে মমতাময় আচরণ ছিল একজন মহান ব্যক্তির, তিনি হলেন বিশ্বনবি হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
তিনি শুধু দয়ালু নবিই ছিলেন না, ছিলেন একজন আদর্শ পিতা, কোমল হৃদয়ের অভিভাবক। তাঁর জীবন আমাদের শেখায়, কেমন হওয়া উচিত ছোটদের প্রতি ভালোবাসা, যত্ন ও আচরণ। আজকের এই যান্ত্রিক সমাজে তাঁর এই আচরণগুলোই হতে পারে আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য আদর্শ পথপ্রদর্শক।
নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছোটদের প্রতি ছিলেন অত্যন্ত স্নেহশীল। ছোটদের ভীষণ ভালোবাসতেন তিনি। নিজ হাতে তাদের আদর করতেন, কোলে নিতেন, চুমু খেতেন, মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করতেন।
একবার কয়েকজন সাহাবি নবিকরিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে দাওয়াত খেতে বের হলেন। তখন রাস্তায় খেলা করছেন ছোট্ট হুসাইন। নবিকরিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবার সামনে এগিয়ে গেলেন এবং তাকে কোলে নেওয়ার জন্য উভয় হাত বাড়িয়ে দিলেন। কিন্তু হুসাইন এদিক-সেদিক ছোটাছুটি শুরু করলেন। তখন নবিজি হুসাইনকে ধরার জন্য হাস্যরস করছিলেন। অবশেষে ধরে ফেললেন তাকে। তারপর মাথা নুইয়ে হুসাইনের মুখে মুখ রেখে চুমু খেলেন নবিজি। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৪৪; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ১৭৫৬১; ইবনে হিব্বান, হাদিস: ৬৯৭১)
আর যারা ছোটদের আদর করত না, তিনি তাদের ভর্ৎসনা করতেন। একবার জনৈক বেদুইন সাহাবি নবিকরিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসলেন। (নবিকরিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক শিশুকে চুমু দিলেন)। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি কি শিশুদের চুমু খান? উত্তরে নবিজি বললেন,
হ্যাঁ। তিনি বললেন, আমরা তো শিশুদের চুমু দেই না। এ কথা শুনে নবিকরিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “আল্লাহ তোমার দিল থেকে রহম ছিনিয়ে নিলে আমার কী করার আছে? (বুখারি, হাদিস: ৫৯৯৮; মুসলিম, হাদিস: ২৩১৭; ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩৬৬৫)
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিশুদের সঙ্গে সময় কাটাতে পছন্দ করতেন। তিনি তাদের সঙ্গে হাঁটতেন, হাসতেন, এমনকি তাদের সঙ্গে মজার খেলাও করতেন।
একবার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান ও হুসাইন রাযিয়াল্লাহু আনহুমাকে পিঠে চড়িয়ে বলেছিলেন, তোমাদের বাহন কতই না উত্তম! এবং তোমরা কতই না উত্তম আরোহী! (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ১১১৭১)
একজন নবী হয়েও, তিনি শিশুদের মন জোগাতে এমনভাবে মিশতেন যেন তিনি তাদেরই একজন। এতে বোঝা যায়, শিশুরা যেন কখনো নিজেদের অবহেলিত না ভাবে, বরং বড়দের ভালোবাসা পায়।
নবীজির কোমল হৃদয় শিশুদের কষ্টে কেঁদে উঠত। এমনকি ছোট একটি পাখির মৃত্যুতে কষ্ট পাওয়া শিশুর দুঃখ লাঘব করতেও তিনি এগিয়ে যেতেন। হাদিসে আছে,
উম্মে সুলাইম (রা.)-এর এক ছোট্ট ছেলে ছিল, নাম আবু উমাইর। তার একটা ‘নুগাইর’ পাখি ছিল। নবিকরিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই উম্মে সুলাইম (রা.)-এর ঘরে আসতেন, আবু উমাইরের সঙ্গে হাসি-ঠাট্টা করতেন। একদিন তাঁর কাছে এসে দেখলেন, তার মন খারাপ। বললেন, “কী হলো আবু উমাইর? মন খারাপ কেন? লোকেরা বলল, সে যে নুগাইর পাখিটা দিয়ে খেলা করত, সেটা মারা গেছে। এরপর থেকে যখনই নবিকরিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দেখতেন, বলতেন, আবু উমাইর! তোমার নুগাইরটার কী হলো? (দেখছি না যে!) (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬২০৩; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২১৫০; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ১২৯৫৭, ১৩০৭৭, ১৩২০৯)
একটি পাখির মৃত্যুতে যে দুঃখবোধ নবিজি বুঝতে পেরেছেন, তা আজকের পিতামাতাদের জন্য এক মহান দৃষ্টান্ত।
ছোটরা বড়দের স্নেহের অধিকারী। বড়রা তাদের স্নেহ করলে তারাও বড়দের সম্মান করবে। শিক্ষা পাবে সুন্দর আচার-আচরণ ও ভদ্রতা। এ কারণেই নবিকরিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের স্নেহ করতেন এবং অন্যদেরও উৎসাহ দিতেন ছোটদের প্রতি স্নেহশীল হতে। তিনি ছোটদের শারীরিক শাস্তি, মানসিক নির্যাতনসহ তাদের প্রতি সর্বপ্রকার কঠোর আচরণ করতে নিষেধ করতেন। বলতেন,
যে ব্যক্তি ছোটদের স্নেহ করে না এবং বড়দের সম্মান বোঝে না, সে আমাদের দলভুক্ত নয়। (তিরমিজি, হাদিস: ২৪৪; আবু দাউদ, হাদিস: ৪৯৪৫)
আজ দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, আমাদের সমাজে কিছু মানুষ আছে যারা ছোটদের মারধর করে। অনেক বাবা-মা সন্তানকে শাসন করতে গিয়ে সীমা অতিক্রম করেন, যার ফলে শিশুর মনে গভীর আঘাত লাগে।
অথচ ছোটদের মারধরের ব্যাপারে ফুকাহায়ে কেরামের অভিমত হলো, মুতলাকভাবে তাদের মারধর করা উচিত নয়; তবে তা’লিম ও সংশোধনের উদ্দেশ্যে শুধুমাত্র হাত দ্বারা তিনবার আঘাত করা যেতে পারে, এর বেশি নয়। লাঠি দ্বারা প্রহার করা জায়েজ নেই। চেহারা এবং স্পর্শকাতর অঙ্গগুলোতে কোনোভাবেই আঘাত করা যাবে না। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, এতেও যেন তাদের সহ্যের সীমা অতিক্রম না করে। (মুসনাদে আহমাদ, ২/৪৮৩; রদ্দুল মুহতার (শামী) ২/৭ + ৯৭১০; ফাতওয়া হিন্দিয়া (আলমগীরি) ২/১৮৬; কেফায়াতুল মুফতি ৯/১৬৫; ফাতওয়া মাহমুদিয়া ২০/৩০৫)
আজকের বাস্তবতায়, যেখানে শিশুদের উপর শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেখানে নবিজির আদর্শ আমাদের জন্য এক বিরাট দৃষ্টান্ত।
সুতরাং আজকের এই ব্যস্ততাপূর্ণ জীবনে আমরা যদি নবিজির শিশুপ্রেমের এই দৃষ্টান্তগুলো বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করি, তবে পরিবার হবে ভালোবাসার নীড়, সমাজ হবে কোমল ও মানবিক। আমাদের সন্তানরা পাবে শান্তি ও নিরাপত্তার স্পর্শ। ছোটদের হৃদয়ে গাঁথা হবে সেই স্নেহের শিক্ষা, যা তাদের গড়ে তুলবে একটি আলোকিত ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হিসেবে। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক: শিক্ষার্থী, জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম রামপুরা (বনশ্রী মাদরাসা), ঢাকা,

শিশুরা জাতির ভবিষ্যৎ, সমাজের নির্মল পুষ্প। তাদের হৃদয়, কোমলতা এবং স্নেহে বিকশিত হলে তারা গড়ে ওঠে আলোকিত মানুষ রূপে। আর এই কোমল প্রাণদের প্রতি সবচেয়ে মমতাময় আচরণ ছিল একজন মহান ব্যক্তির, তিনি হলেন বিশ্বনবি হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
তিনি শুধু দয়ালু নবিই ছিলেন না, ছিলেন একজন আদর্শ পিতা, কোমল হৃদয়ের অভিভাবক। তাঁর জীবন আমাদের শেখায়, কেমন হওয়া উচিত ছোটদের প্রতি ভালোবাসা, যত্ন ও আচরণ। আজকের এই যান্ত্রিক সমাজে তাঁর এই আচরণগুলোই হতে পারে আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য আদর্শ পথপ্রদর্শক।
নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছোটদের প্রতি ছিলেন অত্যন্ত স্নেহশীল। ছোটদের ভীষণ ভালোবাসতেন তিনি। নিজ হাতে তাদের আদর করতেন, কোলে নিতেন, চুমু খেতেন, মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করতেন।
একবার কয়েকজন সাহাবি নবিকরিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে দাওয়াত খেতে বের হলেন। তখন রাস্তায় খেলা করছেন ছোট্ট হুসাইন। নবিকরিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবার সামনে এগিয়ে গেলেন এবং তাকে কোলে নেওয়ার জন্য উভয় হাত বাড়িয়ে দিলেন। কিন্তু হুসাইন এদিক-সেদিক ছোটাছুটি শুরু করলেন। তখন নবিজি হুসাইনকে ধরার জন্য হাস্যরস করছিলেন। অবশেষে ধরে ফেললেন তাকে। তারপর মাথা নুইয়ে হুসাইনের মুখে মুখ রেখে চুমু খেলেন নবিজি। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৪৪; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ১৭৫৬১; ইবনে হিব্বান, হাদিস: ৬৯৭১)
আর যারা ছোটদের আদর করত না, তিনি তাদের ভর্ৎসনা করতেন। একবার জনৈক বেদুইন সাহাবি নবিকরিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসলেন। (নবিকরিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক শিশুকে চুমু দিলেন)। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি কি শিশুদের চুমু খান? উত্তরে নবিজি বললেন,
হ্যাঁ। তিনি বললেন, আমরা তো শিশুদের চুমু দেই না। এ কথা শুনে নবিকরিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “আল্লাহ তোমার দিল থেকে রহম ছিনিয়ে নিলে আমার কী করার আছে? (বুখারি, হাদিস: ৫৯৯৮; মুসলিম, হাদিস: ২৩১৭; ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩৬৬৫)
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিশুদের সঙ্গে সময় কাটাতে পছন্দ করতেন। তিনি তাদের সঙ্গে হাঁটতেন, হাসতেন, এমনকি তাদের সঙ্গে মজার খেলাও করতেন।
একবার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান ও হুসাইন রাযিয়াল্লাহু আনহুমাকে পিঠে চড়িয়ে বলেছিলেন, তোমাদের বাহন কতই না উত্তম! এবং তোমরা কতই না উত্তম আরোহী! (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ১১১৭১)
একজন নবী হয়েও, তিনি শিশুদের মন জোগাতে এমনভাবে মিশতেন যেন তিনি তাদেরই একজন। এতে বোঝা যায়, শিশুরা যেন কখনো নিজেদের অবহেলিত না ভাবে, বরং বড়দের ভালোবাসা পায়।
নবীজির কোমল হৃদয় শিশুদের কষ্টে কেঁদে উঠত। এমনকি ছোট একটি পাখির মৃত্যুতে কষ্ট পাওয়া শিশুর দুঃখ লাঘব করতেও তিনি এগিয়ে যেতেন। হাদিসে আছে,
উম্মে সুলাইম (রা.)-এর এক ছোট্ট ছেলে ছিল, নাম আবু উমাইর। তার একটা ‘নুগাইর’ পাখি ছিল। নবিকরিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই উম্মে সুলাইম (রা.)-এর ঘরে আসতেন, আবু উমাইরের সঙ্গে হাসি-ঠাট্টা করতেন। একদিন তাঁর কাছে এসে দেখলেন, তার মন খারাপ। বললেন, “কী হলো আবু উমাইর? মন খারাপ কেন? লোকেরা বলল, সে যে নুগাইর পাখিটা দিয়ে খেলা করত, সেটা মারা গেছে। এরপর থেকে যখনই নবিকরিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দেখতেন, বলতেন, আবু উমাইর! তোমার নুগাইরটার কী হলো? (দেখছি না যে!) (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬২০৩; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২১৫০; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ১২৯৫৭, ১৩০৭৭, ১৩২০৯)
একটি পাখির মৃত্যুতে যে দুঃখবোধ নবিজি বুঝতে পেরেছেন, তা আজকের পিতামাতাদের জন্য এক মহান দৃষ্টান্ত।
ছোটরা বড়দের স্নেহের অধিকারী। বড়রা তাদের স্নেহ করলে তারাও বড়দের সম্মান করবে। শিক্ষা পাবে সুন্দর আচার-আচরণ ও ভদ্রতা। এ কারণেই নবিকরিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের স্নেহ করতেন এবং অন্যদেরও উৎসাহ দিতেন ছোটদের প্রতি স্নেহশীল হতে। তিনি ছোটদের শারীরিক শাস্তি, মানসিক নির্যাতনসহ তাদের প্রতি সর্বপ্রকার কঠোর আচরণ করতে নিষেধ করতেন। বলতেন,
যে ব্যক্তি ছোটদের স্নেহ করে না এবং বড়দের সম্মান বোঝে না, সে আমাদের দলভুক্ত নয়। (তিরমিজি, হাদিস: ২৪৪; আবু দাউদ, হাদিস: ৪৯৪৫)
আজ দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, আমাদের সমাজে কিছু মানুষ আছে যারা ছোটদের মারধর করে। অনেক বাবা-মা সন্তানকে শাসন করতে গিয়ে সীমা অতিক্রম করেন, যার ফলে শিশুর মনে গভীর আঘাত লাগে।
অথচ ছোটদের মারধরের ব্যাপারে ফুকাহায়ে কেরামের অভিমত হলো, মুতলাকভাবে তাদের মারধর করা উচিত নয়; তবে তা’লিম ও সংশোধনের উদ্দেশ্যে শুধুমাত্র হাত দ্বারা তিনবার আঘাত করা যেতে পারে, এর বেশি নয়। লাঠি দ্বারা প্রহার করা জায়েজ নেই। চেহারা এবং স্পর্শকাতর অঙ্গগুলোতে কোনোভাবেই আঘাত করা যাবে না। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, এতেও যেন তাদের সহ্যের সীমা অতিক্রম না করে। (মুসনাদে আহমাদ, ২/৪৮৩; রদ্দুল মুহতার (শামী) ২/৭ + ৯৭১০; ফাতওয়া হিন্দিয়া (আলমগীরি) ২/১৮৬; কেফায়াতুল মুফতি ৯/১৬৫; ফাতওয়া মাহমুদিয়া ২০/৩০৫)
আজকের বাস্তবতায়, যেখানে শিশুদের উপর শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেখানে নবিজির আদর্শ আমাদের জন্য এক বিরাট দৃষ্টান্ত।
সুতরাং আজকের এই ব্যস্ততাপূর্ণ জীবনে আমরা যদি নবিজির শিশুপ্রেমের এই দৃষ্টান্তগুলো বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করি, তবে পরিবার হবে ভালোবাসার নীড়, সমাজ হবে কোমল ও মানবিক। আমাদের সন্তানরা পাবে শান্তি ও নিরাপত্তার স্পর্শ। ছোটদের হৃদয়ে গাঁথা হবে সেই স্নেহের শিক্ষা, যা তাদের গড়ে তুলবে একটি আলোকিত ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হিসেবে। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক: শিক্ষার্থী, জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম রামপুরা (বনশ্রী মাদরাসা), ঢাকা,

শিশুরা জাতির ভবিষ্যৎ, সমাজের নির্মল পুষ্প। তাদের হৃদয়, কোমলতা এবং স্নেহে বিকশিত হলে তারা গড়ে ওঠে আলোকিত মানুষ রূপে। আর এই কোমল প্রাণদের প্রতি সবচেয়ে মমতাময় আচরণ ছিল একজন মহান ব্যক্তির, তিনি হলেন বিশ্বনবি হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
তিনি শুধু দয়ালু নবিই ছিলেন না, ছিলেন একজন আদর্শ পিতা, কোমল হৃদয়ের অভিভাবক। তাঁর জীবন আমাদের শেখায়, কেমন হওয়া উচিত ছোটদের প্রতি ভালোবাসা, যত্ন ও আচরণ। আজকের এই যান্ত্রিক সমাজে তাঁর এই আচরণগুলোই হতে পারে আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য আদর্শ পথপ্রদর্শক।
নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছোটদের প্রতি ছিলেন অত্যন্ত স্নেহশীল। ছোটদের ভীষণ ভালোবাসতেন তিনি। নিজ হাতে তাদের আদর করতেন, কোলে নিতেন, চুমু খেতেন, মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করতেন।
একবার কয়েকজন সাহাবি নবিকরিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে দাওয়াত খেতে বের হলেন। তখন রাস্তায় খেলা করছেন ছোট্ট হুসাইন। নবিকরিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবার সামনে এগিয়ে গেলেন এবং তাকে কোলে নেওয়ার জন্য উভয় হাত বাড়িয়ে দিলেন। কিন্তু হুসাইন এদিক-সেদিক ছোটাছুটি শুরু করলেন। তখন নবিজি হুসাইনকে ধরার জন্য হাস্যরস করছিলেন। অবশেষে ধরে ফেললেন তাকে। তারপর মাথা নুইয়ে হুসাইনের মুখে মুখ রেখে চুমু খেলেন নবিজি। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৪৪; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ১৭৫৬১; ইবনে হিব্বান, হাদিস: ৬৯৭১)
আর যারা ছোটদের আদর করত না, তিনি তাদের ভর্ৎসনা করতেন। একবার জনৈক বেদুইন সাহাবি নবিকরিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসলেন। (নবিকরিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক শিশুকে চুমু দিলেন)। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি কি শিশুদের চুমু খান? উত্তরে নবিজি বললেন,
হ্যাঁ। তিনি বললেন, আমরা তো শিশুদের চুমু দেই না। এ কথা শুনে নবিকরিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “আল্লাহ তোমার দিল থেকে রহম ছিনিয়ে নিলে আমার কী করার আছে? (বুখারি, হাদিস: ৫৯৯৮; মুসলিম, হাদিস: ২৩১৭; ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩৬৬৫)
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিশুদের সঙ্গে সময় কাটাতে পছন্দ করতেন। তিনি তাদের সঙ্গে হাঁটতেন, হাসতেন, এমনকি তাদের সঙ্গে মজার খেলাও করতেন।
একবার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান ও হুসাইন রাযিয়াল্লাহু আনহুমাকে পিঠে চড়িয়ে বলেছিলেন, তোমাদের বাহন কতই না উত্তম! এবং তোমরা কতই না উত্তম আরোহী! (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ১১১৭১)
একজন নবী হয়েও, তিনি শিশুদের মন জোগাতে এমনভাবে মিশতেন যেন তিনি তাদেরই একজন। এতে বোঝা যায়, শিশুরা যেন কখনো নিজেদের অবহেলিত না ভাবে, বরং বড়দের ভালোবাসা পায়।
নবীজির কোমল হৃদয় শিশুদের কষ্টে কেঁদে উঠত। এমনকি ছোট একটি পাখির মৃত্যুতে কষ্ট পাওয়া শিশুর দুঃখ লাঘব করতেও তিনি এগিয়ে যেতেন। হাদিসে আছে,
উম্মে সুলাইম (রা.)-এর এক ছোট্ট ছেলে ছিল, নাম আবু উমাইর। তার একটা ‘নুগাইর’ পাখি ছিল। নবিকরিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই উম্মে সুলাইম (রা.)-এর ঘরে আসতেন, আবু উমাইরের সঙ্গে হাসি-ঠাট্টা করতেন। একদিন তাঁর কাছে এসে দেখলেন, তার মন খারাপ। বললেন, “কী হলো আবু উমাইর? মন খারাপ কেন? লোকেরা বলল, সে যে নুগাইর পাখিটা দিয়ে খেলা করত, সেটা মারা গেছে। এরপর থেকে যখনই নবিকরিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দেখতেন, বলতেন, আবু উমাইর! তোমার নুগাইরটার কী হলো? (দেখছি না যে!) (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬২০৩; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২১৫০; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ১২৯৫৭, ১৩০৭৭, ১৩২০৯)
একটি পাখির মৃত্যুতে যে দুঃখবোধ নবিজি বুঝতে পেরেছেন, তা আজকের পিতামাতাদের জন্য এক মহান দৃষ্টান্ত।
ছোটরা বড়দের স্নেহের অধিকারী। বড়রা তাদের স্নেহ করলে তারাও বড়দের সম্মান করবে। শিক্ষা পাবে সুন্দর আচার-আচরণ ও ভদ্রতা। এ কারণেই নবিকরিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের স্নেহ করতেন এবং অন্যদেরও উৎসাহ দিতেন ছোটদের প্রতি স্নেহশীল হতে। তিনি ছোটদের শারীরিক শাস্তি, মানসিক নির্যাতনসহ তাদের প্রতি সর্বপ্রকার কঠোর আচরণ করতে নিষেধ করতেন। বলতেন,
যে ব্যক্তি ছোটদের স্নেহ করে না এবং বড়দের সম্মান বোঝে না, সে আমাদের দলভুক্ত নয়। (তিরমিজি, হাদিস: ২৪৪; আবু দাউদ, হাদিস: ৪৯৪৫)
আজ দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, আমাদের সমাজে কিছু মানুষ আছে যারা ছোটদের মারধর করে। অনেক বাবা-মা সন্তানকে শাসন করতে গিয়ে সীমা অতিক্রম করেন, যার ফলে শিশুর মনে গভীর আঘাত লাগে।
অথচ ছোটদের মারধরের ব্যাপারে ফুকাহায়ে কেরামের অভিমত হলো, মুতলাকভাবে তাদের মারধর করা উচিত নয়; তবে তা’লিম ও সংশোধনের উদ্দেশ্যে শুধুমাত্র হাত দ্বারা তিনবার আঘাত করা যেতে পারে, এর বেশি নয়। লাঠি দ্বারা প্রহার করা জায়েজ নেই। চেহারা এবং স্পর্শকাতর অঙ্গগুলোতে কোনোভাবেই আঘাত করা যাবে না। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, এতেও যেন তাদের সহ্যের সীমা অতিক্রম না করে। (মুসনাদে আহমাদ, ২/৪৮৩; রদ্দুল মুহতার (শামী) ২/৭ + ৯৭১০; ফাতওয়া হিন্দিয়া (আলমগীরি) ২/১৮৬; কেফায়াতুল মুফতি ৯/১৬৫; ফাতওয়া মাহমুদিয়া ২০/৩০৫)
আজকের বাস্তবতায়, যেখানে শিশুদের উপর শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেখানে নবিজির আদর্শ আমাদের জন্য এক বিরাট দৃষ্টান্ত।
সুতরাং আজকের এই ব্যস্ততাপূর্ণ জীবনে আমরা যদি নবিজির শিশুপ্রেমের এই দৃষ্টান্তগুলো বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করি, তবে পরিবার হবে ভালোবাসার নীড়, সমাজ হবে কোমল ও মানবিক। আমাদের সন্তানরা পাবে শান্তি ও নিরাপত্তার স্পর্শ। ছোটদের হৃদয়ে গাঁথা হবে সেই স্নেহের শিক্ষা, যা তাদের গড়ে তুলবে একটি আলোকিত ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হিসেবে। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক: শিক্ষার্থী, জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম রামপুরা (বনশ্রী মাদরাসা), ঢাকা,

শিশুরা জাতির ভবিষ্যৎ, সমাজের নির্মল পুষ্প। তাদের হৃদয়, কোমলতা এবং স্নেহে বিকশিত হলে তারা গড়ে ওঠে আলোকিত মানুষ রূপে। আর এই কোমল প্রাণদের প্রতি সবচেয়ে মমতাময় আচরণ ছিল একজন মহান ব্যক্তির, তিনি হলেন বিশ্বনবি হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
তিনি শুধু দয়ালু নবিই ছিলেন না, ছিলেন একজন আদর্শ পিতা, কোমল হৃদয়ের অভিভাবক। তাঁর জীবন আমাদের শেখায়, কেমন হওয়া উচিত ছোটদের প্রতি ভালোবাসা, যত্ন ও আচরণ। আজকের এই যান্ত্রিক সমাজে তাঁর এই আচরণগুলোই হতে পারে আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য আদর্শ পথপ্রদর্শক।
নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছোটদের প্রতি ছিলেন অত্যন্ত স্নেহশীল। ছোটদের ভীষণ ভালোবাসতেন তিনি। নিজ হাতে তাদের আদর করতেন, কোলে নিতেন, চুমু খেতেন, মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করতেন।
একবার কয়েকজন সাহাবি নবিকরিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে দাওয়াত খেতে বের হলেন। তখন রাস্তায় খেলা করছেন ছোট্ট হুসাইন। নবিকরিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবার সামনে এগিয়ে গেলেন এবং তাকে কোলে নেওয়ার জন্য উভয় হাত বাড়িয়ে দিলেন। কিন্তু হুসাইন এদিক-সেদিক ছোটাছুটি শুরু করলেন। তখন নবিজি হুসাইনকে ধরার জন্য হাস্যরস করছিলেন। অবশেষে ধরে ফেললেন তাকে। তারপর মাথা নুইয়ে হুসাইনের মুখে মুখ রেখে চুমু খেলেন নবিজি। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৪৪; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ১৭৫৬১; ইবনে হিব্বান, হাদিস: ৬৯৭১)
আর যারা ছোটদের আদর করত না, তিনি তাদের ভর্ৎসনা করতেন। একবার জনৈক বেদুইন সাহাবি নবিকরিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসলেন। (নবিকরিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক শিশুকে চুমু দিলেন)। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি কি শিশুদের চুমু খান? উত্তরে নবিজি বললেন,
হ্যাঁ। তিনি বললেন, আমরা তো শিশুদের চুমু দেই না। এ কথা শুনে নবিকরিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “আল্লাহ তোমার দিল থেকে রহম ছিনিয়ে নিলে আমার কী করার আছে? (বুখারি, হাদিস: ৫৯৯৮; মুসলিম, হাদিস: ২৩১৭; ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩৬৬৫)
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিশুদের সঙ্গে সময় কাটাতে পছন্দ করতেন। তিনি তাদের সঙ্গে হাঁটতেন, হাসতেন, এমনকি তাদের সঙ্গে মজার খেলাও করতেন।
একবার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান ও হুসাইন রাযিয়াল্লাহু আনহুমাকে পিঠে চড়িয়ে বলেছিলেন, তোমাদের বাহন কতই না উত্তম! এবং তোমরা কতই না উত্তম আরোহী! (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ১১১৭১)
একজন নবী হয়েও, তিনি শিশুদের মন জোগাতে এমনভাবে মিশতেন যেন তিনি তাদেরই একজন। এতে বোঝা যায়, শিশুরা যেন কখনো নিজেদের অবহেলিত না ভাবে, বরং বড়দের ভালোবাসা পায়।
নবীজির কোমল হৃদয় শিশুদের কষ্টে কেঁদে উঠত। এমনকি ছোট একটি পাখির মৃত্যুতে কষ্ট পাওয়া শিশুর দুঃখ লাঘব করতেও তিনি এগিয়ে যেতেন। হাদিসে আছে,
উম্মে সুলাইম (রা.)-এর এক ছোট্ট ছেলে ছিল, নাম আবু উমাইর। তার একটা ‘নুগাইর’ পাখি ছিল। নবিকরিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই উম্মে সুলাইম (রা.)-এর ঘরে আসতেন, আবু উমাইরের সঙ্গে হাসি-ঠাট্টা করতেন। একদিন তাঁর কাছে এসে দেখলেন, তার মন খারাপ। বললেন, “কী হলো আবু উমাইর? মন খারাপ কেন? লোকেরা বলল, সে যে নুগাইর পাখিটা দিয়ে খেলা করত, সেটা মারা গেছে। এরপর থেকে যখনই নবিকরিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দেখতেন, বলতেন, আবু উমাইর! তোমার নুগাইরটার কী হলো? (দেখছি না যে!) (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬২০৩; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২১৫০; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ১২৯৫৭, ১৩০৭৭, ১৩২০৯)
একটি পাখির মৃত্যুতে যে দুঃখবোধ নবিজি বুঝতে পেরেছেন, তা আজকের পিতামাতাদের জন্য এক মহান দৃষ্টান্ত।
ছোটরা বড়দের স্নেহের অধিকারী। বড়রা তাদের স্নেহ করলে তারাও বড়দের সম্মান করবে। শিক্ষা পাবে সুন্দর আচার-আচরণ ও ভদ্রতা। এ কারণেই নবিকরিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের স্নেহ করতেন এবং অন্যদেরও উৎসাহ দিতেন ছোটদের প্রতি স্নেহশীল হতে। তিনি ছোটদের শারীরিক শাস্তি, মানসিক নির্যাতনসহ তাদের প্রতি সর্বপ্রকার কঠোর আচরণ করতে নিষেধ করতেন। বলতেন,
যে ব্যক্তি ছোটদের স্নেহ করে না এবং বড়দের সম্মান বোঝে না, সে আমাদের দলভুক্ত নয়। (তিরমিজি, হাদিস: ২৪৪; আবু দাউদ, হাদিস: ৪৯৪৫)
আজ দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, আমাদের সমাজে কিছু মানুষ আছে যারা ছোটদের মারধর করে। অনেক বাবা-মা সন্তানকে শাসন করতে গিয়ে সীমা অতিক্রম করেন, যার ফলে শিশুর মনে গভীর আঘাত লাগে।
অথচ ছোটদের মারধরের ব্যাপারে ফুকাহায়ে কেরামের অভিমত হলো, মুতলাকভাবে তাদের মারধর করা উচিত নয়; তবে তা’লিম ও সংশোধনের উদ্দেশ্যে শুধুমাত্র হাত দ্বারা তিনবার আঘাত করা যেতে পারে, এর বেশি নয়। লাঠি দ্বারা প্রহার করা জায়েজ নেই। চেহারা এবং স্পর্শকাতর অঙ্গগুলোতে কোনোভাবেই আঘাত করা যাবে না। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, এতেও যেন তাদের সহ্যের সীমা অতিক্রম না করে। (মুসনাদে আহমাদ, ২/৪৮৩; রদ্দুল মুহতার (শামী) ২/৭ + ৯৭১০; ফাতওয়া হিন্দিয়া (আলমগীরি) ২/১৮৬; কেফায়াতুল মুফতি ৯/১৬৫; ফাতওয়া মাহমুদিয়া ২০/৩০৫)
আজকের বাস্তবতায়, যেখানে শিশুদের উপর শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেখানে নবিজির আদর্শ আমাদের জন্য এক বিরাট দৃষ্টান্ত।
সুতরাং আজকের এই ব্যস্ততাপূর্ণ জীবনে আমরা যদি নবিজির শিশুপ্রেমের এই দৃষ্টান্তগুলো বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করি, তবে পরিবার হবে ভালোবাসার নীড়, সমাজ হবে কোমল ও মানবিক। আমাদের সন্তানরা পাবে শান্তি ও নিরাপত্তার স্পর্শ। ছোটদের হৃদয়ে গাঁথা হবে সেই স্নেহের শিক্ষা, যা তাদের গড়ে তুলবে একটি আলোকিত ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হিসেবে। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক: শিক্ষার্থী, জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম রামপুরা (বনশ্রী মাদরাসা), ঢাকা,
এখনও কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!