মসজিদে হামলাকারীদের যে শাস্তি দেবেন আল্লাহ তায়ালা

মসজিদ আল্লাহ তায়ালার ঘর। এই ঘরকে বায়তুল্লাহ বলা হয়। পৃথিবীর সবকিছু থেকে এই ঘরকে মুক্ত রাখা হয় আল্লাহর ইবাদতের জন্য। আল্লাহ তায়ালা নিজেও মানুষকে এই ঘর অর্থাৎ, মসজিদে ইবাদতের নির্দেশ দিয়েছেন। বর্ণিত হয়েছে— ‘অতএব তারা যেন ইবাদত করে এই গৃহের মালিকের।’ (সূরা কুরাইশ, আয়াত : ৩)

অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই মসজিদগুলো আল্লাহর জন্য। অতএব, তোমরা আল্লাহর সঙ্গে অন্য কাউকে আহ্বান কোরো না।’ (সূরা জিন, আয়াত : ১৮)

মানুষের ইবাদতের জন্য আল্লাহর ঘর মসজিদ নির্মাণের বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ইসলামে। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) মদিনায় হিজরতের পর সর্বপ্রথম মুসলমানদের ইবাদতের জন্য মসজিদ নির্মাণ করেন। তিনি নিজে মসজিদ মির্নাণ করেছেন এবং অন্যদেরকেও মসজিদ নির্মাণের প্রতি উৎসাহিত করেছেন।

হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মসজিদ নির্মাণ করবে, মহান আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে অনুরূপ ঘর তৈরি করে দেবেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৪৫০)

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) পাড়ায় পাড়ায় মসজিদ নির্মাণ করার এবং তা পরিচ্ছন্ন ও সুগন্ধিময় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৫৫)

মসজিদ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণকারীদের মহান আল্লাহ ভীষণ পছন্দ করেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারাই তো আল্লাহর মসজিদের আবাদ করবে, যারা ঈমান আনে আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি, সালাত কায়েম করে, জাকাত দেয় এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করে না। অতএব আশা করা যায়, তারা হবে সৎপথপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা তাওবা, আয়াত : ১৮)

মসজিদ রক্ষণাবেক্ষণকারী ও মসজিদে ইবাদতকারীদের ঈমানদার বলা হয়েছে পবিত্র কোরআনে। অপরদিকে মসজিদ ধ্বংসকারী এবং মসজিদে হামলা চালানো ব্যক্তিদের অভিশম্পাত করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,

وَ مَنۡ اَظۡلَمُ مِمَّنۡ مَّنَعَ مَسٰجِدَ اللّٰهِ اَنۡ یُّذۡكَرَ فِیۡهَا اسۡمُهٗ وَ سَعٰی فِیۡ خَرَابِهَا ؕ اُولٰٓئِكَ مَا كَانَ لَهُمۡ اَنۡ یَّدۡخُلُوۡهَاۤ اِلَّا خَآئِفِیۡنَ ۬ؕ لَهُمۡ فِی الدُّنۡیَا خِزۡیٌ وَّ لَهُمۡ فِی الۡاٰخِرَۃِ عَذَابٌ عَظِیۡمٌ ﴿۱۱۴﴾

আর তার চেয়ে অধিক জালিম আর কে হতে পারে, যে আল্লাহর মসজিদগুলোতে তার নাম স্মরণ করতে বাধা দেয় এবং এগুলো বিরাণ করার চেষ্টা করে? অথচ ভীত-সন্ত্রস্ত না হয়ে তাদের জন্য সেগুলোতে প্রবেশ করা সঙ্গত ছিল না। দুনিয়াতে তাদের জন্য লাঞ্ছনা ও আখেরাতে রয়েছে মহাশাস্তি। (সূরা বাকারা, আয়াত : ১১৪)

এই আয়াতের প্রেক্ষাপট হলো— ইসলাম-পূর্বকালে ইহুদিরা ইয়াহইয়া আলাইহিস সালাম-কে হত্যা করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে খ্রিষ্টানরা তার প্রতিশোধ গ্রহণে বদ্ধপরিকর হয়। তারা ইরাকের একজন অগ্নি-উপাসক সম্রাটের সাথে মিলিত হয়ে ইহুদিদের উপর আক্রমণ চালায়। তাদের হত্যা ও লুন্ঠন করে, তাওরাতের কপিসমূহ জ্বলিয়ে ফেলে, বায়তুল মুকাদ্দাসে আবর্জনা ও শুকর নিক্ষেপ দেয়। এতে ইহুদিদের শক্তি পদদলিত ও নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আমল পর্যন্ত বায়তুল মুকাদ্দাস এমনিভাবে পরিত্যক্ত ও বিধ্বস্ত অবস্থায় ছিল। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর খেলাফত আমলে যখন সিরিয়া ও ইরাক বিজিত হয়, তখন তারই নির্দেশক্রমে বায়তুল মুকাদ্দাস পুনঃনির্মিত হয়।

এরপর দীর্ঘকাল পর্যন্ত সমস্ত সিরিয়া ও বায়তুল-মুকাদ্দাস মুসলিমদের অধিকারে ছিল। এক সময় বায়তুল-মুকাদ্দাস মুসলিমদের হস্তচ্যুত হয় এবং প্রায় অর্ধশতাব্দীকাল পর্যন্ত ইউরোপীয় খ্রিষ্টানদের অধিকারে থাকে। অবশেষে হিজরি ষষ্ট শতকে সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবী বায়তুল-মুকাদ্দাস পুনরুদ্ধার করেন।

এখানে মসজিদে জিকির (আল্লাহর স্মরণ) ও সালাতে বাধা দেয়ার যত পন্থা হতে পারে সে সবগুলোই হারাম। তন্মধ্যে একটি প্রকাশ্য পন্থা এই যে, মসজিদে গমন করতে অথবা সেখানে সালাত আদায় ও তিলাওয়াত করতে পরিস্কার ভাষায় নিষেধাজ্ঞা প্রদান। দ্বিতীয় পন্থা এই যে, মসজিদে হট্টগোল করে অথবা আশে-পাশে গানবাজনা করে মুসল্লীদের সালাত আদায় ও জিকরে বিঘ্ন সৃষ্টি করা। এই সবগুলোই হারাম।

একইসঙ্গে মসজিদ জনশূন্য করার জন্য সম্ভবপর যত পন্থা হতে পারে সবই হারাম। খোলাখুলিভাবে মসজিদকে বিধ্বস্ত করা ও জনশূন্য করা যেমনি এর অন্তর্ভুক্ত তেমনিভাবে এমন কারণ সৃষ্টি করাও এর অন্তর্ভুক্ত। এমন যত কারণ আছে এবং এই কারণগুলো সৃষ্টিকারীদের আল্লাহ তায়ালা কঠোর শাস্তি দেবেন।

কোরআনের অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,

اِنَّمَا جَزٰٓؤُا الَّذِیۡنَ یُحَارِبُوۡنَ اللّٰہَ وَرَسُوۡلَہٗ وَیَسۡعَوۡنَ فِی الۡاَرۡضِ فَسَادًا اَنۡ یُّقَتَّلُوۡۤا اَوۡ یُصَلَّبُوۡۤا اَوۡ تُقَطَّعَ اَیۡدِیۡہِمۡ وَاَرۡجُلُہُمۡ مِّنۡ خِلَافٍ اَوۡ یُنۡفَوۡا مِنَ الۡاَرۡضِ ؕ  ذٰلِکَ لَہُمۡ خِزۡیٌ فِی الدُّنۡیَا وَلَہُمۡ فِی الۡاٰخِرَۃِ عَذَابٌ عَظِیۡمٌ ۙ

যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে বেড়ায়, তাদের শাস্তি এটাই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলে চড়ানো হবে অথবা বিপরীত দিক থেকে তাদের হাত-পা কেটে দেওয়া, হবে অথবা তাদেরকে দেশ থেকে দূর করে দেওয়া হবে। এটা তো তাদের পার্থিব লাঞ্ছনা। আর আখেরাতে তাদের জন্য রয়েছে মহা শাস্তি।(সূরা মায়েদা, আয়াত : ৩৩)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *