টিকটকের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ: এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ করল আলবেনিয়া

আলবেনিয়া সরকার জনপ্রিয় ভিডিও-শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটককে ১২ মাসের জন্য নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার দেশটির মন্ত্রিসভা শিশুদের মধ্যে সহিংসতা ও বুলিং উসকে দেওয়ার অভিযোগে প্ল্যাটফর্মটি বন্ধ করার ঘোষণা দেয়। এই সিদ্ধান্ত আসে এক কিশোরের ছুরিকাঘাতে আরেক কিশোরের মৃত্যুর পর, যা গত বছরের নভেম্বর মাসে টিকটকে শুরু হওয়া এক বিবাদের ফলে ঘটেছিল।

শিক্ষামন্ত্রী ওগেরতা মানাস্তিরলিউ জানিয়েছেন, এই ঘটনার পর আলবেনিয়ার কর্তৃপক্ষ প্রায় ৬৫,০০০ অভিভাবকের সঙ্গে ১,৩০০টি বৈঠক করেছে। অধিকাংশ অভিভাবকই টিকটক বন্ধ বা নিয়ন্ত্রণের পক্ষে মত দিয়েছেন।

মন্ত্রী আরও জানান, তার বিভাগ টিকটকের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে গেছে যাতে প্ল্যাটফর্মটিতে অভিভাবকীয় নিয়ন্ত্রণ, বয়স যাচাই এবং আলবেনিয়ান ভাষা সংযোজনের মতো ব্যবস্থা নেওয়া যায়।

টিকটক কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে এখনও আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেনি।

গত ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী এদি রামা যখন প্ল্যাটফর্মটি বন্ধের পরিকল্পনার কথা জানান, তখন টিকটক আলবেনিয়া সরকারের কাছে “জরুরি ব্যাখ্যা” চেয়েছিল।

তবে বৃহস্পতিবার রামা জানান, টিকটকের সঙ্গে ইতিবাচক সংলাপ চলছে এবং শিগগিরই কোম্পানির প্রতিনিধি আলবেনিয়া সফরে এসে শিশুদের নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন পদক্ষেপের প্রস্তাব দেবে।

টিকটক দাবি করেছে, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তি ও ভুক্তভোগীর কোনো টিকটক অ্যাকাউন্ট ছিল না। বরং বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ সংক্রান্ত ভিডিও অন্য একটি প্ল্যাটফর্মে পোস্ট করা হয়েছিল, টিকটকে নয়।

গবেষকদের মতে, আলবেনিয়ায় টিকটকের সবচেয়ে বড় ব্যবহারকারী গোষ্ঠী হলো শিশুরা।

দেশটিতে অভিভাবকদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে, কারণ অনেক শিশু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা কনটেন্ট দ্বারা প্রভাবিত হয়ে স্কুলে ছুরি নিয়ে যাচ্ছে বা বুলিং করছে।

এ কারণে আলবেনিয়া সরকার স্কুলে পুলিশের উপস্থিতি বাড়িয়েছে এবং শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করেছে।

তবে বিরোধী দল এই নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করেছে এবং ১৫ মার্চ প্রতিবাদের ডাক দিয়েছে। তাদের মতে, এই নিষেধাজ্ঞা “মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ভীতি ও দমনমূলক পদক্ষেপ।”

এদিকে, চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান বাইটড্যান্স পরিচালিত টিকটক যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। সম্প্রতি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আইনগত বাধ্যবাধকতার কারণে টিকটক স্বল্প সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যায়, তবে পরে তা পুনরায় চালু হয়।

এছাড়া, যুক্তরাজ্যের ডাটা সুরক্ষা সংস্থা সম্প্রতি ১৩ থেকে ১৭ বছর বয়সী ব্যবহারকারীদের তথ্য সংগ্রহ ও সুপারিশমূলক কনটেন্ট প্রদর্শনের বিষয়ে টিকটকের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিশুদের জন্য সুরক্ষার বিষয়টি আরও কঠোরভাবে মনিটরিং করা প্রয়োজন, যাতে তারা বিপজ্জনক বা অনুপযুক্ত কনটেন্টের শিকার না হয়। সূত্র:দ্যা ইন্ডিপেন্ডেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *