বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ কন্ট্যাক্ট সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্কো) এবং বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) যৌথভাবে একটি বিশেষ কর্মশালার আয়োজন করে। কর্মশালাটির মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের কল সেন্টার ও বিপিও (বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং) শিল্পের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা এবং খাতটির টেকসই উন্নয়নের জন্য সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণের রূপরেখা নির্ধারণ করা।
বিপিও শিল্পের একক বানিজ্য সংগঠন বাক্কো ২০০৮ সালে যাত্রা শুরু করে এবং বর্তমানে প্রায় ৮৫,০০০ তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। এই খাতটি বর্তমানে বছরে ৮০০ মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। ২০২৫ সালের মধ্যে এই খাতের রপ্তানি আয় ১ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাক্কো।
বুধবার (২৭ নভেম্বর) আয়োজিত এ কর্মশালায় আলোচনা হয় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে, যার মধ্যে রয়েছে: কল সেন্টার ও বিপিও নিবন্ধন প্রক্রিয়ার সরলীকরণ, লাইসেন্স শর্তাবলী আধুনিকায়ন, নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিতকরণ, তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে জরুরি সেবার আওতায় অন্তর্ভুক্তকরণ, কল সেন্টার গাইডলাইনের সংশোধন।
কর্মশালায় বাক্কোর কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি তানভীর ইব্রাহীম বলেন, “বিপিও শিল্পকে আরও সম্প্রসারণ করতে হলে সঠিক নীতিমালা প্রণয়ন, আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডিং, এবং বৈশ্বিক প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা জরুরি। আইএওপি (IAOP)-এর মতো আন্তর্জাতিক সংগঠনের সদস্যপদ গ্রহণ এবং স্থানীয় বাজারে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে খাতটিকে শক্তিশালী করা সম্ভব।”
কর্মশালায় ৭০টিরও বেশি বিপিও প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিনিধিগণ অংশগ্রহণ করেন এবং খাতের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। তারা বলেন, অংশীদারিত্ব হস্তান্তর ফি এবং কঠোর বিধিনিষেধের কারণে নতুন উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ করতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন, যা শিল্পের বিকাশে বাধা সৃষ্টি করছে। তাই তারা বিটিআরসির কার্যকর হস্তক্ষেপের অনুরোধ জানান।
বিটিআরসির কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ইকবাল আহমেদ কর্মশালার প্রধান অতিথি হিসেবে সবাইকে আশ্বস্ত করেন। তিনি বলেন, “বিপিও শিল্পের উন্নয়নে সম্মিলিত প্রচেষ্টার বিকল্প নেই। টেলিযোগাযোগ খাতের বিদ্যমান সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধানে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।”
কর্মশালার অংশগ্রহণকারীরা একমত হন যে, বিটিআরসির সহযোগিতায় বিপিও খাতের অপারেশনাল প্রতিবন্ধকতা দূর করা সম্ভব এবং এটি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে গড়ে তোলা যাবে। বাক্কো ভবিষ্যতেও এই খাতের টেকসই উন্নয়নে সরকার ও অন্যান্য অংশীজনদের সঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে।
কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন বাক্কোর কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যরা, সহ-সভাপতি মো. তানজিরুল বাসার, অর্থ সম্পাদক মো. আমিনুল হক, পরিচালক জায়েদ উদ্দীন আহমেদ, মেহেদী হাসান জুলফিকার, সায়মা শওকত এবং বাক্কো সচিবালয়ের নির্বাহী পরিচালক লে. কর্নেল (অবঃ) মো. মাহতাবুল হক, পিএসসি। বিটিআরসির অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দও কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন।