রাহুল আনন্দের বাড়িতে আগুনের ঘটনার নেপথ্য কারণ কী?

নিজস্ব ঢঙে গান করে দেশের ব্যান্ড মিউজিকে আলাদা জায়গা করে নিয়েছে ‘জলের গান’। শুরু থেকেই ব্যান্ডটির কাণ্ডারি হয়ে আছেন রাহুল আনন্দ। যিনি দেশীয় বাদ্যযন্ত্রের এক বিস্ময়-শিল্পী। নিজেই বানিয়েছেন কয়েক শ বাদ্যযন্ত্র।

তবে তাঁর সেসব যন্ত্র আর অবশিষ্ট নেই। দুর্বৃত্তের আগুনে হয়ে গেছে ছাই।

ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর সড়কে আনন্দের বাড়ি। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সে সড়কে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা।

একই সময় হামলার শিকার হয় আনন্দের বাড়ি। শুধু ভাঙচুরই নয়, পুরো বাড়িটিই পুড়িয়ে দেয় হামলাকারীরা। রেহাই পেয়েছেন রাহুল আনন্দ ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। আজীবনের সাধনার এই বীভৎস পরিণতি দেখে স্তব্ধ হয়ে আছেন আনন্দ।

প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়েছিল, পরিকল্পিতভাবে এ আগুন দেওয়া হয়। এক সাক্ষাৎকারে রাহুল আনন্দ জানান, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে এক কাপড়ে বাড়ি থেকে কোনোমতে বের হয়ে এসেছিলেন তিনি। তবে এখন শোনা যাচ্ছে ভিন্ন কথা। এ বিষয়ে বিস্তারিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন রাহুল আনন্দের পারিবারিক বন্ধু ফারহানা হামিদ। লেখাটি জলের গানের ফেসবুক পেজেও শেয়ার করা হয়েছে।

ফারহানা হামিদ লেখেন, “রাহুল আনন্দের বাসা উদ্দেশ্য করে আগুন দেওয়া, লুটপাট বা ভাঙচুর করা হয়নি। আগুন দেওয়া হয়েছে ৩২-এর ‘বর্তমান বঙ্গবন্ধু মিউজিয়াম ও তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার অংশ’ সেটুকুতে। রাহুলদা একটা একতলা বাসায় ভাড়া থাকতেন। এক পাশে তাদের সংসার ,অন্য পাশে জলের গানের স্টুডিও (অনেকের ভিডিওতে এই বাসাটা নিয়ে ভুলভাল কথা বলতে দেখেছি আমি)। সেই বাড়িটা ব্যক্তিমালিকানায় ছিল। ৩২-এর সেখানে আরো অনেক এমন বাসা আছে। রাহুলদা ও তার পরিবারের দুর্ভাগ্য এই মায়াময় বাসাটা নতুন মিউজিয়ামের দেয়াল ঘেঁষে এবং সান্তুরের পেছনে ছিল, তাই তার বাসাতেও আগুন দেওয়া হয়।”

ফারহানা হামিদ আরো লেখেন, “রাহুলদাকে উদ্দেশ্য করে আগুন দিলে তারা এই পরিবারকে এভাবে বের হয়ে যাওয়ার সুযোগ দিত না। আর সুযোগ না দিলে সেই বাসা থেকে বের হওয়া অসম্ভব। রাহুলদার বাসায় আগুনের সাথে রাহুলদার ধর্ম, বর্ণ, জাত, সংস্কৃতি-এর কোনো সম্পর্ক নেই। তাই এমন গুজব না ছড়ানোর অনুরোধ করছি। দেশের এই পরিস্থিতিতে যেকোনো গুজব ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। আমরা সচেতন হই। একটা সংসার, একটা দলের বহুদিনের সাধনা, একজন বাচ্চার শৈশব, এর সব কিছু পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। আর কারো কোনো কিছু পুড়ে না যাক। ভালোবাসা নেমে আসুক মানুষের মনে, আপনারা তাদের পাশে থাকলে আবার ‘Joler Gaan’ এর সাথে গলা মিলিয়ে গান গাইব- এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি।”

প্রসঙ্গত, রাহুল আনন্দের বাদ্যযন্ত্রের সমাহার দেখার জন্য এই বাড়িতে অনেকেরই যাতায়াত ছিল। এমনকি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁও এই বাড়িতে গিয়েছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *