কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যেসব সদস্য আইন ভেঙেছেন তদন্ত করে তাদেরও বিচারের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।
তিনি বলেন-আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও অন্যান্য যারা আছেন, কাউকেই গুলি করার পারমিশন দেওয়া ছিল না। সংবিধান ও আইনের অধীনে তাদের কাজ করতে হয়েছে। তাই বলে আমি এটা অস্বীকার করছি না, ক্ষেত্র বিশেষে কেউ কেউ আইন ভাঙেনি, অন দ্যা গ্রাউন্ডে। আমরা এটা তদন্ত করে তাদেরও বিচারের আওতায় আনবো।
বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা জানান।
এ সময় আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি করার নির্দেশ ছিল না দাবি করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘তারা আইন ও সংবিধানের মধ্যে কাজ করে। তবে গ্রাউন্ডে ক্ষেত্র বিশেষে কেউ কেউ আইন ভেঙেছে। আমরা সেটি তদন্ত করে তাদেরও আইনের আওতায় আনব।’
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, ‘আপনারা যে আবেগ নিয়ে রাস্তায় যাচ্ছেন, খেয়াল রাখবেন তৃতীয়পক্ষ সুযোগ যেন না নেয়। তারা সুযোগ নেওয়ার অপেক্ষায় আছে, যদি আবারও একটা সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয় তার দায় কে নেবে?’
বিশ্বে এ ধরনের ঘটনা ঘটে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রেও ঘটেছে আপনারা দেখেছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেকেই আইন ভেঙে ফেলে। সরকার থেকে তো তাদের আইন ভাঙার নির্দেশ দেওয়া হয় না। কিন্তু তারা এ ঘটনা ঘটিয়ে ফেলে। আমাদের দায়িত্ব হলো যারা আইন ভেঙেছে, অন্যায় করেছে, তদন্ত করে তাদের বিচারের মুখোমুখি করবো।
তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী বলেন, সহিংসতায় যা হয়েছে সেটা দেশ জাতির জন্য বিশেষ করে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য খুবই দুর্ভাগ্যজনক। এ হতাহতের জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি, নিন্দা জানাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠিত হয়েছে। তারা স্বাধীনভাবে প্রতিটি হতাহতের ঘটনার তদন্ত করে এজন্য দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হবে। প্রয়োজনে আমরা বিদেশি এক্সপার্টদের সম্পৃক্ত করবো। কারণ হচ্ছে আমরা এখানে পুরোপুরি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতায় থাকতে চাই।
তিনি বলেন, সহিংসতা প্রতিটি মৃত্যুর জন্য আমরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত, তেমনি দেশ ও দেশের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। হয়তো কোনো একটি তৃতীয়পক্ষ এটার সুবিধা নিচ্ছে। আর এ মৃত্যু নিয়ে প্রথম থেকেই অপপ্রচার করা হচ্ছে। এ ক্ষতির যেমন আপনারা একটা অংশ আমরাও একটা অংশ। আপনারা যেমন এটার বিচার চান আমরাও এটার বিচার চাই। একই সঙ্গে প্রতিটি দায়ী ব্যক্তিকে আমরা বিচারের মুখোমুখি করবো। একটি মৃত্যুও আমাদের কাম্য ছিল না। প্রতিটি মৃত্যু আমাদের বুকের ওপরে ভারি হয়ে আটকে আছে।
আইনের প্রয়োগ ঘটবে শুধু সন্ত্রাসীদের ওপরে। সুনির্দিষ্ট প্রমাণসাপেক্ষে যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। কোনো সাধারণ শিক্ষার্থী যেন হয়রানির শিকার না হয়। আমি পুলিশ প্রশাসনকে বলতে চাই, যে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছে, পানি বিতরণ করেছে তাদের পরিবারের কোনো সদস্য যেন কোনো ধরনের হয়রানি না করা হয়। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, আবেগ অনুভূতিকে আমরা শ্রদ্ধা করি, সেগুলোতে আমাদের সমর্থন আছে। কিন্তু তাদের আবেগকে পুঁজি করে যারা ধ্বংস চালিয়েছে, সেটাতো পরিষ্কার। আমরা নিশ্চিত করতে চাই কোনো শিক্ষার্থী যাতে নাজেহাল না হয়। আর সন্ত্রাসীদের যেন আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়।