• মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:৪৬ পূর্বাহ্ন

দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টার নেপথ্যে কারা?

নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেট : মঙ্গলবার, ৩০ জুলাই, ২০২৪

সাম্প্রতিক সময়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে তৃতীয় একটি পক্ষ, বিশেষ করে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির পৈশাচিক নারকীয়তা দেখেছে দেশবাসী। চিহ্নিত অপশক্তির টানা ৬ দিনের সন্ত্রাস, নাশকতা এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদে দানবীয় কায়দায় অগ্নিসংযোগের ঘটনার পর বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তায় সরকারি নির্দেশে মাঠে নামে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক গর্বের সেনাবাহিনী তথা সশস্ত্র বাহিনী। শান্তিপূর্ণভাবে সহিংসতা ও বীভৎস নাশকতা ঠেকানোর কাজের পাশাপাশি জনমনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে বিশ্বজুড়ে নন্দিত, সুদক্ষ, সুশৃঙ্খল ও সুপ্রশিক্ষিত এই বাহিনী। কিন্তু সময় গড়াতেই পুরো ঘটনাপ্রবাহকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার মাধ্যমে রক্তক্ষয়ী মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া দেশপ্রেমী এই বাহিনীটিকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টা দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। দেশে ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অসত্য, মিথ্যা এবং অপপ্রচার চলে দেদারছে, নজিরবিহীনভাবে। নানারকম বানোয়াট তথ্য ও ভুয়া ভিডিও ফুটেজ সরবরাহ করা হয়।

বিশেষ করে দেশের গণতন্ত্র বিরোধী, স্বঘোষিত ‘অজ্ঞেয়বাদী’, মস্তিষ্ক বিকৃত গুটিকয়েক কথিত বিশ্লেষক, ফেসবুক-ইউটিউবার বিদেশের মাটিতে বসে দেশের প্রতিটি দুর্যোগে-সঙ্কটে দেশপ্রেমের অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করা সর্বোচ্চ পেশাদার মনোভাবসম্পন্ন সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন এবং ষড়যন্ত্রমূলক অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে। মূলত কুরুচিপূর্ণ গুজব ছড়ানো ও মিথ্যাচার এ চক্রটির পেশা ও নেশা। সামগ্রিক পরিস্থিতিতে দেশের চলমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জনগণের স্বার্থে ও রাষ্ট্রের যেকোন প্রয়োজনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সবসময় জনগণের পাশে আছে এবং থাকবে বলে জানিয়েছে আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। একই সঙ্গে রোববার (২৮ জুলাই) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্বার্থান্বেষী মহলের বিভ্রান্তিকর তথ্য ও সংবাদে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করছে বলেও জানিয়েছে তিন বাহিনীর মুখপাত্র এ সংস্থা।

জানা যায়, মোতায়েনের পর থেকে রাজধানীসহ দেশের কোথাও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে আগ্রাসী আচরণ করতে দেখা যায়নি। কিন্তু আন্তর্জাতিক কিছু গণমাধ্যম ও দেশের বাইরে অবস্থান করা গুটিকয়েক সাইবার দুর্বৃত্ত পরিকল্পিতভাবে সেনাবাহিনীকে নিয়ে অপপ্রচার শুরু করে। বিশেষ করে জার্মানির একটি গণমাধ্যমে ইউএন লোগো ব্যবহার করে ট্যাংক ব্যবহার করার প্রসঙ্গটি সামনে আনা হয়। কিন্তু ওই ট্যাংক কখনও কোন বিদ্রোহ দমন বা আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা হয়নি এবং ওই সাজোয়া যানগুলোর মালিকানাও বাংলাদেশের। কিন্তু এটিকে নিয়ে এখন জাতিসংঘ পর্যন্ত ইস্যু তৈরি করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। এর মূল লক্ষ্য হল জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে এক নম্বর পজিশনে থাকা বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তিকে বিতর্কিত করা। এজন্য বিভিন্ন কল্পকাহিনীর মাধ্যমে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে কুৎসা রটিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াতে ডিজিটাল প্রচার মাধ্যমকে যাচ্ছেতাই কায়দায় ব্যবহার করা হচ্ছে। অনেকটাই ‘পেইড এজেন্ট’ স্টাইলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে টার্গেট করে মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত খবর প্রকাশের মাধ্যমে বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে। সাধারণ বিবেক-বুদ্ধি ও যুক্তির প্রয়োগ করলেই অনুমান করা সম্ভব এসবের বিন্দুমাত্র গ্রহণযোগ্যতা ও সত্যতা নেই।

বাঙালি জাতির ঐক্য ও আস্থার প্রতীক বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বরাবরই গণতন্ত্রের পক্ষে সাহসী ও তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বাংলাদেশের সেনাবাহিনী তথা সশস্ত্র বাহিনী এখন অন্য যেকোন সময়ের চেয়ে পেশাদার ও বিশ্বমানের। নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এর নেতৃত্বে তাঁরা দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক হয়ে আছেন। তাদের কোন রাজনৈতিক উচ্চভিলাষ নেই। কোন রকম বিভ্রান্তির প্রলোভনে তাঁরা গত দুই যুগে পা দেয়নি। এক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বে সেনাপ্রধানের ব্যক্তিত্ব ও কারিশমা বড় ভূমিকা রেখেছে।

আইএসপিআর থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও বলা হয়েছে, ‘দেশব্যাপী ক্রম অবনতিশীল নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে জনসাধারণের জানমাল ও সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমূহের সার্বিক নিরাপত্তা প্রদানে গত ২০ জুলাই ভোর থেকে নিজ নিজ দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অন্যান্য বাহিনীর পাশাপাশি সেনাবাহিনীর উপস্থিতি দ্রুত নৈরাজ্য প্রশমন করতে সাহায্য করে। কিছু স্বার্থান্বেষী মহল বিভিন্ন বিদেশি গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়াসমূহে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এর মূল উদ্দেশ্য দেশে এবং বিদেশে সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করা বলে অনুমিত। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের সংবিধান সমুন্নত রেখে প্রচলিত আইনের আওতায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ, দেশবাসীর জানমালের নিরাপত্তা ও জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে অসামরিক প্রশাসনকে সহায়তায় কার্যক্রম পরিচালনা করছে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও বলেছেন, শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে সেনা নামানো হয়নি। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও দৃঢ়তার সঙ্গে জানিয়েছেন, সেনাবাহিনী কোথাও একটি গুলিও ছোঁড়েনি। সম্প্রতি পৃথক পৃথকভাবে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে, শেরপুর ও নরসিংদী জেলায় মোতায়েকৃত সেনাসদস্যদের কার্যক্রম পরিদর্শন করেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। পর্যবেক্ষণ করেন নরসিংদী জেলা কারাগারও। স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিমান বাহিনী, নৌবাহিনী, পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি ও আনসার সদস্যরাও কাজ করছেন বলে জানান সেনাপ্রধান। তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই মিলে একটি সুন্দর স্বাভাবিক পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আমি মনে করি পরিস্থিতির আরো উন্নতি করতে পারব।’ ওইদিন সেনাপ্রধান দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে আরও বলেন, ‘জনগণের স্বার্থে এবং রাষ্ট্রের যেকোনো প্রয়োজনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সবসময় জনগণের পাশে আছে এবং থাকবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দেশব্যাপী কাজ করে যাচ্ছেন।’

বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশে একটি রাজনৈতিক দুর্যোগকে স্বাগতম জানাতেই সেনাবাহিনীকে টার্গেট করে জলঘোলার সব আয়োজন করেছে স্বাধীনতা বিরোধী একটি চক্রের পোষা প্রাণীরা। সরকারকে নাস্তানাবুদ করার অপকৌশল হালে পানি না পাওয়ায় এখন তাঁরা বীরের জাতি বাঙালির আস্থার ঠিকানা সেনাবাহিনীকে ঘৃণ্য কায়দায় অপতথ্যের মাধ্যমে ঘায়েল করতে সব রকমের হীন অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু টেকসই গণতন্ত্র, উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার প্রশ্নে দেশপ্রেমিক সেনা সদস্যদের অটল মনোভাব প্রমাণ করেছে শেষ পর্যন্ত কোন বড় রকমের রাজনৈতিক দুর্যোগ বাংলাদেশে আঘাত হানতে সক্ষম হবে না।

বিশ্বের সব প্রান্তের দুর্গত, নিপীড়িত ও নিরীহ মানুষের সেবায় বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীদের হাত প্রসারিত। সংঘাতপূর্ণ ও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিজের জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়েও তারা আর্তমানবতার সেবা করে চলেছেন। দেশে ও বিদেশে নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে স্বীয় দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের জন্য সব মহলের প্রশংসা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। কিন্তু চার দশকের বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের সফল যাত্রাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে একটি চিহ্নিত অপশক্তির সাম্প্রতিক দুরভিসন্ধিমূলক অবস্থানে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও বিশ্লেষকরা। তাঁরা বলছেন, প্রতিটি সেনা সদস্যের দক্ষতা ও বিচক্ষণতায় দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতির উন্নতি ঘটছে। সবার উচিত সুষ্ঠুভাবে তাদের দায়িত্ব পালনে সহযোগিতা করা। বরাবরের মতো এবারও দীর্ঘ চার দশকের জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীদের সফল অগ্রযাত্রাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপতৎপরতা সফল হবে না। মনে রাখতে হবে আমাদের সেনাবাহিনী দেশমাতৃকার সম্মান আর গৌরবের প্রতীক। জনগণের পাশে থেকেই তাঁরা পালন করে যাবে সাহসী ও বলিষ্ঠ ভূমিকা।

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক
কালের আলো


আপনার মতামত লিখুন :
এ জাতীয় আরও খবর