আজ পবিত্র হজ: লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখর হবে আরাফাত ময়দান

আজ পবিত্র হজ। ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের নারকীয় হামলায় হাজার হাজার মানুষ নিহত হওয়ায় শোকাবহ পরস্থিতিতে পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। এদিন সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সৌদি আরবের মক্কার আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করবেন সারাবিশ্ব থেকে জড়ো হওয়া লাখো মুসলিম। আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করাই হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা।

লাখো কণ্ঠে আরাফাতের ময়দানে আজ ধ্বনিত হবে ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হাম্?দা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুল্?ক, লা শারিকা লাক।’ অর্থাৎ ‘আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার।’

শুক্রবার (১৪ জুন) মিনায় অবস্থান করেছেন হজযাত্রীরা। সেলাইবিহীন দুই টুকরা সাদা কাপড় পরে হজের নিয়ত করে তারা মক্কা থেকে মিনায় আসেন। মিনায় নিজ নিজ তাঁবুর মধ্যে নামাজ আদায়সহ অন্যান্য ইবাদত করেছেন। আজ শনিবার ফজরের নামাজ আদায় করেই তারা যাবেন আরাফাতের ময়দানে।

পবিত্র হজ মহান আল্লাহর একটি বিশেষ বিধান। হজ শব্দের আভিধানিক অর্থ ‘ইচ্ছা করা’। হজ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি। আর্থিক ও শারীরিকভাবে সামর্থ্যবান সব মুসলমান পুরুষ ও নারীর ওপর হজ ফরজ। জিলহজ মাসের নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করা এবং বিশেষ বিশেষ কাজে অংশগ্রহণই হলো হজ। এর আগে তীব্র গরমের মধ্যেই স্থানীয় সময় শুক্রবার ভোর থেকে হাজিরা ইহরাম বেঁধে মিনার উদ্দেশে যাত্রা করেন। এর মধ্য দিয়েই হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।

এ বছর বিশ্বের ২০ লাখেরও বেশি মুসলিম হজ পালন করছেন। বাংলাদেশ থেকে হজে গেছেন ৮০ হাজারেরও বেশি মুসল্লি। এর মধ্যে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।

মক্কার গ্র্যান্ড মসজিদ থেকে ৭ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত মিনা। মক্কা ও মুজদালিফার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান এটি। এই উপত্যকাটি উত্তর ও দক্ষিণে পাহাড় দিয়ে ঘেরা এবং মসজিদুল হারামের সীমানার মধ্যে অবস্থিত। শুধু হজের সময়েই সেখানে মানুষের ভিড় জমে।

আরবি বর্ষপঞ্জিকার শেষ মাস জিলহজের ৮ তারিখ থেকে শুরু হয় হজ। এরপর ৯ জিলহজ আরাফাতের দিন শেষে ১০ জিলহজ পশু কোরবানি করেন হাজিরা। সৌদি আরবে গতকাল হিজরি সন ১৪৪৫ সালের জিলহজ মাসের ৮ তারিখ ছিল।

হজের আনুষ্ঠানিকতার প্রাথমিক পর্যায়ে হাজিদের স্বাগত জানাতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয় সৌদি কর্তৃপক্ষ। ৩০ হাজার হাজির থাকার জন্য মিনায় বহুতল আবাসিক টাওয়ার তৈরি করা হয়েছে।

এদিকে, সৌদিতে শুক্রবার গড় তাপমাত্রা ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সৌদি বার্তা সংস্থা এসপিএ জানিয়েছিল, তাপজনিত সম্ভাব্য অসুস্থতা ও হিটস্ট্রোক মোকাবিলায় চারটি হাসপাতাল প্রস্তুত রেখেছে কর্তৃপক্ষ।

এদিকে হাজিদের অনেকেই ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে আট মাস ধরে চলা যুদ্ধের ব্যাপারে দুঃখ প্রকাশ করেন। মরক্কোর ৭৫ বছর বয়সী জাহরা বেনিজাহরা কান্নাবিজড়িত কণ্ঠে এএফপিকে বলেন, ‘ফিলিস্তিনে আমাদের ভাই-বোন মারা যাচ্ছেন এবং আমরা নিজেদের চোখে তা দেখতে পাচ্ছি।’

আরাফাতে রয়েছে জাবালে রহমত বা রহমতের পাহাড়। এই ময়দানে উপস্থিত হাজিদের উদ্দেশে খুতবা দেওয়া সুন্নত। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এখানকার মসজিদে নামিরা থেকে বিখ্যাত বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন।

আরাফাতে অবস্থান হজের শ্রেষ্ঠ রুকন। কারণ আরাফাতের ময়দান যেন বিশ্বসম্মিলন। লাখ লাখ হাজির এ ময়দানে মুসলিমদের একতার ইঙ্গিত বহন করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমাদের সঙ্গে এই নামাজ আদায় করেছে আর এর আগে আরাফায় অবস্থান করেছে দিনে বা রাতে, তার হজ পূর্ণ হয়েছে এবং সে তার ইহরাম শেষ করেছে।’ (সুনানে নাসায়ি)

আরাফাতের ময়দান থেকে মুসলিমদের ঐক্য, শৃঙ্খলা ও শান্তির বার্তা সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। মহান আল্লাহ আরাফাতের দিন ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা হিসেবে ঘোষণা দেন। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বিন পূর্ণাঙ্গ করলাম এবং তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত পরিপূর্ণ করলাম এবং ইসলাম তোমাদের দ্বিন মনোনীত করলাম।’ (সুরা : মায়েদা, আয়াত : ৩)

আজ মসজিদে নামিরা থেকে খুতবা দেবেন পবিত্র মসজিদুল হারামের ইমাম ও খতিব শায়খ মাহের বিন হামাদ আল-মুয়াইকিলি। স্থানীয় সময় দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মানারাতুল হারামাইন (manaratal haramain) ওয়েবসাইটসহ বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে তা সরাসরি সম্প্রচারিত হবে।

এদিকে কয়েক বছর ধরে বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় এ খুতবার অনুবাদ সম্প্র্রচার করা হচ্ছে। টানা পাঁচ বছরের মতো এবারও বাংলাসহ ২০টির বেশি ভাষায় আরাফাতের খুতবার অনুবাদ সম্প্রচার করা হবে। এ বছর এর বাংলা অনুবাদ উপস্থাপন করবেন মক্কার উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ড. খলীলুর রহমান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *