সিলেটে প্রত্যাশা-২ প্রকল্পের অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত

বাংলাদেশের উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি প্রবাসীরা। তাদের শ্রমে-ঘামে আমরা এগিয়ে চলেছি। তাই দক্ষতা অর্জন করে নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিদেশ-ফেরত মানুষের পাশেও দাঁড়াতে হবে। বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সেই কাজগুলো করার চেষ্টা করছে। আজ সোমবার সিলেট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ব্র্যাকের যৌথ অর্থায়নে ইমপ্রুভড সাসটেইনেবল রিইন্ট্রিগ্রেশন অব বাংলাদেশি রিটার্নি মাইগ্রেন্টস (প্রত্যাশা-২) প্রকল্পের অবহিতকরণ সভায় সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোবারক হোসেন।

এই প্রকল্পের অধীনে বাংলাদেশের অন্যতম অভিবাসনপ্রবণ জেলা সিলেটের বিপুলসংখ্যক প্রবাসীর মধ্যে নিরাপদ অভিবাসন সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি ও বিদেশ-ফেরতদের টেকসই পুনরেকত্রীকরণসহ নানা কার্যক্রম পরিচালনা করছে ব্র্যাক।

বিদেশে দক্ষ শ্রমিক পাঠানোর জন্য আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে সভাপতি বলেন, ‘আমাদের শ্রমিকরা অন্যান্য দেশের চাইতে খুব কম পারিশ্রমিক পেয়ে থাকেন। এর মূল কারণ প্রশিক্ষণের অভাব, এমনকি অনেকে প্রশিক্ষণ না নিয়েই শুধুমাত্র সার্টিফিকেট নিয়ে কাজ করতে চলে যান। এতে তারা আরও বেশি বিপদের সম্মুখীন হন।’ সভাপতি তাঁর বক্তব্যে নারী শ্রমিকদের বিদেশে যাওয়ার পূর্বে তাদের প্রশিক্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করে সবাই মিলে বিদেশ-ফেরতদের পাশে থাকার আহ্বান জানান। এজন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাসও দেন তিনি।

সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের ম্যানেজার নুসরাত জাহান নিশাত। তিনি প্রত্যাশা-২ প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে উপস্থিত দর্শক-শ্রোতাদের বলেন, ‘বিদেশ-ফেরত বাংলাদেশিরা যেন দেশে এসে ফের ঘুরে দাঁড়াতে পারেন-সেজন্য অনেকদিন ধরে ব্র্যাক কাজ করছে। ২০১৭ থেকে ২০২২ এই সময়ে প্রত্যাশার প্রথম ধাপ বাস্তবায়ন শেষে আমরা এখন দ্বিতীয় ধাপের কাজ শুরু করেছি। সারা দেশে মাঠ পর্যায়ে আমাদের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের সিলেট মাইগ্রেশন ও রিইন্ট্রিগ্রেশন সেন্টারের মাধ্যমে সিলেট জেলার সাথে সাথে মৌলভীবাজারের প্রবাসীদেরও সেবা দেওয়া হচ্ছে৷’

সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইমরুল হাসান। নিজের বক্তব্যে নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করতে জনসচেতনতা বাড়ানোর বিষয়ে জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘দালালদের মাধ্যমে না গিয়ে বৈধ উপায়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ব্র্যাকের পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন দপ্তরও কাজ করছে। এই সুবিধাগুলো নিলে বিদেশ যাওয়ার সময় মানুষের ঝুঁকি কমবে। বিদেশ যাওয়ার আগেই সবকিছু যাচাই-বাছাই করে সঠিক উপায়ে যাওয়া উচিত।’

সিলেট জেলা তথ্য অফিসের উপ-পরিচালক মো. সালাউদ্দিন তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘প্রত্যাশা-১ এর সাফল্যের গল্পগুলো মানুষকে জানাতে হবে, পাশাপাশি জনগণকে সচেতন করার ব্যাপারে আরও বেশি কাজ করতে হবে। আমাদের দেশে এখনো দক্ষ প্রবাসী কম, ঝুঁকি নেওয়া প্রবাসী বেশি৷ পাশাপাশি আমাদের প্রবাসীদের প্রচলিত দেশগুলোর পাশাপাশি অন্যান্য দেশগুলোতেও পাঠানোর জন্য কাজ করা উচিত।’
জেলা সমাজসেবা অফিসের উপ-পরিচালক মো. আবদুর রফিক বলেন, ‘বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে ট্রেনিংয়ের পাশাপাশি নিয়ম মেনে যাওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিয়ম না মেনে বিদেশ যেতে গিয়ে দালালের খপ্পরে পড়ে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। বিদেশ-ফেরতদের জন্যে ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম যে আর্থিক সহায়তার উদ্যোগ নিয়েছে তা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে।’

সভায় উপস্থিত সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. ইকরামুল কবির বলেন, ‘প্রত্যাশা-১ প্রকল্পের কার্যক্রমের সময় সাংবাদিকরা বিদেশ-ফেরতদের জন্য নেওয়া এই মানবিক উদ্যোগের পাশে ছিল৷ আমরা আশাবাদী প্রবাসীদের কল্যাণে প্রত্যাশা-২ প্রকল্প আরও সুন্দর-সফলভাবে বাস্তবায়িত হবে।’
সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রত্যাশা-২ প্রকল্পের আওতায় প্রথম অর্থনৈতিক পুনরেকত্রীকরণ সহায়তা পাওয়া গ্রিস ফেরত প্রবাসী জনি। সভার সবাইকে তিনি নিজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানিয়ে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান। এরপর দালালের খপ্পরে পড়ে গৃহকর্মী হিসেবে সৌদি আরব গিয়ে নির্যাতনের শিকার বিদেশ-ফেরত লিপি বেগম নিজের দুর্বিষহ অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।

সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন সিলেটের সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নিশাত আনজুম ও সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) হারুন-অর রশীদ। জেলা পর্যায় প্রকল্প অবহিতকরণ এ সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ব্র্যাকের জেলা সমন্বয়কারী অনিক আহমেদ অপু ও বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির বিভাগীয় প্রধান সৈয়দা শিরিনা আক্তার।

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন জেলার অভিবাসন বিষয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত সরকারি কর্মকর্তাবৃন্দ, বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ, সাংবাদিক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ, বিদেশ-ফেরত অভিবাসী ও তাদের পরিবারের সদস্যগণ।
বিশ্বের সর্ববৃহৎ উন্নয়ন সংস্থা এবং সারা বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় এনজিও- ব্র্যাক, ১৯৭২ সালের প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে দেশে ও দেশের বাইরে নানাবিধ কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। ব্র্যাকের বিভিন্ন কর্মসূচিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি কর্মসূচি হল মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম। ব্র্যাকের এই প্রোগ্রাম ২০০৬ সাল থেকে দেশের অভিবাসনপ্রবণ জেলাসমূহে বিদেশগামী নারী ও পুরুষের মাঝে সঠিক তথ্যের মাধ্যমে নিরাপদ অভিবাসন বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম, বিদেশ-ফেরতদের পুনরেকত্রীকরণ, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, অভিবাসন খাতে অ্যাডভোকেসি ও নানাবিধ সহযোগিতামূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *