এম আমির হোসেন: একটি সমাজের রুচির প্রতিনিধিত্ব করে মূলত সেই সমাজের মধ্যবিত্ত শ্রেণি। মধ্যবিত্ত শ্রেণি যে জীবনবোধ, বিশ্বাস, সাহিত্য ও সংস্কৃতির চর্চা করে সেটাই হলো সেই সমাজের রুচির পরিচায়ক। সমাজে নিম্নবিত্ত শ্রেণি সংখ্যাগরিষ্ঠ হতে পারে, কিংবা উচ্চবিত্ত শ্রেণি ক্ষমতাবান হতে পারে, কিন্তু রুচিবোধের ধ্বজা সবসময় মধ্যবিত্ত শ্রেণির হাতেই থাকে। ব্রিটিশ আমলে দীর্ঘদিন ক্ষমতার কাছাকাছি থাকার কারণে যুক্তবঙ্গের পশ্চিমাংশে যেভাবে রুচিশীল মধ্যবিত্ত শ্রেণি গড়ে উঠেছিল, পূর্বাংশে ঠিক সেভাবে হয়নি।
দেশভাগের পর বায়ান্ন ও একাত্তর কেন্দ্রিক স্বল্পস্থায়ী রুচিশীল মধ্যবিত্ত শ্রেণির বিকাশ লক্ষ্য করা গেলেও নানাবিধ কারণে এখানে তা দীর্ঘমেয়াদি হয়নি। স্বাধীনতার ফসল হিসাবে দেশের অর্থনৈতিক স্ফূরণ ঘটেছে। নিম্নবিত্তের বিরাট অংশ অর্থনৈতিকভাবে মধ্যবিত্ত হয়েছে। মধ্যবিত্ত শ্রেণির সংখ্যাবৃদ্ধি ঘটেছে। কিন্তু ব্যস্তানুপাতিক হারে হ্রাস ঘটেছে রুচিমানের। পাশাপাশি প্রযুক্তির সহজলভ্যতাও রুচির ক্রমহ্রাসমান অবস্থার জন্য অনেকাংশে দায়ী। আমাদের মধ্যবিত্ত শ্রেণির এখন কোনো রুচি-চরিত্র নেই। শীঘ্রই এর উত্তরণ ঘটবে বলেও মনে হচ্ছে না। অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি রুচিগত উন্নয়ন না হলে সে উন্নয়ন টেকসই হয় না।
এখন আমাদের সমাজে শিক্ষিত, সংস্কৃতিবান, উদার ও সৎ মধ্যবিত্ত শ্রেণির একান্ত প্রয়োজন। এ বিষয় নিয়ে ভাবতে হবে সমাজবিজ্ঞানীদের। ঘাটতি কোথায় এবং তা থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে প্রয়োজন সামাজিক গবেষণার। অন্যথায় উন্নয়নের এই চকমকে প্রাসাদ যেকোনো সময় ধসে পড়তে পারে, এই আশঙ্কা নিয়েই আত্মপ্রসাদে ভুগতে হবে আমাদের। লেখক : চিকিৎসক