একটি ভাষণ। যা বেজে চলেছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। দিনের পর দিন। কিন্তু আজও পুরনো হয়নি। যতবারই কানে আসে, মনে হয় নতুন শুনছি। প্রথম শুনছি। জাতির পিতার এই মহাকাব্যিক ভাষণের পেছনে রয়েছে এক অজানা ইতিহাস। তাঁর সহধর্মিনী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব ৭ মার্চ তাকে বলেছিলেন, ‘সমগ্র দেশের মানুষ তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে, সবার ভাগ্য আজ তোমার উপর নির্ভর করছে। অনেকে অনেক কথা বলতে বলেছে, তুমি নিজে ভেবে যা বলতে চাও নিজের থেকে করবে। তুমি যা বলবে সেটিই ঠিক হবে।’ স্ত্রীর কথা অক্ষরে অক্ষরে শুনেছিলেন শেখ মুজিব। তাৎক্ষণিক যা এসেছিলো মাথায় তা দিয়েই মুক্তিকামী মানুষের উদ্দেশে দিয়েছিলেন ১৮ মিনিটের সেই জাদুকরী ভাষণ।
ঘড়ির কাঁটায় তখন বিকাল ৩টা বেজে ২০ মিনিট। কানায় কানায় পূর্ণ রেসকোর্স ময়দানে কেবলই স্লোগান আর স্লোগান। এমন সময় গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে রাজনীতির কবি এলেন। গগনবিদারী কন্ঠে শোনালেন তার অমর কবিতাখানি। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। ব্যস্ নিরস্ত্র বাঙালি শক্তি সঞ্চয় করে যার যা কিছু ছিলো, তাই নিয়ে প্রাণের মায়া সাঙ্গ করে ঝাঁপিয়ে পড়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে।
এরপর টানা ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, ৩০ লাখ শহীদের এক সাগর রক্ত ও ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আসে কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। প্রাপ্তি হয় স্বাধীন ভূখণ্ড, পবিত্র পতাকা ও মানচিত্রের। পরবর্তীতে এই ভাষণটিকে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা ‘ইউনেসকো’ বিশ্ব ইতিহাসের প্রামাণ্য দলিল হিসেবে গ্রহণ করলে, এটি হয়ে ওঠে সমগ্র দেশ ও জাতির জন্য গৌরবের সমাচার।
ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণের সেই মুহূর্ত আজও এখনও চির অম্লান, চির অক্ষয়। জাতির এই আনন্দক্ষণে আমরা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি ‘রক্তে আগুন জ্বলা’ সেই ভাষণের স্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। সেই সঙ্গে বলছি, যতকাল রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান/ততকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।
স্যালুট হে মহানায়ক। আপনি ছিলেন, আছেন, থাকবেন। হৃদয় থেকে হৃদয়াভ্যন্তরে।
লেখক: প্রকাশক ও সম্পাদক, দৈনিক এইদিন