ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার বৃহত্তম আল-শিফা হাসপাতালের তলদেশে ১৮০ ফুট (৫৫ মিটার) দীর্ঘ সুড়ঙ্গের সন্ধান পেয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েলি সেনারা। সামাজিক যোগাযোগামাধ্যম এক্সে একটি সুড়ঙ্গের ভিডিওসহ পোস্টে এমন দাবি করেছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। তবে হামাস এ দাবিকে অস্বীকার করে বলেছে, ‘এটি একটি ডাহা মিথ্যা।’
আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোববার (১৯ নভেম্বর) এক ভিডিও প্রকাশ করে ইসরাইলি সেনাবাহিনী বলেছে, হামাসের এ সুড়ঙ্গটি ৫৫ মিটার লম্বা এবং ১০ মিটার গভীর। এ সুড়ঙ্গে বিস্ফোরণরোধী দরজা আছে।
‘সুড়ঙ্গটির প্রবেশমুখ বুলেটপ্রুভ দরজাসহ বিভিন্ন সুরক্ষা উপকরণে সজ্জিত। সুড়ঙ্গের ভেতর থেকে বাইরে বন্দুক ও রকেট ছোড়ার ব্যবস্থাও রয়েছে। কয়েক সপ্তাহ ধরে আমরা বলে যাচ্ছিলাম যে হামাস গাজার সাধারণ বেসামরিক লোকজন এবং হাসপাতালের রোগীদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে; কিন্তু কেউ বিশ্বাস করছিল না। আজ এটি প্রমাণিত হলো।’
পরে এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, আল-শিফা হাসপাতাল কম্পাউন্ডের একটি শেডে থাকা শ্যাফটের মাধ্যমে সুড়ঙ্গটির শুরু। শ্যাফটি খুলে সুড়ঙ্গে প্রবেশ করে ৩৮ ফুট নামলে বুলেটপ্রুফ দরজাটি চোখে পড়বে। সুড়ঙ্গটির ভেতরে হামাসের একটি কমান্ড সেন্টার, অস্ত্র-গোলাবারুদ ও সামরিক প্রযুক্তিগত সরঞ্জামের মজুত রয়েছে। গাজায় হামাসের যে সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্ক রয়েছে, তার সঙ্গে এটি যুক্ত। তাই এই সুড়ঙ্গটি দিয়ে হামাসের অন্যান্য ভূগর্ভস্থ কমান্ড সেন্টারেও যাওয়া যায়।
তবে গাজার হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আইডিএফের এই দাবিকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছে। মন্ত্রণালয়ের প্রধান মুনির এল বোরশ বলেছেন, ‘এটি একটি ডাহা মিথ্যা প্রচারণা।’
এদিকে ইসরায়েলিরা দাবি করেছে, ‘একজন নেপালি এবং একজন থাই বেসামরিক জিম্মি করে শিফা হাসপাতালে রাখা হয়েছিল।’ তবে হামাস বলেছে, তাঁরা ইতিমধ্যে আহত জিম্মিদের হাসপাতালে নেওয়ার কথা বলেছে, তাই ফুটেজটি নতুন কোনো ঘটনা নয়।
হামাসের মুখপাত্র ইজ্জাত আল রিশক এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমরা আহত জিম্মিদের হাসপাতালে নেওয়ার ছবি প্রকাশ করেছি। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র এমনভাবে ভাব করছে যেন সে অবিশ্বাস্য কিছু আবিষ্কার করেছে।’
গাজায় হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, শিফা হাসপাতালে কোনো জিম্মি নেওয়ার বিষয়টি এই প্রমাণ করে যে গাজায় স্বাস্থ্যসেবা সবার জন্য উন্মুক্ত।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা হামলা চালানোর পর ওই দিন থেকেই উপত্যকায় অভিযান পরিচালনা করছে ইসরায়েলের বিমানবাহিনী। অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে এ অভিযানে যোগ দিয়েছে স্থল বাহিনীও।
অভিযানের শুরু থেকেই ইসরায়েল দাবি করে আসছিল, গাজা উপত্যকার বেসামরিক বসতি, স্কুল ও হাসপাতালগুলোর তলদেশে হামাসের সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্ক রয়েছে। তবে হামাস বরাবরই তা অস্বীকার করেছে।