বাঙালি সংস্কৃতির চেতনাকে রুখে দেবার চেষ্টাকারীরা বারবার ব্যর্থ হয়েছে: রাষ্ট্রপতি

বাঙালি সংস্কৃতির চেতনাকে রুখে দেবার চেষ্টাকারীরা বারবার ব্যর্থ হয়েছে: রাষ্ট্রপতি

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছেন, ধর্মের দোহাই দিয়ে বাঙালি সংস্কৃতির চেতনাকে রুখে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। যারা চেষ্টা করেছে তারা বারবার ব্যর্থ হয়েছে। নৌকাবাইচ আবহমান বাংলার সমৃদ্ধ সংস্কৃতির একটি অনন্য ঐতিহ্য। বাংলার আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে আছে লোকসংস্কৃতির অমূল্য বহু উপাদান। এসব লোকসংস্কৃতি সঠিকভাবে লালন করা গেলে এগুলো বিশ্ব সংস্কৃতি ও সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ হয়ে উঠতে পারে।

বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৭তম জন্মদিন উদযাপন উপলক্ষে পাবনার সাঁথিয়ায় ইছামতি নদীতে নৌকাবাইচ ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বব্ক্তৃতায় রাষ্ট্রপতি এসব কথা বলেন।

রাষ্ট্রপতি বলেন, বাঙালি জাতীয়তাবাদ থেকে বাঙালি সংস্কৃতির সৃষ্টি। বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনায় জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন। সত্তরের নির্বাচনে জয় ও স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। নৌকা স্বাধীনতার প্রতীক এ কথা বলতে কোনা দ্বিধা নাই। স্বাধীনতা ছাড়া আমাদের অস্তিত্ব অর্থহীন।

রাষ্ট্রপতি আরো বলেন, দেশের বিরুদ্ধে যত ষড়যন্ত্রই হোক আমরা এগিয়ে যাবো সামনের দিকে-উন্নয়নের দিকে। কেননা, বাঙালি বীরের জাতি। তিনি বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যুদ্ধ করে এদেশ স্বাধীন করেছি। বঙ্গবন্ধু বাংলার মানুষের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে আমৃত্যু লড়াই-সংগ্রাম করেছেন, জেল-জুলুম ও অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেছেন৷ স্বাধীনতার পর দেশকে এগিয়ে নিতে বঙ্গবন্ধু অসাম্প্রদায়িক বাঙালি চেতনাকে বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত করতে কাজ শুরু করেছিলেন। সে লক্ষ্যে তিনি অল্প সময়ের মধ্যে পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ একটি সংবিধানও আমাদেরকে উপহার দিয়েছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতকচক্রের ষড়যন্ত্রের কারণে স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় আমরা জাতির পিতাকে হারাই। এটা ছিল জাতি হিসাবে আমাদের চরম ব্যর্থতা। কারণ আমরা তাঁকে ধরে রাখতে পারিনি। আজ বঙ্গবন্ধু আমাদের সাথে না থাকলেও তার নীতি-আদর্শই বাঙালির এগিয়ে যাওয়ার পথ-নির্দেশিকা ও অনুপ্রেরণা।

রাষ্ট্রপতি বলেন, করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ গোটা বিশ্বের উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য মারাত্মক চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ এর বাইরে নয়। কিন্ত সেসব চ্যালেঞ্জের মধ্যেও বাংলাদেশ অর্থনীতির নেতিবাচক পরিস্থিতি মোকাবেলা করে এগিয়ে যাচ্ছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ, মেট্রোরেল, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ৩য় টার্মিনাল নির্মাণ, কর্ণফুলী টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ সকল মেগা প্রকল্পের কাজ সময়মত শেষ হয়েছে। জনগণ এর সুফল পেতে শুরু করেছে।

পাবনার কৃতি সন্তান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন আরও বলেন, সারাদেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় পাবনার উন্নয়নে নতুন গতি এসেছে। ২০০৮ সালে পাবনায় মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হলেও এতোদিনে কোনো হাসপাতাল ছিল না। আজ সকালেই পাবনার ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল নির্মাণ কাজের শুভসূচনা করা হয়েছে। পাবনা থেকে ঢাকা রেল চলাচল এ মাসেই শুরু করার কথা থাকলেও প্রশাসনিক ও কারিগরিককারণে তা সম্ভব হয়নি। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই তা শুরু হবে। এছাড়াও ইছামতি নদী সংস্কার ও পুন:খননের একটি প্রকল্প চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

ডেপুটি স্পিকার ও পাবনা-১ (সাঁথিয়া-বেড়া) আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সাঁথিয়া মেয়র মাহবুবুল আলম বাচ্চু। এসময় উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রপতির সহধর্মীনী ফাস্ট লেডি প্রফেসর ড. রেবেকা সুলতানা, পাবনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য মো. নুরুজ্জামান বিশ্বাস, পাবনার জেলা প্রশাসক মু. আছাদুজ্জামান, পুলিশ সুপার আকবর আলী মুনসী, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আসম আব্দুর রহিম পাকন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল রহিম লাল, বেড়া পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট আশিফ শামস রঞ্জন, সাঁথিয়ার ইউএনও মাসুদ হোসেন প্রমুখ।

পরে রাষ্ট্রপ্রতি মো. সাহাবুদ্দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৭তম শুভ জন্মদিন উদযাপন উপলক্ষে পাবনার সাঁথিয়ার ইছামতি নদীতে নৌকাবাইচ উপভোগ করেন।

এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পাবনার বহুল কাঙ্খিত পাবনা মেডিকেল কলেজের ৫০০ শয্যা হাসপাতালের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *