• শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৯ পূর্বাহ্ন

ডলার কারসাজি রোধে চেয়ারম্যানদের কড়া বার্তা গভর্নরের

নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেট : বুধবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

ডলার নিয়ে কারসাজি রোধে বেসরকারি খাতের চেয়ারম্যানদের হুঁশিয়ারি দিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। এর আগে বেঁধে দেওয়া সীমার চেয়ে অতিরিক্ত দামে ডলার কেনাবেচার অভিযোগে গতকাল মঙ্গলবার বেসরকারি খাতের ১০টি ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।

গভর্নর বলেন, আমদানিকারকদের কাছে ডলার বিক্রির ক্ষেত্রে কোনোরকম নিয়ম ভঙ্গ করলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংক কোম্পানি আইনের ১০৯ নম্বর ধারা অনুযায়ী শাস্তির আওতায় আনা হবে।

বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) বেসরকারি ব্যাংক উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের নেতৃত্বে আট সদস্যদের প্রতিনিধিদল গভর্নরের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি ডলার কারসাজি রোধে সতর্কবার্তা দেন।

এসময় গভর্নর বিভিন্ন ব্যাংকের এমডিদের সঙ্গে চেয়ারম্যানের দ্বন্দ্ব, বাফেদার নির্ধারিত সীমার চেয়ে অতিরিক্ত দামে ডলার লেনদেন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, ঋণপত্রের (এলসি) মাধ্যমে ডলার পাচারসহ ব্যাংকগুলোর করপোরেট কালচারসহ যাবতীয় নীতিমালা মানার নির্দেশ দেন।

বৈঠক প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের আমন্ত্রণেই বিএবির চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল এসেছিল। এটা পূর্ব নির্ধারিত বৈঠক। ব্যাংকের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে বর্তমান দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা, মূল্যস্ফীতি চাপ, রিজার্ভ পরিস্থিতি, ডলার, এক্সচেঞ্জ রেট এবং আমদানি রপ্তানি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নয়নে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে; এগুলো তাদের জানানো হয়েছে। পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়নে তাদের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। বিএবির পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন।

এমডি ছাড়া কেন ট্রেজারি বিভাগের প্রধানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, যিনি সরাসরি অপরাধ করেন নিয়ম অনুযায়ী তাকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। পেছনে কে সে বিষয়ে পরে দেখা যাবে। এর আগে কয়েকটি ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধান ও এমডিকে কারণ দর্শানোর নোটি দেওয়া হয়েছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষণার চেয়ে বেশি দামে আমদানিকারকের কাছে ডলার বিক্রি করায় বেসরকারি খাতের ১০টি ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর অংশ হিসেবে এসব ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানকে জরিমানা করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। বেশি দামে ডলার বিক্রির জন্য এসব ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানরা দায় এড়াতে পারেন না বলে ব্যাংকগুলোর কাছে পাঠানো চিঠিতে জানিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ট্রেজারি বিভাগ মূলত ব্যাংকের টাকা ও ডলারের চাহিদা-জোগানের বিষয়টি নিশ্চিত করে থাকে। কোনো কোনো ব্যাংকে ট্রেজারি বিভাগের প্রধান পদে উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তাও রয়েছেন।

সূত্র জানায়, নোটিশপ্রাপ্ত ১০টি ব্যাংক হলো- মার্কেন্টাইল ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ও ট্রাস্ট ব্যাংক। শাস্তির আওতায় আসা ব্যাংকের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে।

একই অভিযোগে গত বছরের আগস্টে একসঙ্গে দেশি-বিদেশি ছয়টি ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে শেষ পর্যন্ত সে সিদ্ধান্ত বহাল রাখতে পারেনি নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।

ডলার কারসাজিতে অভিযুক্তদের কি শাস্তি দেওয়া হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র বলেন, ব্যাংক কোম্পানি আইনের ১০৯ (৭) ধারা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেখানে শাস্তির বিষয় উল্লেখ করা আছে।

ব্যাংক কোম্পানি আইনের ১০৯ (৭) ধারা অনুযায়ী, এই অপরাধে কমপক্ষে ২০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা জরিমানা আরোপ করা যেতে পারে। যদি আইনের একই ধারার লঙ্ঘন অব্যাহত থাকে, তাহলে প্রথম দিনের পর প্রতিদিনের জন্য অতিরিক্ত এক হাজার টাকা জরিমানা আরোপ করা যায়।

সব শেষ সেপ্টেম্বরের বেঁধে দেওয়া দাম অনুযায়ী, পণ্য বা সেবার রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রের ডলারের দাম ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা। অন্যদিকে আমদানিকারকদের কাছে এখন ১১০ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। কিন্তু অভিযুক্ত ব্যাংকগুলোতে প্রতি ডলারে ১১৪-১১৫ টাকা দাম নিয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :
এ জাতীয় আরও খবর