বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর দোরগোড়ায় এসে কড়া নাড়ছে পবিত্র ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। এখন সবাই কোরবানির পশুর পাশাপাশি কোরবানি সংক্রান্ত সরঞ্জামাদি কিনবেন। ঈদের দিন পশু জবাই থেকে শুরু করে চামড়া আলাদা করা, মাংস কাটা হাড় কাটা, ময়লা-আবর্জনাসহ ইত্যাদি সবকিছুর জন্য প্রয়োজন নানা ধরনের সরঞ্জাম।
আর কোরবানি ঈদ সামনে রেখে জমজমাট হয়ে প্রতিটি পশুর হাটগুলো তার সঙ্গে তার মিরিয়ে জমে উঠেছে কামারপাড়াও। এ ছাড়া এ সময় মৌসুমি অনেক বিক্রেতাও দা, ছুরি, কাঁচি, বঁটি ইত্যাদি বিক্রি করেন। তাই যারা কোরবানি দেন তাদের অনেক ধরনের সরঞ্জাম আগে থেকেই মজুত করতে হয়। তো চলুন জেনে নিই- যেসব সরঞ্জাম আপনাকে আগে থেকে মজুত করতে হবে-
দা: দা দুই ধরনের হয়। একটি সাধারণ দা ও অন্যটি রামদা। এটি কিছুটা চাপাতির কাজ করে। মাংস বানানোর কাজে লাগে দা। এর সাইজ বা আকৃতি বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। এর হাতল কাঠ বা লোহার হতে পারে। আপনি ইচ্ছামতো নিতে পারেন।
চাপাতি: পশু জবাইয়ের কাজে ব্যবহার করা হয় চাপাতি। তবে গরুর চামড়া যদি মোটা হয়, সে ক্ষেত্রে চামড়া ছাড়ানোর কাজেও ব্যবহার করা হয় চাপাতি। চাপাতি আকারে কিছুটা বড় হয়। তাই অবশ্যই সাবধানতার সঙ্গে এটি বহন করতে হবে।
ছুরি ও চাকু: কোরবানির পশুর চামড়া ছাড়ানোর জন্য ছুরি ও চাকুর প্রয়োজন হয়। তবে চাকু যেন অনেক ধারালো হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ছোট থেকে বড় অনেক সাইজের ছুরি-চাকু বাজারে পাওয়া যায়।
কুড়াল: সাধারণত মোটা হাড়গুলোকে কাটতে কুড়াল ব্যবহার করা হয়। তবে কুড়াল না থাকলে ভারী দা দিয়েও কাজ চালাতে পারবেন।
দড়ি: কোরবানির পশু বাঁধার জন্য অবশ্যই মনে করে দড়ি কিনুন। গরু জবাই করার সময় এর পাগুলো বাঁধার জন্য দড়ির প্রয়োজন হয়।
চাটাই: কোরবানির জন্য প্রয়োজনীয় সব সরঞ্জাম কেনার সময় কিন্তু চাটাই কিনতে ভুলবেন না। কারণ, পশু জবাইয়ের পর চামড়া ছাড়িয়ে এর ওপরই কিন্তু মাংস রাখা হয়। পারলে বড় আকারের ভালো মানের চাটাই কিনুন। এতে মাংস সুরক্ষিত থাকবে ও এর গায়ে ময়লা লাগবে না।
কাঠের গুঁড়ি: মাংস সঠিকভাবে কাটার জন্য কাঠের গুঁড়ির প্রয়োজন হয়। এটি খুবই দরকারি একটি জিনিস। তবে অবশ্যই কাঠের গুঁড়ি কেনার সময় সেটি টেকসই হবে কি না, তা দেখে কিনুন।
পলিথিন: চাটাইয়ের পাশাপাশি মোটা পলিথিনও খুবই দরকারি। কেননা, পলিথিনের ওপরই কাঠের গুঁড়ি রেখে মাংস কাটা হয়।
দাঁড়িপাল্লা বা ডিজিটাল ওয়েট মেশিন: মাংস মাপার জন্য আপনার প্রয়োজন হবে দাঁড়িপাল্লার। যদিও এখন দাঁড়িপাল্লার ব্যবহার কমেছে। সেই জায়গায় ব্যবহার হচ্ছে ডিজিটাল ওয়েট মেশিন।
ময়লা ফেলার ব্যাগ বা পলিথিন: কোরবানির পর পশুর বর্জ্য ফেলার জন্য অবশ্যই ময়লা ফেলার ব্যাগ কিনতে ভুলবেন না। এতে পরিবেশদূষণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
জীবাণুনাশক উপাদান: কোরবানির ঈদের দিন ছোট কিংবা বড় দুর্ঘটনা দেখা দেওয়ার সম্ভবনা সবচেয়ে বেশি থাকে। কারণ বটি ও ছুরির কাজ তুলনামূলক বেশি থাকে। এছাড়া কোরবানির পশুর হাড়ের খোঁচা থেকেও হাত কেটেছড়ে যায়। তখন দ্রুত জীবাণুনাশক উপাদান যেমন ডেটল কিংবা স্যাভলন ব্যবহার করতে হবে। ঘরে যদি ডেটল শেষ হয়ে যায়, তবে ছোট একটি বোতল কিনে রাখুন।
ব্লিচিং পাউডার: পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য ব্লিচিং পাউডার আবশ্যক। রক্ত, ময়লা ও জীবাণু দূর করার জন্য ব্লিচিং পাউডার ব্যবহারের বিকল্প নেই। কোরবানি ও কোরবানির কাজ শেষে বাসার নিচের অংশ ও বাসা সংলগ্ন রাস্তায় ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে দিতে হবে। এ ছাড়া ঘর, বারান্দা ও রান্নাঘরের পরিচ্ছন্নতাতেও ব্লিচিং পাউডার প্রয়োজন হবে।
শলার ঝাড়ু: বাসার নিচের অংশ, ঘর, রান্নাঘর ও বারান্দার অংশ পরিষ্কারের জন্য ছোট একটি শলার ঝাড়ু ক্লিনে ফেলুন। গরম পানি ও ব্লিচিং পাউডার দিয়ে ঝাড়ুর সাহায্যে পরিষ্কার করলে দ্রুত রক্ত ময়লা দূর করা সম্ভব হবে।
বড় পাত্র: কোরবানির পশুর মাংস, হাড়, চর্বি, ভুঁড়ি, কলিজা ও মাথা আনা-নেওয়া ও ধারণের জন্য বড় আকারের পাত্রের প্রয়োজন হবে। প্রয়োজনের সময় দেখা যায় যথেষ্ট বড় কোন পাত্র পাওয়া যাচ্ছে না। তাই এখনই সংগ্রহ করে ফেলুন বড় আকারে পাতিল কিংবা গামলা।
চুন: এই জিনিসটার কথা হয়তো অনেকে একেবারেই ভুলে যাবেন। কিন্তু ভুঁড়ি পরিষ্কার করতে চুন প্রয়োজন হবেই। অন্যান্য সকল প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার সময় এক কৌটা চুনও কিনে ফেলুন খেয়াল করে।