রমজান সামনে রেখে ব্রয়লার মুরগি, চিনি, ছোলা, মসুর ও অ্যাংকর ডালের দামে আগুন। নতুন করে চোখ রাঙাচ্ছে লেবু, শসা ও বেগুনসহ বেশ কয়েকটি সবজি। এতে আসন্ন রোজায় বাড়তি খরচের আতঙ্ক এখনই ভাবিয়ে তুলছে স্বল্প আয়ের মানুষদের।
রাজধানীর মালিবাগ বাজারে গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনে বাজার করতে আসেন বেসরকারি চাকরিজীবী মো. আমিরুল ইসলাম। রমজানের পণ্যের দরদামের এক ফাঁকে তিনি বলেন, ‘ছোলার দাম এখনই বেড়ে প্রতিকেজি ৯৫ টাকা হয়েছে। চিনিও ১১৫ টাকা কেজি। মসুর ডালের কেজি ১৪০ টাকা। বেসনের দামও চড়া। খেজুরের দাম গতবারের চেয়ে কেজিপ্রতি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেশি। রমজানে যেসব পণ্যের দরকার হয়, সেসব পণ্যের দাম এখনই বেড়ে আছে। আগামীতে কী হবে, রোজায় কিভাবে বাজার খরচ সামাল দেব ভেবে কূল পাচ্ছি না।’
বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাঝে কিছুদিন খোলা চিনি ১১০ থেকে ১১২ টাকার মধ্যে পাওয়া গেলেও এখন তা ১১৫ টাকায় ঠেকেছে। ছোট দানার মসুরের দাম ১৪০ টাকা এবং মোটা দানার মসুর ১০০ টাকার নিচে মিলছে না। গরিবের অ্যাংকর ডালও এখন ৭০ টাকার নিচে মিলছে না। ৭৫ টাকা কেজিতেও বিক্রি হচ্ছে কোথাও কোথাও।
ব্রয়লার মুরগি কেজি এখন ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা। সোনালি মুরগির কেজিও ৩৫০ টাকা। আরও বিলাসী পণ্যে পরিণত হয়েছে গরুর মাংস। প্রতিকেজি ৭৫০-৮০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। খাসির মাংসের কেজি হয়েছে ১ হাজার ১০০ টাকা।
মুরগির দাম শিগগিরই কমার আশা দেখছেন না মালিবাগ বাজারের মুরগি বিক্রেতা মো. ফারুক। তিনি বলেন, ‘কাপ্তানবাজার পাইকারি আড়তেই এখন দাম চড়া। তার ওপর একেক সময় একেক দামে বিক্রি হয়। এতে বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। তা ছাড়া পাইকাররা বলছেন, খামারেই দাম অনেক বাড়তি এখন।’
মাছের বাজারেও স্বস্তি নেই। রুই-কাতলা দূরে থাক, কম দামের মধ্যে চাষের পাঙাশ কিংবা তেলাপিয়া কিনে খেতেও দ্বিতীয়বার খরচের হিসাব মেলাতে হচ্ছে কম আয়ের মানুষদের। বাজারে এ দুই মাছের কেজি কেনায় খরচ পড়ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত।
এদিকে বরাবরের মতো এবারও রোজাকে কেন্দ্র করে আগেভাগেই বেগুনের দাম বাড়তে শুরু করেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে বেগুনের কেজি হয়েছে ৭০ থেকে ৯০ টাকা। একইভাবে বাড়ছে শরবত তৈরিতে ব্যবহৃত লেবুর দামও। এখনই প্রতি হালির দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত। শসা ও গাজরের দামও কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ৬০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। টমেটোর দামও বেড়ে এ সপ্তাহে ৪০ থেকে ৫০ টাকা হয়েছে।
রাজধানীর বাজারে করলার কেজি এখন ১০০ থেকে ১২০ টাকা হয়েছে। এক পিস লাউয়ের দামও ৬০ থেকে ৮০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এ ছাড়া বরবটি, পটোল, ঢ্যাঁড়স, ঝিঙে ও ধুন্দুলের দাম প্রতি কেজি ৭০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। কাঁচামরিচের ঝালও সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। প্রতি কেজির দাম পড়ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকা। তবে শিমের দাম এখনো তুলনামূলক কম, প্রতি কেজির দাম পড়ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। বাঁধাকপি ও ফুলকপির পিস ৩০ থেকে ৪০ টাকা। পেঁপে ও কাঁচকলার দাম অন্যান্য সবজির তুলনায় কমে মিলছে।
কারখানা শ্রমিক মো. রাসেল বলেন, ‘এখনই সবজির দাম এভাবে বাড়তে শুরু করেছে। মাছ-মাংস তো আমাদের সামর্থ্যে নেই। চাল-ডাল-তেল কিনতেই পকেট ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। একটা মাস পরিবারকে নিয়ে একটু ভালো-মন্দ খেয়ে রোজা রাখব, সেই উপায় নেই। বেতনের সব টাকা বাসা ভাড়া আর বাজারেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। চোখে-মুখে অন্ধকার দেখছি এখন।’