• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১০:৫৮ পূর্বাহ্ন
Notice
We are Updating Our Website

রহস্যময় গুহা ‘আলুটিলা’

নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেট : সোমবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২২

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার সর্বত্র ছড়িয়ে রয়েছে নয়নাভিরাম নানান দৃশ্য, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর বৈচিত্র্যময় জীবনধারা, সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য, প্রকৃতির নজরকাড়া হাজারো চিত্র। চার পাশে বিছিয়ে থাকা শুভ্র মেঘের চাদরের নীচে রয়েছে সবুজ বনরাজি ঘেরা ঢেউ খেলানো অসংখ্য ছোট-বড় পাহাড়। তার মাঝ দিয়ে চলে গেছে আঁকা-বাঁকা সড়ক।

এই স্যেন্দর্যকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলেছে সমুদ্রপৃষ্ট থেকে প্রায় ৬০০ ফুট উপরে অবস্থিত খাগড়াছড়ি আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র। খাগড়াছড়ি শহর থেকে মাত্র ৮ কিলোমিটার দূরের এই পর্যটন কেন্দ্রটির অবস্থান। এই পর্যটন কেন্দ্রের অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে, এক ‌‘রহস্যময় সুরঙ্গ’যা আলুটিলা গুহা নামে পরিচিত স্থানীয়রা বলে দেবতার গুহা। এটি উপমহাদেশের একমাত্র প্রাকৃতিক গুহা ও খাগড়াছড়ি জেলার প্রধান আকর্ষণ। বৃক্ষশোভিত আলুটিলার পাহাড়ের কোলে দাঁড়িয়ে পুরো খাগড়াছড়ির দৃশ্য এক নজড়ে দেখা যায়।

পাহাড়ের পাদদেশে রহস্যময় আলুটিলা গুহার ব্যাস প্রায় ১৮ ফিট আর দৈঘ্য প্রায় ২৮০ ফিট। তলদেশ দিয়ে প্রবাহমান শীতল ঝর্ণা। প্রবেশমুখ ও অপর প্রান্ত আলোর আঁধারিতে আচ্ছন্ন। দিনের বেলায়ও মাঝখানে কালো অন্ধকার।

প্রবেশ পথে টিকিট কেটে ঢুকতে হয়। অন্তত ২১০টি সিঁড়ি পেরিয়ে যেতে হয় আলুটিলা গুহায়। গুহার বুক বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে পানি। এর মধ্যেই পিচ্ছিল পথ পেরিয়ে গুহা অতিক্রম করতে হয়। মশাল হাতে গা ছমছম করা এই গুহা পেরুতে অন্যরকম অভিজ্ঞতা হবে। তবে মশালের ব্যবস্থা না থাকায় মোবাইলের ফ্লাস লাইটের আলোতেই পারি দিচ্ছে কেউ কেউ অন্ধকার, হিমশীতল, পিচ্ছিল পথ পেরিয়ে আলুটিলা গুহা অভিযান রোমাঞ্চকর অনুভূতি।

খাগড়াছড়ি আলুটিলা পর্যটক কেন্দকে পর্যটন বান্ধব করতে ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসন। প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রের উন্নয়নে একাধিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তৈরি করা হয়েছে একটি মাস্টার প্ল্যান। বর্তমানে আলুটিলায় ঝুলন্ত ব্রিজ, ভিউপয়েন্ট, নন্দনপার্ক, আধুনিক রেস্ট হাউস ও এএমপি থিয়েটারসহ বিভিন্ন স্থাপনার নির্মাণ কাজ চলছে। ইতিমধ্যে আলুটিলার প্রবেশমুখে ৪২ লাখ টাকা ব্যয়ে স্বর্ণ তোরণের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এসব প্রকল্পে নির্মাণ কাজ শেষ হলে পর্যটন আর্কষণ আরো বাড়বে।

খাগড়াছড়িতে শিল্পকারখানা না উঠায় পর্যটনই অর্থনীতির অন্যতম প্রধান খাত। তাই পর্যটন অর্থনীতির বিকাশের স্বার্থে আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রের উন্নয়ন করা হচ্ছে। অনেক পর্যটক বেড়াতে এসে শহরে রাতযাপন করেন। পর্যটকরা যাতে আলুটিলা পাহাড়ে রাতযাপন করতে পারেন সেজন্য খুমপুই রেস্ট হাউস নির্মাণ করা হচ্ছে। চারতলার এই রেস্ট হাউস নির্মাণে খরচ হবে দুই কোটি টাকার বেশি। এটি নির্মিত হলে পর্যটকদের আর রাত যাপনের জন্য শহরে ফেরার চিন্তা থাকবে না। পর্যটকদের পাহাড়ের বৈচিত্রময় সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে নির্মাণ করা হচ্ছে অ্যাম্ফিথিয়েটার। সেখানে দর্শক গ্যালিরিতে বসে ৫০০ পর্যটক একসঙ্গে পাহাড়ি সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হতে পারবেন। পর্যটকরা গুহা দেখে ঝুলন্ত সেতুর মাধ্যমে এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে যেতে পারবেন। চলমান প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে আলুটিলায় পর্যটকদের সমাগম আরো বাড়বে বলে মনে করেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার জেলার প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস।

প্রতি মাসে অন্তত ৪৫ হাজার পর্যটক আলুটিলা ভ্রমণ করে। বিশেষ সময়ে তা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। পর্যটনের জন্য এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে খাগড়াছড়িবাসী।


আপনার মতামত লিখুন :
এ জাতীয় আরও খবর