• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০২:২৭ অপরাহ্ন
Notice
We are Updating Our Website

ভাস্কর্যের পাহাড় ঊনকোটির পথে

নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেট : বৃহস্পতিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২২

ভারতের সেভেন সিস্টার্সের ক্ষুদ্রতম রাজ্য ত্রিপুরা। আপনি যদি দেশের বাইরে নিকটবর্তী কোন গন্তব্যে যেতে চান, তাহলে ত্রিপুরা অন্যতম। চাইলেই অল্প সময়ে ও অল্প খরচে ঘুরে আসতে পারবেন ত্রিপুরা থেকে। ত্রিপুরার ঊনকোটি ভ্রমণ নিশ্চই মনের খোরাক মেটাবে।

ত্রিপুরার মোটামুটি তিন দিক ঘিরেই আছে বাংলাদেশ। একদিকে আসাম ও মিজোরাম। বাংলাদেশের সাথে এখানকার ভাষা এবং জীবনযাপনে বেশ সাদৃশ্য আছে। অনেকেরই পূর্বপুরুষ বাংলাদেশের ভূখণ্ডে ছিল। সেই সূত্রে প্রায় লতাপাতায় আত্মীয়-স্বজন আছে অনেকেরই।

পাহাড়ের সিঁড়ি ধরে কিছুটা উপরে উঠেই চোখে পড়বে বহুল আকাঙ্ক্ষিত সেই পাথুরে ভাস্কর্যের পাহাড় ‘ঊনকোটি’। পাথুরে পাহাড় খোদাই করে তৈরি করা শত শত বছরের পুরোনো এসব ভাস্কর্যের দিকে কেবল হা হয়েই তাকিয়ে থাকতে হয়। কী অসাধারণ মানুষের হাতের কাজ। মানুষ চাইলে আসলে কতো অসাধ্যই না সাধন করতে পারে।

ঊনকোটি মানে কোটির চাইতে এক কম। আগরতলা শহর থেকে ১৭৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই রহস্যময় পাহাড়ি এলাকা। হিন্দু পুরানের এই নামকরণের কাহিনীতে কথিত আছে যে কালু কামার নামে একজন স্থাপত্যকার ছিলেন, সেই সাথে দেবী পার্বতীর ভক্ত ছিলেন। একবার দেবী-মহাদেবের সাথে কৈলাসে যাচ্ছিলেন তখন কালু কামার বায়না ধরলেন তাকে যেন তাদের সঙ্গে নেন। তখন মহাদেব উনার উপর শর্ত আরোপ করে বলেন উনি যেতে পারেন তবে তার জন্য তাকে এক রাত্রির মধ্যে এককোটি দেবদেবীর মূর্তি তৈরী করে দিতে হবে। কিন্তু কালু কামার এককোটি থেকে একটি কম মানে ঊনকোটি টি মূর্তি তৈরী করে দিতে সক্ষম হন।

ঊনকোটির মুর্তিগুলি নিয়ে একাধিক কাহিনি প্রচলিত আছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য আর একটি কাহিনি আছে, যার কেন্দ্রীয় চরিত্র হল মহাদেব। তিনি একবার দেবতাদের নিয়ে ত্রিপুরার উপর দিয়ে বারানসী যাচ্ছিলেন। মহাদেবকে নিয়ে দেবতাদের সংখ্যা ছিল এক কোটি। সন্ধ্যে নামার পর রাত্রিবাসের ব্যবস্থা হয় এই রঘুনন্দন পাহাড়ে। পথপরিশ্রমে ক্লান্ত দেবতারা গভীর নিদ্রায় অচেতন হলেন। পরেরদিন সূর্যোদয় হওয়ার আগে সবার বারানসীর উদ্দেশ্যে যাত্রা করার কথা, কিন্তু মহাদেব ছাড়া অন্য কোনো দেবতাদের নিদ্রাভঙ্গ হল না। মহাদেব বিরক্ত হয়ে একাই বারানসীর উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন। গভীর নিদ্রায় সমাধিস্থ দেবতাদের কালনিদ্রা আর ভাঙ্গল না এবং তারা অনন্তকালের জন্য পাথর হয়ে রইলেন। এই দেবতাদের সংখ্যা ছিল এক কম কোটি তাই ঊনকোটি। সেই থেকেই এই রঘুনন্দন পাহাড় হয়ে গেল শৈবতীর্থ ঊনকোটি।

তবে ঐতিহাসিকদের মতে, ঊনকোটির এই ভাস্কর্যগুলোর সৃষ্টি অষ্টম অথবা নবম শতকে। পাহাড়ের গায়ে খোদাই করা মূর্তিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য শিব এবং সুবিশাল কালভৈরবের মূর্তি। এ ছাড়া আরো দেখা মেলে গণেশ, দুর্গা, বিষ্ণু, রাম, রাবণ, হনুমানের মূর্তি। কালের বিবর্তনে বেশ কিছু ধ্বংসপ্রাপ্ত হলেও বেশির ভাগই এখনো অক্ষত রয়েছে

ত্রিপুরার ঊনকোটি বাংলাদেশের মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ সীমান্তবর্তী। উন্নয়নের ছোঁয়া খুব যে লেগেছে তা নয়। যাওয়ার পথের রাস্তাটাও অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় বেশ খারাপ। ঊনকোটি যাওয়ার পথেই দেখা যাবে নারীরা দলবেঁধে কলসি কাঁধে নিয়ে যাচ্ছে। এদিকে সুপেয় পানির বেশ সংকট।


আপনার মতামত লিখুন :
এ জাতীয় আরও খবর