ভারতকে উড়িয়ে বাংলাদেশের নারী ফুটবল দলের ইতিহাস

ভারতকে উড়িয়ে বাংলাদেশের নারী ফুটবল দলের ইতিহাস

নেপালি ধারাভাষ্যকার বারবার একটি কথাই উচ্চারণ করছিলেন, ‘জাদুকরি’ বাংলাদেশ। ভারত মানে হার, ভারত মানে পরাজয়; গতকাল পর্যন্তও এই একটা পরিসংখ্যান দগদগে ঘায়ের মতো লেগে ছিল বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের নামের পাশে। জবাবটা মাঠেই দিতে চেয়েছিলেন বাংলাদেশের নারী ফুটবলাররা। এবং দিলেনও।

কাঠমান্ডুর দশর‍থ স্টেডিয়ামে আজকের পর থেকে লেখা হবে ভারত এখন আর অজেয় নয় বাংলাদেশের কাছে। ৩-০ গোলের জয়ে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী দলটাকে হারিয়ে সাবিনা খাতুনরা লিখলেন নতুন এক ইতিহাস।

আজকের আগ পর্যন্তও ভারতের বিপক্ষে আগের ১০ দেখায় একবারও জয়ের দেখা পায়নি বাংলাদেশ। অল্প অল্প করে সামনের দিকে এগোতে থাকা বাংলাদেশকে আগে যতবার প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়েছে ভারত, স্রেফ উড়িয়েই দিয়েছে। ২০১৬ সাফে গ্রুপ পর্বে প্রথমবারের মতো ভারতকে ঠেকানো গেলেও ফাইনালে গিয়ে শেষ পর্যন্ত হারতেই হয়েছিল গোলাম রব্বানী ছোটনের দলকে। ছয় বছর আগের সেই দলটা যে দিনে দিনে অভিজ্ঞতায় পরিপক্ব হয়ে উঠেছে সেটাই আজকে দেখাতে চেয়েছিলেন বাংলাদেশ কোচ।

নিজেদের প্রমাণের তাগিদ আর সেমিফাইনালে সাফের স্বাগতিক নেপালকে এড়ানোর চেষ্টা-দুইয়ে মিলে ভারতের বিপক্ষে অন্য রূপের এক নারী ফুটবল দেখেছে বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীরা। আক্রমণাত্মক ফুটবলের অনিন্দ্য প্রদর্শনীতে ভারতকে শুরু থেকেই ব্যতিব্যস্ত করে রাখা, শুরুর মিনিট থেকেই আক্রমণ, বল হারালে প্রেসিং ফুটবল-মানসিকতা আর কৌশলে পরিপক্ব এই বাংলাদেশকে অবশ্যই মনে রাখার কথা ভারতের। ঐতিহাসিক এই জয়ে সাফের ফাইনাল খেলার সম্ভাবনাটা কিছুটা হলেও উজ্জ্বল হয়েছে লাল-সবুজ মেয়েদের। ভারতকে টপকে পূর্ণ ৯ পয়েন্টে ‘এ’ গ্রুপের সেরা বাংলাদেশ। ১৬ সেপ্টেম্বরের প্রথম সেমিফাইনালে সাবিনা খাতুনদের প্রতিপক্ষ ‘বি’ গ্রুপের রানার্সআপ ভুটান।

ভারতের বিপক্ষে দুর্দান্ত বাংলাদেশ দলটায় মানসিকতায় যেমন পরিবর্তন ছিল, তেমনি পার্থক্য ছিল কৌশলে। দলের সেরা তারকা সাবিনা খাতুন স্ট্রাইকারের ভূমিকা ছেড়ে আজ হয়ে গেলেন প্লে-মেকার। গড়ে দিলেন দুই গোলের পথ। বক্সে সিরাত জাহান স্বপ্না ও কৃষ্ণারানী সরকার মিলে তছনছ করলেন ভারতের রক্ষণ। বলতে গেলে এই ত্রয়ীকে ঠেকানোর কোনো উত্তরই জানা ছিল না ভারতের ডিফেন্ডারদের।

সাবিনা-কৃষ্ণা ও স্বপ্না ত্রয়ীর সমন্বয়ে ১২ মিনিটে প্রথম সাফল্য পায় বাংলাদেশ। অধিনায়ক সাবিনা খাতুনের পাসে কৃষ্ণা রানি সরকারের পা হয়ে বক্সের ভেতরে সিরাত জাহান স্বপ্না গোলকিপার একটু এগিয়ে এলে তার পাশ দিয়ে নিখুঁত শটে লক্ষ্যভেদ করেন।

২২ মিনিটে ভারতের জালে আবারও গোল বাংলাদেশের। সিরাত জাহান স্বপ্নার সঙ্গে বল দেওয়া-নেওয়া করে ভারত ডি-বক্সে ঢুকে যান কৃষ্ণারানী সরকার। বাঁ প্রান্ত ধরে কৃষ্ণার কোনাকুনি শটে কিছুই করার ছিল না ভারতীয় গোলরক্ষক অদিতি চৌহানের।

৫৩ মিনিটে ভারতকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দেয় সিরাত জাহান স্বপ্নার দ্বিতীয় গোল। অধিনায়ক সাবিনা খাতুনের থ্রু পাস ধরে স্বপ্নার প্লেসিং শটে তৃতীয়বারের মতো হার মানেন ভারত গোলরক্ষক অদিতি চৌহান।

গোলপোস্টের নিচে মনে রাখার মতো একটা দিন পার করেছেন বাংলাদেশ গোলরক্ষক রুপনা চাকমা। বড় দলগুলোর বিপক্ষে ভেঙে পড়ার অতীত ভুলে আজ দশরথে ভারতকে গোলের কোনো সুযোগই দেননি রুপনা। সাধুবাদ পেতে পারেন বাংলাদেশি ডিফেন্ডাররাও। যতবারই ভীতি ছড়াতে চেয়েছে ভারত, ততবারই রক্ষণে পাহাড় হয়ে হয়ে উঠেছেন আঁখি খাতুনরা। সবাই মিলে গড়েছেন ইতিহাস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *