• বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:২৪ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ
বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক বিক্রি, আটক ২ ও জব্দ দুই ট্রাক বই ১২ ডেপুটি জেলার বদলি, কারা অধিদপ্তরের নির্দেশ ওষুধ, রেস্তোরাঁ, মোবাইল সেবা ও ওয়ার্কশপে বর্ধিত ভ্যাট প্রত্যাহার, প্রজ্ঞাপন আবেদন খারিজ, ট্রাইব্যুনালে চলবে জুলাই গণহত্যার বিচার সংস্কারে এই বছরের বেশি সময় লাগার কথা নয়: নজরুল ইসলাম খান ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে বিশ্বকাপের দৌড়ে টিকে রইল বাংলাদেশ বোমা হামলার হুমকি: বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটে তল্লাশি, কিছুই পাওয়া যায়নি বোমা হামলার হুমকিতে শাহজালালে বিজি-৩৫৬ ফ্লাইট ঘিরে বিশেষ সতর্কতা জার্মানি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে সহায়তা করবে: ওলাফ শলৎজ মাছ বিক্রি নিয়ে কোম্পানীগঞ্জে দুই গ্রামের সংঘর্ষ, আহত ১০

সকল বর্বরতার দায় পুতিনের

নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেট : মঙ্গলবার, ১৪ জুন, ২০২২

সাময়িকী টাইমস লিটারারি সাপ্লিমেন্ট-এ ইউক্রেনীয় ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক ও কবি ওকসানা জাবুজকোর একটি নিবন্ধ ছাপা হয়েছে। তাতে জাবুজকো রাশিয়ার বর্বরতাকে গুরুত্বের সঙ্গে আমলে না নেওয়ার জন্য পশ্চিমা পাঠকদের দোষারোপ করেছেন। তিনি বলেছেন, ইউরোপের বেশির ভাগ পাঠক বিশ্বাস করেন, ফিওদর দস্তয়েভস্কির মতো বড় বড় রুশ সাহিত্যিক ইউরোপীয় মানবিক মূল্যবোধকে তাঁদের সৃষ্টিকর্মে প্রকাশ করেছেন। জাবুজকো বলেছেন, পশ্চিমা পাঠকেরা রুশদের আত্মার ভেতরে ডুব দিয়ে তাদের সত্যিকারের অসভ্যতা ও বর্বরতাকে কখনো দেখেননি।

জাবুজকো বিশ্বাস করেন, রুশ সাহিত্য এমন একটি প্রাচীন সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করে, যেখানে লোকেরা কেবল জলের নিচে শ্বাস নেয় এবং যাদের ফুলকার বদলে ফুসফুস আছে তাদের ঢালাওভাবে ঘৃণা করে। ইউক্রেনে রাশিয়ার চলমান আগ্রাসনকে কেবল ‘দস্তয়েভস্কিবাদ’ নামক প্রিজমের (যাকে ‘নির্জলা, নিখাদ শয়তানি এবং দীর্ঘকালের চেপে রাখা ঘৃণা ও হিংসার বিস্ফোরণ’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে) মধ্য দিয়ে তাকালেই তা ঠিকমতো বোঝা যাবে।

এ ধরনের সাংস্কৃতিক বিশ্লেষণের একটি পুরোনো ধাঁচের কায়দা রয়েছে। সেই কায়দায় থার্ড রাইখ বা নাৎসি জার্মানিকে ‘জার্মান আত্মার অসুস্থতা’ হিসেবে ব্যাখ্যা করার চল ছিল। সেই তত্ত্বমতে ‘লুথার (জার্মান ধর্মতাত্ত্বিক মার্টিন লুথার যিনি ইহুদিবিদ্বেষী হিসেবে কুখ্যাত হয়ে আছেন) থেকে হিটলার পর্যন্ত’ জার্মানির আত্মা অসুস্থ ছিল। এই তত্ত্বের প্রচারকারীরা মনে করতেন, হিটলারের জন্মের প্রায় সাড়ে তিন শ বছর আগে লুথারের ইহুদিবিদ্বেষ জার্মানিতে নাৎসিবাদের বীজ রোপণ করেছিল। কিন্তু আজকাল খুব কম লোকই জার্মান ইতিহাসকে এমন অশোভন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখেন। অনেকে ১৯৪০–এর দশকের জাপানকে আরও কড়াভাবে বিবেচনা করে থাকে। যেহেতু জাপানে হিটলারের মতো স্বৈরশাসক বা নাৎসিদের মতো দলের অভাব ছিল, তাই সমালোচকেরা বিংশ শতাব্দীর নৃশংসতম সামরিকবাদের জন্য দেশটির সংস্কৃতিকে দায়ী করেছেন।

জার্মানরা তাদের ভয়ংকর বর্ণবাদ থেকে মোৎসার্ট এবং গ্যেটে ইউরোপীয় ঐতিহ্যে ফিরে আসতে পেরেছিল, কিন্তু জাপান অনুমিতভাবে ভিন্ন ছিল। তারা ব্যাপক মাত্রায় ইউরোপীয় ধারার শিক্ষা চর্চার মাধ্যমে তাদের সামুরাই ও সামন্তবাদ–সম্পর্কিত প্রাচীন সাংস্কৃতিক অসুস্থতা থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মার্কিন দখলদার কর্তৃপক্ষ জাপানের এই কথিত রোগের উপসর্গ, যেমন কাবুকি নাচ, তলোয়ার খেলা এমনকি জাপানিদের পবিত্র মাউন্ট ফুজির ছবি নিষিদ্ধ করেছিল। এটি তাদের সাংস্কৃতিকভাবে সভ্য হিসেবে পরিচিতি দিয়েছিল।

জার্মানি ও জাপান উভয় দেশে এখনো অনেক ডানপন্থী দল রয়েছে, যারা যুদ্ধংদেহী মনোভাব নিয়ে তাদের রাজনৈতিক তৎপরতা চালায়, যেমনটি বেশির ভাগ পশ্চিমা গণতন্ত্রেও এ ধরনের দল আছে। এগুলো বাদ দিলে আজকের জাপানে সামুরাই সংস্কৃতি কিংবা সমসাময়িক জার্মানিতে জাতিগত বর্বরতার কোনো চিহ্ন খুঁজে পাওয়া কঠিন। উভয় দেশই উল্লেখযোগ্যভাবে এখন অনেক প্রশান্ত। জার্মানি অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের তুলনায় এখন অভিবাসী এবং শরণার্থীদের অনেক বেশিই স্বাগত জানায়।

স্বৈরশাসকেরা সুসভ্য লোকদের ভয়কে কাজে লাগিয়ে এবং তাদের মনের অতলে থাকা প্রবৃত্তিকে জাগিয়ে তুলে ভয়ানক বর্বরে পরিণত করতে পারে। সেনারা যখন বিদেশে আক্রমণ করে, তখন প্রায়ই ধর্ষণ, নির্যাতন এবং গণহত্যার ঘটনা ঘটে। শত্রুকে আত্মসমর্পণের জন্য ভয় দেখাতে কমান্ডিং অফিসাররা কখনো কখনো সক্রিয়ভাবে এ ধরনের আচরণকে উৎসাহিত করেন। কখনো কখনো এ বিষয়ে অফিসার কোর এর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে এবং শৃঙ্খলা ভেঙে যায়।

পুতিনের আগ্রাসন এবং ইউক্রেনের নৃশংস যুদ্ধের বর্বরতার মূল হিসেবে রাশিয়ান সংস্কৃতিকে ধরে নেওয়া নিঃসন্দেহে যতটা বিপজ্জনক, ততটাই বিপথগামিতার পরিচায়ক। রাশিয়ান শিল্পী এবং টেনিস খেলোয়াড়দের বাদ দেওয়া, রুশ গায়কদের পারফরম্যান্স বাতিল করা বা রুশ সাহিত্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া ক্রেমলিনের এক নায়কের হাতকেই শক্তিশালী করে। কোনো সংস্কৃতিকে, অন্তত সমগ্র রাশিয়ান সংস্কৃতিকে একচেটিয়াভাবে মাপা ঠিক নয়। ইউরোপীয় জাগরণ সেন্ট পিটার্সবার্গকে উজ্জীবিত করেছে এবং অনেক রুশ লেখক, সুরকার এবং শিল্পী ফ্রান্স, জার্মানি এবং ব্রিটেনে অনুপ্রেরণার সন্ধান করেছেন। এ ছাড়া রুশ সংস্কৃতির একটি স্লাভোফিল (স্লাভপন্থী) দিক রয়েছে, যে দিকটিতে পশ্চিমের প্রতি সন্দেহ ও বিরক্তি রয়েছে। এর মধ্য দিয়ে কিছু দুর্দান্ত রোমান্টিক এবং আধ্যাত্মিক শিল্পের সৃষ্টি হয়েছে। দস্তয়েভস্কির উপন্যাসে পশ্চিমের প্রতি ভালোবাসা ও বিরক্তি—দুটিরই মিশ্রণ পাওয়া যাবে।

পুতিন পশ্চিমের প্রতি রুশদের ভীতিকে কাজে লাগিয়েছেন। তিনি চান সব রুশ নাগরিক নিজেদের অহংকারী মনে করুক। তারা সবাই মনে করুক, পশ্চিম তাদের ওপর আধিপত্য বিস্তার করতে এবং তাদের গর্বিত চেতনাকে চূর্ণ করতে চায়। তিনি এ অনুভূতি জাগিয়ে তুলে রুশ সেনাদের বর্বর করে তুলতে চান। এ কারণে পুতিনের ফাঁদে পা দিয়ে আমাদের রুশ সংস্কৃতিকে দোষারোপ করলে চলবে না। এর বদলে আমাদের উচিত রাশিয়ান শিল্প, সংগীত, নৃত্য এবং সাহিত্যের মাস্টারপিসগুলোকে সাদরে গ্রহণ করা। আমাদের উচিত হবে সেই মহান রুশ স্রষ্টাদের অমৃত আধারকে পুতিন এবং তার বলয়ের যারা বিষাক্ত করেছে, তাদের জন্য নিন্দা তুলে রাখা।

স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট, অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ

● ইয়ান বুরুমা দ্য চার্চিল কমপ্লেক্স: দ্য কার্স অব বিয়িং স্পেশাল, ফ্রম উইনস্টন অ্যান্ড এফডিআর টু ট্রাম্প অ্যান্ড ব্রেক্সিট বইয়ের লেখক

প্রথম আলোর সৌজন্যে


আপনার মতামত লিখুন :
এ জাতীয় আরও খবর