একটু সহানুভূতি কি তারা পেতে পারে না

একটু সহানুভূতি কি তারা পেতে পারে না?

বাবা, আমি কি কখনই স্কুলে যেতে পারবো না? ৬ বছর বয়সী মেয়ের জিজ্ঞাসা, তার জন্মদাতা পিতার কাছে। চোখের কোণে জমা জল মুছে নিয়ে বাবার সারল্যে ভরা জবাব, নিশ্চয়। তবে…। তবে কি বাবা? স্কুল তো আমাদের গ্রাম থেকে অনেক দূরে মা। সেই শহরে। সে সময় পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন প্রান্তোষ। এগিয়ে এসে তিনি মেয়েটির বাবাকে বললেন, চিন্তা করবেন না চাচা। দেখি কি করা যায়।

ভাবনার পোকাটা সেই থেকেই। এরপর পড়লো করোনার লকডাউন। বাসা থেকে অনলাইনেই চলতো অফিসের কার্যক্রম। একদিন এক ছুটির দিনে প্রান্তোষ ভাবলো, আচ্ছা পরীর মত দেখতে ছোট্ট মেয়েটা শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী, সে কারণে
অন্যান্য শিশুদের মতো সে হেসেখেলে স্কুলে যেতে পারে না। মাথায় বেণী করে ঠিকই, কিন্তু তা নিয়ে কথা বলেনা কিংবা টেনে ধরেনা তার সহপাঠীরা। আচ্ছা, এখানে তার তো কোন দোষ নেই। জন্মগতভাবেই সে এমন। তাহলে কেন স্কুলে সবার সঙ্গে স্বাভাবিক নিয়মে পড়তে পারবে না?

অনেক জায়গায় কথা বলেও তেমন কোন লাভ পেলো না প্রান্তোষ। বাধ্য হয়ে নিজের জমানো টাকা দিয়েই বরিশালের কাশিপুরের ২৯ নং ওয়ার্ডে খুললো সমতা ইনক্লুসিভ স্কুল। পাড়ার সেই স্কুলে এখন সেই মেয়েটি সহ অনেকেই পড়ে। ভালো লাগার ব্যাপার হলো, স্কুলটিতে প্রতিবন্ধীদের পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষার্থীরাও পড়ালেখা করে। এতে একদিক থেকে যেমন প্রতিবন্ধী শিশুদের মনে কোনরূপ প্রভাব পড়ছে না, অপরদিকে তারা বন্ধুবৎসল পরিবেশে স্বাভাবিক নিয়মেই বেড়ে উঠছে। আর সুযোগ পেলেই মেতে উঠছে হাসি-খেলা-খুনসুটিতে।

স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা প্রান্তোষ বৈদ্য নিজেও একজন প্রতিবন্ধী। তাই বোধহয় প্রতিবন্ধীদের কষ্টটা তিনি একটু বেশিই অনুভব করেন। এ কারণে নিজের প্রবল ইচ্ছাশক্তির বদৌলতে রাজধানীর গণ্ডি পেরিয়ে বরিশালের একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে তিনি নিজের সবটুকু দিয়ে এই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন।

যেখানে আজ সকালের সূর্য উঠলেই হেসে ওঠে শিক্ষার্থীরা। জোরে জোরে পড়ে স্বরে অ, স্বরে আ। আর তাদের এই মধুর ধ্বনি শুনে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন প্রান্তোষ। বলেন, হয়তো খুব ভালো রাখতে পারিনি তাদের। নানা প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। তবে আমি তাদেরকে আমার মত করে সর্বোচ্চ ভালো রেখেছি। রাখার চেষ্টা করছি। কারণ, জানামতে বরিশালে ১টি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ও একটি অটিজমদের স্কুল রয়েছে। সেখানে শিক্ষার্থী সংখ্যাও বেশি নয়। প্রতি ক্লাসে ১৫ থেকে ২০ জন। তাইতো নিজের সব জমানো অর্থ ও দুই বন্ধুর সহায়তা নিয়ে স্কুলটির যাত্রা শুরু করেছি। আশারাখি সমাজের বিত্তবানরা আমাদের সঙ্গে থাকবেন। বাচ্চাদের মুখের হাসি অম্লান রাখবেন। কারণ, সরকার সাধারণ শিক্ষার্থী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য অনেক করছে। তাদের একার পক্ষে তো সব করা সম্ভব নয়। উচিত হবে আমার-আপনার মত মানুষদের এগিয়ে আসা। তবেই প্রতিবন্ধীরা নিজেদের ‘সমাজের বোঝা’ না ভেবে সম্পদ ভাববে। উচ্চস্বরে বলবে, আমরাও পারি।

প্রান্তোষের মতো এমন উদ্যমী তরুণ দেশের অনেক জায়গাতেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। কাজ করে যাচ্ছে নিরবে-নিভৃতে। তাদের জন্য শুভ কামনা। সঙ্গে স্যালুট।

চলুন তাদের পাশে দাঁড়াই
সহযোগিতার হাত বাড়াই

যোগাযোগ:
সমতা ইনক্লুসিভ স্কুল
২৯ নং ওয়ার্ড, কাশিপুর, বরিশাল
মোবাইলঃ ০১৭১২-৪০৪৩৯০
ইমেইলঃ [email protected]

 

লেখক:-

ইমতিয়াজ মেহেদী হাসান

গণমাধ্যমকর্মী ও গীতিকার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *