খান হাসিব: আমরা স্কুলে ইতিহাস বিষয়ক তথ্য জানতে খুবই পছন্দ করি, কারণ এসব তথ্যগুলি খুবই আকর্ষক এবং এগুলো আমাদের অতীত সম্পর্কে জ্ঞান সমৃদ্ধ করে।
তবে ইতিহাসের এমন কিছু চরিত্র আছে যাদেরকে আমরা সবাই চিনি, কিন্তু তাদের কিছু বিষয়ে স্কুল-কলেজে কখনো পড়া হয়নি। যেমন, আপনি কি জানেন ইতিহাসের দীর্ঘতম বছরটি ৪০০ দিনের বেশি ছিলো! এছাড়া কুখ্যাত হিটলার একটি গাড়ির ডিজাইন করেছিল যা আমরা বর্তমান সময়েও ব্যবহার করছি!
আজ ইতিহাসের এমন কিছু তথ্য দৈনিক এইদিনের পাঠকদের উদ্দেশ্যে ধারাবাহিকভাবে উপস্থাপন করছি…
১. গিলোটিন (দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করার যন্ত্র) উদ্ভাবন করা হয়েছিল পাপের সমানুপাত অনুযায়ী শাস্তি দিতে!
গিলোটিন এমন একটি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার ব্যবস্থা যা ফ্রান্স এবং ফরাসী বিপ্লবের সময় উদ্ভাবন করা হয়। এই ব্যবস্থা আসার আগে ফ্রান্সে খুবই বর্বরতম উপায়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হতো।
এর আবির্ভাব এবং ব্যাপক ব্যবহার না হওয়া পর্যন্ত ফ্রান্সে নিয়মিত মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা ছিল বর্বর। আঁকানো এবং কোয়ার্টারের মতো শাস্তি সাধারণ ছিল।
গিলোটিনে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার ধারণাটি ফ্রান্স বিপ্লবের সাম্যতার আন্দোলনের একটি অংশ ছিল, যা বিপ্লবকে উত্সাহিত করেছিল। এর মাধ্যমে হত্যা ও হত্যাকারীর প্রতি ন্যায়বিচার করতে গিলোটিন ব্যবস্থা সাম্যতা রক্ষা করে!
২. সোভিয়েত ইউনিয়ন চেঙ্গিস খানের স্মৃতি তাদের ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করেছিল!
বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে সোভিয়েত আমলের শাসনকালে শুধুমাত্র চেঙ্গিস খানের নাম উচ্চারণ করলে ফৌজদারি অপরাধ বলে গণ্য হতো। এ সময় স্কুলের পাঠ্যপুস্তক থেকে তার জীবনী ইতিহাস সরিয়ে নিয়েছিল সোভিয়েত সরকার। এছাড়া চেঙ্গিস খানের জন্মস্থান খেতি’তে (Khentii) পর্যটক প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়।
নব্বইয়ের দশকের গোঁড়ার দিকে মঙ্গোলিয়া স্বাধীনতা অর্জনের পর, তাকে মঙ্গোলিয়ার জাতীয় নায়ক হিসাবে তার যথাযথ মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় তিনি মঙ্গোলিয়ার শিল্প ও সংস্কৃতিতে জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বের পাশাপাশি মঙ্গোলিয় মুদ্রায় তার ছবি রাখা হয়!
৩. রোমান আমলে বেজি কুকুর এবং বানর ব্যাপক হারে ঘরে পালন করা হতো!
ইঁদুরের মতো (শস্যাদির ক্ষতিকারক স্তন্যপায়ী জীব ও পাখি) প্রাণী শিকারের জন্য বিড়ালের পরিবর্তে বেজি উপর বেশি বিশ্বাস করেছিল। প্রহরী ও বার্তাবাহক হিসেবে কুকুর ও বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে বানর প্রতিপালন করতো!
৪. পারিবারিক ন্যাপকিন হিসাবে ব্যবহার করতে টেবিলক্লথ আবিষ্কার করা হয়!
মূলত শিশুদের মুখ ও শরীর মোছার কাজে ব্যবহারের জন্য টেবিলক্লথের উদ্ভাবন করা হয়। সে সময়ে মায়েদের কষ্ট লাঘব করতে খাবার টেবিলে টেবিলক্লথ দিয়ে ঢেকে রাখা হত। পরবর্তীতে অতিথি আপ্যায়নের পর তাদের হাত ও মুখ মোছার গামছা হিসেবে এর ব্যবহার জনপ্রিয় হয়।
সে সময় অতিথিদের বোঝানো হয়, ভোজের পরে টেবিলক্লথে হাত ও মুখ মুছতে হবে, এটা না করলে তা অভদ্রতা হিসেবে গণ্য হবে!
৫. সোভিয়েত আমলে ভয়াবহ চেরনোবিল তেজস্ক্রিয়তার বিকিরণের সংস্পর্শে এসে ভ্লাদিমির প্রবিক নামে এক যুবকের চোখের রঙ পরিবর্তিত হয়ে যায়!
১৯৮৬ সালের ২৬ এপ্রিল চেরনোবিল পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৪ নাম্বার চুল্লির আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছিলেন ভ্লাদিমির প্রবিক নামে একজন দমকলকর্মী। সেখানে তার কাজ ছিল একটি বাড়ির ছাঁদ থেকে বিকরণ পরিদর্শন করে রিপোর্ট প্রদান করা।
এ সময় জ্বলন্ত চুল্লীর উচ্চ-তেজস্ক্রিয় শিখার বিকিরণে তার চোখে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। এটি এত মারাত্মক ছিল যে, এতে তার চোখের রঙ বাদামী থেকে নীল করে দেয়।
চেরনোবিল বিপর্যয়ের প্রথম প্রতিক্রিয়াশীলদের বেশিরভাগের মতো ভ্লাদিমির তীব্র বিকিরণের বিষক্রিয়ায় মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে মারা যান!