লাইফস্টাইল ডেস্ক: করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে প্রচলিত ধারণা আর সত্য কী তাই নিয়ে সম্প্রতি ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’ বিশেজ্ঞদের গবেষণালদ্ধ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সংক্ষিপ্ত কিছু টিপস মনে রাখলে এই অতিমারির সময় সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন সম্ভব।
অক্সফোর্ড আ্যস্ট্রাজেনেকা কোভিড – ১৯ এর কোড নেম এজেডডি ১২২২। ভ্যাকসিনটি অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও আ্যস্ট্রাজেনেকার যৌথ উৎপাদন। ভেক্টর পদ্ধতিতে তৃতীয় পর্যায়ের ট্র্যায়াল শেষে ভ্যাকসিন বাজারে ছাড়া হয়। এর প্রতিরোধ ক্ষমতা ৯০% প্রমাণিত। ৪ জানুয়ারি, ২০২১ এই ভ্যাকসিন বিশ্বের অন্যন্য ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির অনুমোদন লাভের পর একাধিক রাষ্ট্র অক্সফোর্ড আ্যস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন ব্যবহারের অনুমোদন দেয়। ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক ভারত বায়োটেক বলছে, সর্বশেষ ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায় কেভিড -১৯ এর সাথে লড়াইয়ের জন্য বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে এই আবিষ্কার অন্যতম মাইলফলক।
করোনার দ্বিতীয় পর্যায়ে যখন ভ্যাকসিন এলো, তখন ভ্যাকসিনের ভালো-মন্দ নিয়ে জনমনে সংশয় দেখা দেয়। খুশির জোয়ার আর মুক্তির আনন্দের পাশাপাশি দ্বিধা-সংশয় আছে। প্রচারণা, মনগড়া ধারণা এর কারণ। অতিমারির সময়ে বিজ্ঞানসম্মত তথ্য জানার ক্ষেত্রে অন্য কোন বিকল্প নেই।
১. মিথ, মনগড়া ধারণা ও প্রচারণা
ইদানিং অনেক সোশ্যাল মিডিয়ায় করোনা ভ্যাকসিন সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর পোস্ট দেখা যায়, যা উদ্বেগ বাড়াতে পারে এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য বাড়তি ক্ষতির কারণ হতে পারে। সংক্রমণ ও ভোগান্তি বাড়িয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপনে আবার ছন্দপতন ঘটাতে পারে। মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে। মিথ বা প্রচলিত বিশ্বাস নয়, বিজ্ঞানকে বিশ্বাস করা তাই জরুরী।
২. টিকা বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে
দেহে উপস্থিত থাকা প্রোটিনের সাথে সাদৃ্শ্যের কারণে তা ব্যক্তির ফার্টিলিটি বা সন্তান জন্মদানের ক্ষমতার ক্ষেত্রে হুমকি হতে পারে। এরকম মিথ্যে গুজব ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। কোভিশিল্ড বা কোভ্যাক্সিন এর কোনটিই বন্ধ্যাত্ব সৃষ্টি করে না। এর কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণও নেই। এই গুজব ছড়ানো, ও ধারণা পোষণ করা ভুল। উর্বরতা নয়,ভুল প্রচারনা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরূপ। সবাইকে টিকা-দান কর্মসূচির আওতায় আনা গুরুত্বপূর্ণ। প্রচারণা ও ভুল ধারণা পুষে রাখা এই প্রয়াসকে ব্যহত করতে পারে।
৩. ট্রায়াল তাড়াতাড়ি করা হয়েছে তাই ভ্যাকসিন অনিরাপদ
খুবই সত্যি কথা। ভ্যাকসিন দ্রুত তৈরি হয়েছে, এটা তো আশার কথা। ভ্যাকসিন মানুষের কাছে দ্রুত নিয়ে আসা জরুরী ছিলো। জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষা, স্বাভাবিক জীবনযাপন সুনিশ্চিত করার জন্য আবশ্যক ছিলো। তাড়াহুড়ো করা হয়েছে, তার মানে এই নয় ভ্যাকসিন অনিরাপদ। মেডিক্যাল প্রফেশনাল, জায়ান্ট ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি, চিকিৎসকদের সমণ্বয়ের ফসল এই ভ্যাকসিন।
শুধু দ্রুত নয়, সমণ্বিত প্রয়াস পেশাদারিত্বকে একত্রিত করে পর্যাপ্ত ট্রায়ালের পর ভ্যাকসিন অনুমোদন করা হয়েছে। এর মধ্যেই লক্ষ লক্ষ লোক তাদের পেশায় ফিরে গেছে, চাকরি করছে। স্বাভাবিক জীবন যাপন করছে। কারও কারও ক্ষেত্রে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কিন্তু সেই সংখ্যা খুব সামান্য। ব্যতিক্রম থাকতেই পারে। সেই অর্থে ভ্যাকসিন নিরাপদ।
৪. কোভিড ভ্যাকসিন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করতে পারে
বাতাসে ভাইরাসের মতোই ভেসে বেড়াচ্ছে প্রচুর ভুল তথ্য। প্রচার সত্যি নয়। কোভিড -১৯ ভ্যাকসিন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে না, আরও শক্তিশালী করে। ভ্যাকসিন দেহের মারাত্মক জীবাণু শনাক্ত ও এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম। ভ্যাকসিন ইমিউন সিস্টেমকে দুর্বল করে না ভারাক্রান্তও করে না। তাই কোভিড ভ্যাকসিন নিয়ে ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কোন সুযোগ নেই।
৫.কোভিডে ইতিমধ্যেই আক্রান্ত হলে আর ভ্যাকসিন লাগবে না
অনেকের ধারণা একটি কোভিড শট নেয়ার পর মাস্ক পড়ার দরকার নেই। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলারও প্রয়োজন নেই। স্বাভাবিক জীবন যাপন করা যেতে পারে – এরকম প্রচার করা হচ্ছে। এই ধারণা ও প্রচার সঠিক নয়। সিডিসির পরামর্শ মাস্ক তখনই বাদ দেয়া যাতে পারে যখন আশেপাশের সবার টিকা নেয়া হয়ে গেছে। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার ক্ষেত্রেও তাই। তার আগে নয়। এখনও সবাইকে টিকা দেয়া হয়নি। এখনও কোভিড সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে। সুতরাং এখনও মাস্ক পড়া সহ সকলকে করোনার অন্যান্য সতর্কতা মেনে চলা অত্যাবশ্যক।