নওগাঁ জেলা শহর থেকে ৫০ কিলোমিটার পশ্চিমে মান্দা উপজেলার ভারশোঁ গ্রামের লক্ষ্মীর মোড়ে একজন যুবক একটানা গান গেয়ে চলেছেন। কাছে গিয়ে জানতে পারলাম যিনি গান করছেন তিনি একজন অন্ধ। নাম তার আইনাল হক। বয়স ২০ বছর। অপেক্ষা করতে থাকলাম গানটা শেষ হওয়ার জন্য। পথচারীরা বেশ মনোযোগ দিয়ে তার গান শুনছেন। গান শেষ হলে কথা হয় ঢাকা পোস্টের প্রতিবেদকের সঙ্গে।
আয়নাল হক নিজেই গান বানান ও সুর করেন। তার গাওয়া গান স্থানীয়রা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিলে সুনাম ছড়িয়ে পড়ে চারিদেকে। কোনো প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ ছাড়াই খালি গলায় তার অসাধারণ সঙ্গীত পরিবেশনে দর্শকরা মুগ্ধ।
এলাকাবাসী জানান, ছোটবেলা থেকেই আয়নাল গান পাগল। যেখানে গান বাজনা হতো সেখানেই ছুটে যেত। এভাবে নিজে নিজেই এক সময় গান বাধা, সুর ও গাইতে শুরু করেন। তার গান স্থানীয়রা ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিলে সুনাম ছড়িয়ে পড়ে।
ওই এলাকার বাসিন্দা গ্রাম পুলিশ কাজেম আলী জানান, আইনাল নিজেই গান বানান এবং সুর করেন। তার গান শুনতে অনেকেই এই এলাকায় আসেন। ভবিষ্যতে বড় মাপের শিল্পী হওয়ার স্বপ্ন আইনালের। এজন্য সকলের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।
আইনাল গণমাধ্যমকে বলেন, দুমুঠো ভাতের জন্য মাঠে-ঘাটে হাটে-বাজারে গান করি। আমি অন্ধ, পড়াশুনা করিনি, কাজ করার উপায় নেই। আমার একমাত্র অবলম্বন হলো গান। মানুষজন গান শুনে খুশি হয়ে যা দেন তাতেই চলে যায়। পথে গান গাইতে গাইতে হয়ত একদিন কারো চোখে পড়ে যাব। আমার স্বপ্ন বড় গায়ক হবো। ঢাকায় টেলিভিশন স্টুডিওতে গান গাইতে চাই।
আয়নালের বাবা বলেন, আমি দিনমজুর মানুষ। ছেলেটি জন্ম থেকেই অন্ধ। সারাদিন হাটে-বাজারে গান শোনায়। মানুষ খুশি হয়ে যা দেয় তাই দিয়ে আমাদের সংসার চলে। ছেলেটার গান শুনে অনেকে ফোন করে প্রশংসা করেন। এতে আমার অনেক ভালো লাগে। আরও গান গাইতে উৎসাহ দেই। আইনাল এখন পর্যন্ত শতাধিক গান রচনার পাশাপাশি সুরও দিয়েছে।
নওগাঁ বাউলের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলতাফুল হক চৌধুরী আরব জানান, আয়নালরা আঞ্চলিক গানের সম্রাট। বর্তমান প্রজন্ম আইনালদের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে উৎসাহ ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে নওগাঁর আঞ্চলিক গান বাঁচিয়ে রাখবে।
সুত্র: ঢাকা পোস্ট