ডেস্ক রিপোর্ট: দেশে চার সপ্তাহ ধরে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু। বলা হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি না মানায় করোনার সংক্রমণ বাড়ছে আবার। হুট করেই সংক্রমণের এমন গতি উদ্বেগ বাড়িয়ে দিচ্ছে।
দেশে করোনার সংক্রমণের পর চালু হওয়া সীমিত পরিসরে চলাচলের বিধিনিষেধ শিথিল হতে শুরু করে আগস্টে। কারণ তখন থেকে সংক্রমণ কমতে শুরু করে। এরপর শীতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করা হয় সরকার থেকেও। তবে তখনো সংক্রমণের হার এত দ্রুত বাড়তে দেখা যায়নি।
সর্বশেষ সোমবার ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে এ রোগে। ১ হাজার ৭৭৩ করোনায় সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হয়েছেন। রোগী শনাক্তের হার ৯.৪৮ শতাংশ।
দেশে সংক্রমণ শুরুর দিকে রোগী শনাক্তের হার কম ছিল। গত মে মাসের মাঝামাঝি থেকে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত রোগী শনাক্তের হার ২০ শতাংশের ওপরে ছিল। এরপর থেকে নতুন রোগীর পাশাপাশি শনাক্তের হারও কমতে শুরু করেছিল। মাস দু-এক সংক্রমণ নিম্নমুখী থাকার পর গত নভেম্বরের শুরুর দিক থেকে নতুন রোগী ও শনাক্তের হারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা শুরু হয়। ডিসেম্বর থেকে সংক্রমণ আবার কমতে শুরু করে।
এ বছরের ৭ জানুয়ারি মোট ৩১ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এরপর সোমবার সর্বোচ্চ মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেল।
সংক্রমণ বাড়তে থাকায় পরীক্ষার তুলনায় দৈনিক শনাক্তের হারও ২৭ ডিসেম্বরের পর প্রথমবারের মতো ৯ শতাংশ পেরিয়েছে।
নতুন করে সংক্রমণ বাড়ার কারণ হিসেবে যুক্তরাজ্যে পাওয়া করোনাভাইরাসের নতুন স্ট্রেইন ‘এন৫০১ওয়াই’দায়ী কি না তা ভাবাচ্ছে বিশেষজ্ঞদের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, গত ৫ জানুয়ারি প্রথম এই ভাইরাস পাওয়া যায়। আক্রান্ত ব্যক্তি যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরেছিলেন। ঢাকা ও সিলেটেও এই ভাইরাসের সন্ধান পাওয়া গেছে।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরিন বলেন, ‘আমরা জানুয়ারির প্রথম দিকে পাঁচ বা ছয় জনের নমুনায় যুক্তরাজ্যের নতুন ধরনের করোনাভাইরাস খুঁজে পেয়েছি।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম বলেন, ‘এই ভাইরাস দেশে কতটা ছড়িয়েছে তার বিস্তারিত জানতে কন্টাক্ট ট্রেসিং চলছে।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ৮৩টি দেশে করোনার নতুন এই স্ট্রেইনের সংক্রমণ হয়েছে।
বিজ্ঞানীদের মতে, যুক্তরাজ্যে পাওয়া করোনাভাইরাসের এই নতুন স্ট্রেইন আরও বেশি সংক্রামক।
আইইডিসিআরের উপদেষ্টা মোশতাক হোসেন বলেন, ‘এই নতুন স্ট্রেইনের কারণে শনাক্তের হার বাড়ছে কি না, তা এখনই বলা কঠিন হবে। এর জন্য জিনোম সিকোয়েন্সিং করতে হবে। ব্যয়বহুল হলেও ভাইরাসটির রূপ পরিবর্তন হচ্ছে কি না, তা জানতে সরকারের নিয়মিতভাবে জিনোম সিকোয়েন্সিং করা উচিত’।
যুক্তরাজ্যের নতুন স্ট্রেইন সম্পর্কে জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘মানুষ সামাজিক দূরত্ব ও মাস্ক পরার বিষয়ে উদাসীন বলেই সংক্রমণের হার বাড়ছে।’
তিনি বলেন, ‘সব ধরনের স্ট্রেইনের জন্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা একই। আমাদের শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে, নিয়মিত হাত ধুতে হবে, মাস্ক পরতে হবে এবং ভিড় থেকে দূরে থাকতে হবে। আমরা যদি এই স্বাস্থ্য বিধিগুলো মেনে চলি তাহলে ভাইরাসকে পরাস্ত করতে পারব।’
গত ফেব্রুয়ারিতে নতুন স্ট্রেইন বিষয়ে যুক্তরাজ্য সরকার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, নতুন এই স্ট্রেইন আগের স্ট্রেইনের চেয়ে ৭০ শতাংশ বেশি সংক্রামক হতে পারে।
ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রিটিশ সরকারের বিজ্ঞানীরা অন্য সব স্ট্রেইনের তুলনায় যুক্তরাজ্যের নতুন স্ট্রেইনটিকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন। যুক্তরাজ্যের এই নতুন স্ট্রেইন হাসপাতালে ভর্তির ঝুঁকি আরও বাড়িয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিজ্ঞানীদের ধারণা অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে অন্যান্য স্ট্রেইনের তুলনায় এই স্ট্রেইনটি ৩৫ থেকে ৪৫ শতাংশ বেশি তাড়াতাড়ি সংক্রমিত করছে।