আমাদের দেশে প্রায় সব পরিবারের সকলে এক সাথে বেড়াতে যাওয়া অথবা পিকনিক-এ যাওয়া মানেই বিভিন্ন ধরনের খাবারের আয়োজন। অনেক বাড়িতে কোন অতিথি আসবে জানলে এক সপ্তাহ আগ থেকে চলতে থাকে রান্নার আয়োজন। বাঙালিদের মধ্যে এটা যেন একটি প্রথা চালু হয়ে গেছে। এবং এই সব কিছুই হয়তো দেখাশোনা করেন বাড়ির নারীরা। এবং এটি এখন এমন পর্যায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে যে তাদের বিয়ের পর বাকি জীবনটাই থাকে রান্নাঘরকে ঘিরে।
বলা হয় এদেশে অতিথি আপ্যায়নে কোন ত্রুটি রাখা হয় না। বাড়িতে অতিথি মানে বিভিন্ন ধরনের খাবার রান্না করতে হবে। সুস্বাদু খাবারে ডাইনিং টেবিল থাকতে হবে পরিপূর্ণ। কমপক্ষে ১০-১৫ পদ তো থাকতেই হবে। আবার এতো খাবার খেতে না পেরে ফেলে দেয়া হয় ডাস্টবিনে।
কখনো কি ভেবে দেখেছেন যে খাবার গুলো ফেলে দেয়া হচ্ছে তার পেছনে এই নারী কতখানি পরিশ্রম দিয়েছে?
এদেশে বিভিন্ন রকমারি রান্নার কাজে একজন নারীর কেটে যায় দিনের ৬০% সময়। মাসের ৩০ দিনে ৬-৮ দিন যদি অতিথি বাড়িতে আসে তাহলে একজন নারীকে ২৪ ঘণ্টায় গড়ে ৮-৯ ঘণ্টা রান্নাঘরে দিতে হয়।
একজন অতিথি কি বাড়িতে শুধু খাবার উপভোগ করতে আসেন?
মানুষ একজন আরেকজনের বাড়িতে যায় কিছু ভাল মুহূর্ত কাটাতে সেই সাথে সামাজিক বন্ধনটাকে আরো মজবুদ করতে। তারা অনেক সময় হাতে কম সময় নিয়েও আসেন। তখন যদি তাদের সময় না দিয়ে শুধু তাদের খাবার আয়োজনের কাজেই সময় চলে যায় তাহলে না ওনারা ভাল একটা সময় পাবেন না আপনি পাবেন। এতে অনেকক্ষেত্রে খুব কাছের আত্মীয়ের মাঝেও চলে আসে দূরত্ব।
আমরা যদি পশ্চিমা দেশগুলোর দিকে তাকাই, বাড়িতে অতিথি আসুক বা না আসুক তারা এত কিছুর আয়োজন করেন না। তাহলে কি তারা অতিথি আপ্যায়ন জানেন না? বা করেন না? না, তা নয় যদি তাই হত তবে তারা বেড়াতে যেত না বা বাড়িতে কোন অতিথিও আসত না। তারাও করে তবে পরিমিত। তারা আমাদের মত একবারে এতো খাবার তৈরি করে আবার নষ্ট করে না। তারা অল্প আয়োজন করে এতে তাদের দেশের নারীদের রান্নাঘরে কম সময় দিলেও চলে।
আমি বলছি না তাদের অনুসরণ করতে, তবে আমরা চাইলেই পারি আমাদের প্রচলিত এই প্রথাকে পরিবর্তন করতে। আমরা পরিমিত আয়োজন করতে পারি অথবা অতিথির চাহিদা অনুযায়ী আয়োজন করতে। অন্তত একজন নারীর দিক থেকে চিন্তা করে হলেও আমরা আমাদের এ নিয়মকে বদলে দিতে পারি।
লেখা: সোনিয়া আক্তার, গণমাধ্যমকর্মী ও লেখিকা