ডেস্ক রিপোর্ট: দিনাজপুরের হিলিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও সীমান্ত পাহারার মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজে পুরুষের সঙ্গে কাঁধ মিলিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন নারীরা। একই সঙ্গে উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরেও সমানতালে সফলতার স্বাক্ষর রাখছেন তারা।
দিনাজপুরের হিলি সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্য হিসেবে কাজ করছেন ছয়জন নারী। হিলি থানায় কর্মরত আছেন একজন এএসআইসহ ছয় নারী পুলিশ সদস্য। এছাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা, আনসার-ভিডিপি কর্মকর্তা, মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা ও সহকারী প্রোগ্রামারসহ হাকিমপুর উপজেলার উচ্চপদস্থ জায়গাগুলোও অলংকৃত করেছেন নারীরা। এ ১৭ জন নারী বিশেষ বিশেষ অবস্থানে থেকে সুচারুরূপে নিজেদের দায়িত্ব পালন করছেন।
সীমান্তে অস্ত্র হাতে বিজিবির অন্য সদস্যদের মতো অতন্দ্রপ্রহরীর ভূমিকা পালন করছেন ছয় নারী সদস্য। সীমাহীন ঝুঁকি জেনেও সাহসিকতার উত্কৃষ্ট নজির সৃষ্টি করছেন তারা। এছাড়া বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানীকৃত পণ্য রেজিস্ট্রার, দুদেশের মাঝে যাতায়াতকারী পাসপোর্ট যাত্রীদের তথ্য ও ব্যাগেজ তল্লাশি, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার কাজেও সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে কাজ করছেন নারীরা। অন্যদিকে হাকিমপুর উপজেলায় পাঁচ নারী প্রশাসনিক পদে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
হাকিমপুর থানায় কর্মরত নারী সৈনিক রিক্তা ও জনি বলেন, আমরা এ পেশায় নিযুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে নিজেরা যেমন আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছি, তেমনি আমাদের পরিবারও আর্থিকভাবে সচ্ছল হয়েছে। পুরুষদের পাশাপাশি আমরাও নির্বিঘ্নে আমাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। পুলিশের মতো এমন চ্যালেঞ্জিং পেশায় নিজেদের নিয়োজিত করার মধ্য দিয়ে আমরা নিজেকে গর্বিত মনে করছি।
হাকিমপুর থানায় কর্মরত এএসআই হোসনে আরা বলেন, একজন পুরুষ পুলিশের তুলনায় একজন নারী পুলিশ সদস্য নারীদের ভালো সেবা দিতে পারবেন। নারীরা অনেক সমস্যার কথা পুরুষ পুলিশ সদস্যদের কাছে বলতে লজ্জা পেলেও আমাদের কাছে পান না। এতে করে পুলিশ বাহিনীর পক্ষ থেকে আমরা নারীদের বেশি আইনি সহায়তা দিতে পারি।
তিনি আরো বলেন, আমরা এখানে (থানায়) ছয়জন নারী পুলিশ কর্মরত আছি। এখানে নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী ও বয়স্ক যেসব সেবাগ্রহীতা আসেন, তাদের বিভিন্ন ধরনের সেবা দিয়ে থাকি।
হাকিমপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. মমতাজ সুলতানা ও কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আরজেনা বেগম বলেন, আমি একজন নারী কর্মকর্তা। আমার পাশেই হয়তো আমার অধীন কোনো পুরুষ কর্মকর্তা রয়েছেন, তাকে স্যার বলে সম্বোধন করা হচ্ছে, অথচ আমাকে সম্বোধন করা হচ্ছে আপা বলে। একজন নারী হওয়ার কারণে আমাকে নেগলেক্ট করা হচ্ছে, এটা খুব খারাপ লাগে। এটা আমাদের কাজের স্পৃহাকে অনেকটা কমিয়ে দেয়।
তারা বলেন, সবাইকে সম্বোধন করা উচিত তার পজিশন অনুযায়ী, মেয়ে বা ছেলে ভেদাভেদ করে নয়। আমরা খুব বেশি মুখোমুখি হই এ বৈষম্যের। একজন ছেলে হিসেবে যে দায়িত্ব পালন করা উচিত, সেটাই আমরা নারী হিসেবে করার চেষ্টা করি। এখানে নারী-পুরুষ আলাদাভাবে দেখার কোনো উপায় নেই। আমরা আমাদের কাজটাকে প্রাধান্য দেব। নারীদের কর্মক্ষেত্রে যেসব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, সেগুলো নিরসন করা হলে নারীরা আরো এগিয়ে যাবে।
হাকিমপুর থানার ওসি ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেন, পুলিশ বাহিনীতে পুরুষ সদস্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নারী সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছেন। সারা দেশের মতো হাকিমপুর থানায় নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ডেস্ক চালু আছে। এখানে একজন এএসআইসহ ছয়জন নারী কনস্টেবল কর্মরত আছেন। তারা পুরুষ সদস্যদের মতোই সেবাগ্রহীতাদের সেবা প্রদানসহ দক্ষতার সঙ্গে সব ধরনের দাপ্তরিক কাজ সম্পন্ন করছেন।