উৎপল দত্ত: কখনও কোন রাত কেটে যায় দুঃস্বপ্নের ঘেরাটোপে। রাতের বিনিদ্র প্রহর কাটে না কিছুতেই। তারপর ভোর আসে শুভ্রতা নিয়ে – এমন সফেদ শুভ্রতা যা আগের রুগ্নতা শুষে নেয়। তেমনি একটি ভোর এসেছিল একদিন – ৭ মার্চ, ১৯৭১। আকাঙ্ক্ষা আর প্রত্যয় বুকে জমাট বেঁধেছিল। শুধু প্রতীক্ষা – একটি মানুষের মুখ থেকে একটি ঘোষণার অপেক্ষা।
বহুকাল নির্যাতিত, শৃঙ্খলিত বাঙালি নিদ্রাহীন রাত কাটিয়েছে। তবু অসহিষ্ণু হয়নি। লুণ্ঠন আর রক্তপাত যতোই হোক তারা জানতো, তাদের পাশে একজন বহুবর্ষী বটের মতো মানুষ আছে আসমান-জমিন ছুঁয়ে। সে ঠিক বলে দেবে কখন জাগতে হবে কখন রুখে দিতে হবে।
আজ ৬ মার্চ, ২০২১। আগামীকালের ভোরটি সেই শুভ্র ভোর, যা অশ্রু ও রক্তের মধ্যে শৃঙ্খল-মুক্তির বীজ বুনেছিল।
একজন মানুষ। একজন প্রিয় মানুষ যে তার সত্ত্বাকে সাড়ে সাতকোটি মানুষের রক্তে প্রবাহিত করেছিল।
ইতিহাস ও ফসিল হয়।
সময়ের গাছপাথর হয়।
দিনভর প্রতীক্ষা শেষে অপরাহ্ণে শুনেছিল ২৯ মিনিটের কাব্য-কথন। যার প্রতিটি শব্দ হিমোগ্লোবিনের মতো বাঙালির রক্তে মিশে গিয়েছিল। আগামীকাল একটি স্বপ্নের ছায়া-মঞ্চে একজন মানুষ এসে দাঁড়াবেন, একজন ছায়া-মানব রেসকোর্স ময়দান স্বপ্ন পূরণের পদাবলি আওড়ে যাবেন। রেসকোর্স ময়দান এখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। মানুষটি নেই – পার্থিব উচ্চারণে নেই, প্রতিটি বাঙালির হৃৎপিন্ডে আছে। এ রাত ফুরানোর অপেক্ষা মাত্র।
মানুষ দেখবে ছায়া মানুষটি উঠে এলো ছায়া-মঞ্চে। তার পরের অধ্যায় দর্শন ও ইতিহাস আশ্রিত একটি গীতিকবিতা এই গীতিকবিতা বাঙালি গেয়েছিল নয় মাস ধরে – ঠিক পেয়েছিল স্বাধীন মাতৃভূমি – বাংলাদেশ।
এসব শুধু স্মৃতিকথা নয়। এসবই ইতিহাসের পুনির্মাণ। ইতিহাসের পৃষ্ঠা কোনদিন কপট আর্দ্রতায় হলুদ হয়ে যায়না।অলৌকিক ভোরের মতো সফেদ-শুভ্র থাকে। পাতা ওল্টালেই কথা কয়। সেই -ই শোনে না যে বধির হয়।
বঙ্গবন্ধু। রেসকোর্স ময়দান। সাড়ে সাত কোটি মানুষের হৃৎস্পন্দন – হলদেটে নয়। ঘুমে-স্বপ্নে জাগরণে বাঙালি ঠিক রেসকোর্স ময়দানে ঘুরে আসবে। অনন্য অপরাহ্ণ দেখবে।
বসন্তের বিবাগী বাতাস কিছু শব্দ তার কানে আবার পৌঁছে দিয়ে গেল কী!
লেখক: কবি ও সাংবাদিক
আরও পড়ুন:
মার্চের মোহন ডাক- (প্রথম পর্ব)
মার্চের মোহন ডাক-(দ্বিতীয় পর্ব)
মার্চের মোহন ডাক – চতুর্থ পর্ব