উৎপল দত্ত: ক্রমশ বদলে যাওয়া রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহের ধারাবাহিকতায় বাংলার স্বাধিকার আন্দোলন স্বাধীনতা আন্দোলনের আদল পেয়ে যায়। যদি ধরে নেয়া যায়, ঠিক এই রূপান্তরের অধ্যায়টির জন্য অপেক্ষা করছিলেন বঙ্গবন্ধু, একটু অত্যুক্তি হবে না।
মার্চের প্রথম সপ্তাহে রাজনৈতিক ঘটনাগুলি দ্রুত পরিবর্তনশীল। ৭ মার্চের আগে রাজনৈতিক উপাদান ও কৌশলের ক্রমাগত বদল খুব ঘনীভূত ছিলো। কখনও তা পরস্পর সংলগ্ন। কখনও তা বিচ্ছিন্ন।
পশ্চিম পাকিস্তানের দ্বিধা, সিদ্ধান্তহীনতা, মিথ্যাচারিতা, বৈরিতা ও বর্বর আচরণ থেকে তাদের নির্বুদ্ধিতা ও বিহ্ববলতার বিষয় আঁচ করা যায়। এই পরিপ্রেক্ষিতের জন্যই বঙ্গবন্ধু অপেক্ষা করছিলেন। আন্দোলেন ও জাগরণের মাত্রাকে ক্রমশ তীব্র করে তুলছিলেন। এক পর্যায়ে যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়া ছাড়া তাদের আর কোন উপায় থাকবে না, বঙ্গবন্ধু তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা দিয়ে তা উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন।
ঠিক তাই হয়েছিল। কবিতার মতো মাত্র দুটি বাক্যে সমগ্র বাঙালিকে স্বাধীনতার বীজমন্ত্র শুনিয়ে দিলেন: ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবার সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম -’ সেদিন রেসকোর্স ময়দানের ধূলি-ঘাস-পাখি ও মাটি ও শেকড় ছড়ানো গাছও তার অর্থ বুঝেছিলো। যেহেতু তা এই জমিনের অংশ ও অস্তিত্ব।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে ১৯৭১ সালের মার্চ মাস ছিল উত্তাল ঘটনাবহুল মাস। ১৯৭১ সালের ১ মার্চ পাকিস্তানের তৎকালীন সামরিক স্বৈরশাসক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করলে গণমানুষের বিক্ষোভ ক্রিস্টালের মতো দানা বাঁধে। অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের প্রতিদিনের ঘটনা প্রবাহ রাজনৈতিক বিশ্লেষণের দাবি রাখে। ৭, মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের প্রেক্ষাপট এই পর্যায়ে পর্বেক্ষণ জরুরি। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক অন্তদৃষ্টি ও চিন্তাভঙ্গির স্বচ্ছতাও এই পর্যায় থেকে উন্মোচিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
দীর্ঘ দুই দশক ধরে যে রাজনৈতিক রচনাটি তিনি লিখে চলছিলেন তারই উপসংহার বা ইতি টেনেছিলেন ৭, মার্চ ১৯৭১। নাহলে স্বাধীন দেশের স্বপ্নটি হয়তো স্বপ্নই থেকে যেত! একটি দুঃস্বপ্নের অধ্যায় রচিত হতে পারতো।
মানুষ নির্ভুল নয়। তবু এই মহান মানুষটির নেতৃত্বে ভুলের সংখ্যা এতো কম –
একটু ভেবে দেখলেই বিস্ময় জাগে।
শুধুই বিস্ময়।
আরও পড়ুন:
মার্চের মোহন ডাক- (প্রথম পর্ব)