উৎপল দত্ত: আমরা হ্যমিলিনের বাঁশিঅলা দেখিনি। তার জন্য আমাদের কোন দুঃখ–আক্ষেপ নেই। লেজেন্ডে কথিত, হ্যমিলিনের বাঁশিঅলা মেয়রের ডাকে নগরকে ইঁদুর মুক্ত করেছিল। ভয়ঙ্কর দাঁতাল ইঁদুর মুক্ত করেছিল আমদের বাঁশিঅলা। শুধু একটি নগর নয়, একটি স্বাধীন মানচিত্র, ভূখন্ড – এক দেশ, এক জাতি উপহার দিয়েছিল।
‘অগ্নিঝরা’ মার্চ কথাটি বাঙালির ঠোঁটের আগায় উথলায় – এখনও। মধ্য ফালগুনে যখন দখিনা বাতাস, পঞ্চমে কোকিল, ফুলের হাতছানি বাঙালি তখন কিছুই দেখেনি। কিছুই শোনেনি। ঔপনিবেশিকতার শাসন-শোষন তাকে দৃষ্টিহীন ও বাকহীন করে রেখেছিল। তাদের শ্রবণশক্তি দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। বধিরতা আর সব বন্ধন থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন।
শতাব্দীর শেকল হাত-পা থেকে খুলে ফেলার জন্য পাগলপারা হয়েছিল বাঙালি। পদ্মা-মেঘনা-যমুনার জলের মতো পাগলপারা। তারও আগে একটি মানুষের ছায়া ক্রমাগত স্পষ্ট হয়ে উঠছিল। ১৯৫২, ১৯৬২, ১৯৬৯, ১৯৭০ এর মাইলফলক পেরিয়ে সে খুব কাছে এসেছে তখন। প্রতিটি বাঙালির উঠোনে সে সরব।
একটি ডাক আসবে। আসবেই। প্রতিটি দরোজার কড়া নাড়বে একজন। শুধু তার অপেক্ষা । নিশ্চিত বাঙালির অপেক্ষা সত্যি হলো। সেই ডাক এলো। মার্চের সাত। রেসকোর্স ময়দানে ( সোহরাওয়ার্দী উদ্যান)। একজন মানুষের ডাক প্রতিটি বাড়ির দরোজার কড়া সজোরে নাড়া দিলো।
শান্ত অথচ প্রতয়ী মানুষটি ইনডেক্স ফিঙ্গার উঁচিয়ে কথা বলেন।
নতমুখ-বাঙালি শোনে। নতমুখী তো হবেই – আঙুলে শুধু আদেশ- নির্দেশ নয়। ওই একটি আঙুল থেকে ঝরে পড়ে মুক্তির দর্শন। খই-ফোটা ভোরের স্বপ্ন। না, শুধু স্বপ্ন নয়, তার রূপায়ণের নিভুল অংক।
৭ মার্চ, ১৯৭১ এ এই অংকটি নির্ভুলভারে কষে দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। ২২ বছরের বঞ্চনার ইতিহাস অনর্গল তার হৃদয় থেকে মুক্ত হয়েছিল মাত্র ২৯ মিনিটে। বাঙালি ম্যাগনাকার্টা পড়েনি। ৭ মার্চ, ১৯৭১ সে নিজের মুক্তির সনদ নিজ কানে শুনে বাড়ি ফিরেছিল।
উত্তাল মার্চের প্রথম দিন আজ। বাঙালি আবার ম্যাগনাকার্টা শোনার অপেক্ষায়। ইতিহাস পাথরে নয় হৃদয়ে খোদাই করে রাখতে হয়।
মার্চ,২০২১
আরও পড়ুন:
মার্চের মোহন ডাক-(দ্বিতীয় পর্ব)