উৎপল দত্ত: সঙ্গীত বেঁধেছিল দু’জনকে। সঙ্গীত থেকে প্রিয় সখা। তারপর প্রেম। বাঁধা ছিলো অনেক। সত্যজিৎ রায় বিজয়ার চেয়ে বয়সে বড়। নিকট আত্মীয়। পরিবার এ সম্পর্ক মেনে নেবে না। তাই দু’জনে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল প্রেম বেঁচে থাক, বিয়ের স্বপ্ন শিকেয় তোলা থাক। সে সিদ্ধান্ত টেকেনি। একসময় জীবনের চিত্রনাট্য বদলে গেল।
বিজয়া একসময় সিনেমায় ভালো সুযোগের আশায় মুম্বাই পাড়ি দেয়। এদিকে সত্যজিৎ রায় কলকাতায় তার বিজ্ঞাপন সংস্থার কাজে মনোযোগ দেয়। চিঠি চালাচালি হতো নিয়মিত। মানিক সুযোগ পেলে প্রায়ই কলকাতা থেকে বান্ধবীর সাথে দেখা করতে যেত। তাদের এই সাক্ষাৎকার পর্ব নিয়মিত ও অব্যাহত হতে থাকে এবং সময়ের সাথে বন্ধন আরও দৃঢ় হয়। প্রেম প্রগাঢ় হয়।
দু’জনের উপলব্ধি একসময় বদলে যায়। বিয়ের আকাঙ্ক্ষা মুখ্য হয়ে ওঠে- এবার ওই পর্বটি সেরে ফেলতেই হবে, দুজনে অনুভব করেন। ভালোবাসা তীব্র, বিয়েকে আর শিকেয় তুলে রাখা যাবে না। রায় পরিবারকে না জানিয়ে মুম্বাইয়ে রেজিস্ট্রি করে বিয়ের পাট চুকিয়ে ফেলেন সত্যজিৎ রায় ও বিজয়া রায়। বিজয়ার মা এ বিয়েতে সম্মতি দেয়নি। মায়ের মতকে অগ্রাহ্য করেই এই প্রেমিক জুটি বিজয়ার বোনের বাড়িতে ২০ অক্টোবর, ১৯৪৯ সালে বিয়েটা সেরে ফেলেন।
একটি নামকরা থিয়েটারে নতুন দম্পত্তির ‘রিসেপশন’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় । চিত্রনায়ক পৃত্থীরাজ ও তার স্ত্রী নবদম্পতিকে আশীর্বাদ করেন।
প্রত্যেক সফল ব্যক্তির পেছনেই একজন নারী থাকেন। এটা সত্যজিৎ এর ক্ষেত্রে আরও বেশি সত্য হয়েছিল। ‘পথের পাঁচালী’ থেকে শুরু করে তার জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বিজয়া রায় সবসময় সত্যজিৎ রায়কে আগলে রেখেছেন।
রায় তার সব স্ক্রিপ্ট বিজয়াকে আগে পড়ে শোনাতেন। বিজয়ার হাতে পেন্সিল তুলে দিতেন প্রয়োজনীয় কোন সংশোধনীর জন্য। তিনি বিজয়ার মতামত আগ্রহভরে চাইতেন। বিজয়ার সাথে দীর্ঘ সময় ধরে স্ক্রিপ্ট নিয়ে আলোচনা করতেন।
বিজয়ার অধিকাংশ মতামতই রায় শেষ পর্যন্ত মেনে নিতেন।
মুভিতে মহারাজ। প্রেম ও ব্যক্তি-সম্পর্কেও মহারাজ।
‘মহারাজ তোমাকে সেলাম’।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া