ডেস্ক রিপোর্টঃ বেসরকারি পর্যায়ে চিকিৎসকরা রোগীদের সেবা দিয়ে কত টাকা ফি নেবেন সেটা নির্ধারণ করবে সরকার।
সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) স্বাস্থ্য অধিদফতরে এ-সংক্রান্ত একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সচিবালয়ের নির্দেশেই এই সভা হয়। সভায় অধিদপ্তরের একজন অতিরিক্ত মহাপরিচালককে আহ্বায়ক করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে চিকিৎসাসংশ্লিষ্ট সব স্টেক হোল্ডার সম্পৃক্ত রয়েছেন।
তাদের আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট মত দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে ফি নির্ধারণের বিষয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন চিকিৎসকরা। তারা বলেছেন, ১৯৯০ সালে তৎকালীন সরকার এ ধরনের একটি উদ্যোগ নিয়েছিল। যার ফলে সরকার বিপদে পড়েছিল। বর্তমানে আমলারা সরকারকে বিপদে ফেলতে এ ধরনের পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে।
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, ‘আজ এ-সংক্রান্ত একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে, তবে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানাকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে।’
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন-বিএমএর মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরীবলেন, ‘ডাক্তারদের ফি ডাক্তারই নির্ধারণ করবেন। এটা অন্য কেউ করতে পারবেন না দেশে উকিলদের, প্রকৌশলীদের বা স্থাপতিদের ফি সরকার বা অন্য কেউ নির্ধারণ করে দেয়নি।তাহলে চিকিৎসকদের ফি কেন নির্ধারণ করতে হবে। একজন চিকিৎসক রোগীকে সেবা দিয়ে কত টাকা ফি নেবেন এটা একান্তই তার নিজস্ব বিষয়। তাছাড়া পৃথিবীর কোনো দেশেই চিকিৎসকদের ফি নির্ধারণ করা হয়নি। ইংল্যান্ডে সে দেশের সরকার বলেই দিয়েছে ফি নির্ধারণ করবেন চিকিৎসকরা। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও চিকিৎসকদের কোনো ফি নির্ধারণ করা নেই। শুধু মালয়েশিয়ায় একবার এ ধরনের উদ্যোগ নিয়েছিল। তবে সেটি বাস্তবায়ন হয়নি।’
বিএমডিসির সদস্য ও বিএমএর সাবেক মহাসচিব অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ব্যক্তিগত চেম্বারে একজন চিকিৎসক কত টাকা ফি নেবেন সেটি কখনো সরকার বা অন্য কেউ নির্ধারণ করতে পারে না। পৃথিবীর কোথাও এমন নজির নেই।’
সরকার চাইলে বেসরকারি হাসপাতালের কিছু কিছু সেবামূল্য নির্ধারণ করতে পারে, এর বেশি কিছু নয়। অধ্যাপক শারফুদ্দিন বলেন, ‘আমলারা বর্তমান সরকারকে বিপদে ফেলতে চায় বা বিব্রত করতে চায়। কারণ ১৯৯০ সালে তৎকালীন সরকার চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের উদ্যোগ নিয়েছিল। যার পরিপ্রেক্ষিতে ওই সময় সরকার সংকটে পড়েছিল। তারা এবারও সরকারকে বিব্রত করতে এই উদ্যোগ নিয়েছে।’
কয়েকজন চিকিৎসক বলেন, খ্যাতিমান চিকিৎসক ইউজিসি অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ ফি নেন মাত্র ৩০০ টাকা, অধ্যাপক প্রাণ গোপাল দত্ত ফি নেন ৫০০ টাকা, সদ্য প্রয়াত সার্জন অধ্যাপক ডা. গোলাম রসুল ফি নিতেন মাত্র ১০০ টাকা। আবার তাদের অনেক ছাত্র চিকিৎসকরা ফি নেন এক হাজার থেকে দুই হাজার টাকা। নিউরো সার্জন অধ্যাপক মোহাম্মদ হোসেন দরিদ্র রোগীদের কাছ থেকে টাকা নেন না। বরং নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা নিজের টাকায় করে দেন। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সজল কৃষ্ণ ব্যানার্জি রোগীদের কোয়ালিটি টাইম দেওয়ার জন্য দিনে মাত্র ১০ রোগী দেখেন। এসব মানবিক গুণাবলি টাকার মানে নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। তারা বলেন, সরকারের এই উদ্যোগ চিকিৎসকদের জন্য হানিকর।
এর আগে ২০১৯ সালের ১৪ ফেব্র“য়ারি ডাক্তারের ফি সরকার নির্ধারণ করে দেবে বলে জানিয়েছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক। ওইদিন জাতীয় সংসদে মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ডাক্তারদের জন্য রোগীদের কাছ থেকে নেয়া ফিসের পরিমাণ নির্ধারণের একটি পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে।
অধিবেশনে সিলেট আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী ডাক্তারদের অতিরিক্ত ফি আদায় নিয়ে অভিযোগ তুলে ধরেন। জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ বিষয়ে সরকারের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘চিকিৎসক রোগীর কাছ থেকে কি পরিমাণ ফি নেবেন তা নির্ধারণের বিষয়ে উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠনপূর্বক একটি নীমিতালা প্রণয়নের চিন্তাভাবনা রয়েছে সরকারের।’