উৎপল দত্ত: এই বসন্তে, এই ফাল্গুনে ভাষার জন্য ঝরে গেছে একগুচ্ছ পলাশের মতো রক্তিম প্রাণ। এই বসন্তেই অগোচরে গজিয়ে উঠেছিল আমাদের স্বাধীনতার বীজ। সেই বীজমন্ত্র ১৯৭১-এ আমাদের দেয় একটি স্বাধীন দেশ, আমাদের নিজস্ব জাতিসত্তার স্বীকৃতি। আমরা ইতিহাসের অমোঘ আয়নায় ফিরে দেখি আমাদের আত্মপরিচয়।
বসন্তে পাতা ঝরে যায়। ঝরাপাতার গল্প মহীরুহের মতো একজন মানুষের কথা বলে। এই মানুষটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
বিশ্বের বুকে একটি স্বাধীন মানচিত্রের অবাক চিত্রকর – বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ৫২-র জাগরণের ভাষাটি তিনি ঠিক ধরেছিলেন। আত্মস্থ করেছিলেন। বাঙালিকে ইতিহাসের পথে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন।
‘রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেবো’- এই রক্তপাতের ইতিহাস দেশবিভাগের পরপরই শুরু হয়েছিল। ৫২-র একুশে ফেব্রুয়ারিতে রক্তপাত হয়েছিল। ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে তিনি যে রক্তপাতের কথা বলেছিলেন তা ইতিহাসের অনেক পেছনে প্রোথিত। বাঙাালিকে মুক্ত, জাগরণ, ও স্বাধীন দেশ বিনির্মাণের প্রশ্নে বঙবন্ধু ইতিহাসের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েছিলেন। তাই তাঁর নেতৃত্ব নিয়ে কোন প্রশ্ন নেই। তাঁর ব্যক্তিত্ব ও নেতৃত্ব উভয়ই অবিসংবাদিত।
৫২ থেকে দীর্ঘ লড়াইয়ের রক্তাক্ত পথ পেরিয়ে একাত্তরে একটি স্বাধীন জাতিরাষ্ট্রের জনক। আজ জাতির পিতা নেই, তার অসমাপ্ত স্বপ্ন বেঁচে আছে। বাংলদেশের মানুষ স্বপ্ন দেখে সেই সব প্রাণ-প্রাচুর্যের স্বপ্ন।
ফাল্গুন এলেই ঝরাপাতার কষ্ট তাই বুকে বাজে। পলাশের রঙ এই নগরের রাজপথে ঝরে পড়া রক্তের রঙের কথা মনে করিয়ে দেয়। এর মধ্যে কোন বিভ্রম নেই।
এভাবে আমাদের জীবনে বসন্ত আসে। একুশে ফেব্রুয়ারি আসে। তার প্রথম অধ্যায় ঝরাপাতার গল্প। দ্বিতীয় অধ্যায় দ্রোহ ও বিনির্মাণের গল্প – স্বাধীনতা পল্লবিত হওয়ার ইতিহাস।
গল্পটি শোকের, গল্পটি গৌরবের। গল্পটি শোক, অশোকের রঙ আর ভাষা-শহীদদের স্মরণ করার কথা বলে। গল্প নয়, রূপকথা নয় – ইতিহাস। এই ইতিহাসের ধারাবহিকতায় একটি নেতৃত্ব। একজন মহীরুহ তুল্য ব্যক্তিত্ব – বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। অশোক-শিমুল-পলাশের পদাবলি নিয়ে তার কথা মনে পড়ে যায়।
লেখক: কবি ও সাংবাদিক