রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সূচনা পর্ব ১৯৪৮ সালের প্রথমদিক ধরে নেয়া হলেও এর বীজ উপ্ত হয়ে গিয়েছিল আরো আগে। প্রায় দেশ বিভাগের পরপরই রমনা রেসকোর্স ময়দানে যে ‘না’ ‘না’ আর্তস্বর শোনা গিয়েছিল সেই তারিখটি ছিলো ২১শে মার্চ, ১৯৪৮। সেদিন গণসংবর্ধনায় পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেছিলেন, আমি স্পষ্টভাবে আপনাদের বলতে চাই যে, উর্দু এবং উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। অন্দরে এতকাল যা ঘটছিল সদরে সেদিন তা বেরিয়ে পড়লো।
ফেব্রুয়ারি এলেই বাঙালির মনে ব্যথা-বিক্ষোভের তরঙ্গ ওঠে। মনোজগতে কয়েকটি গীতিকবিতার লাইন বাঙালিকে আলোড়িত করে। আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আব্দুল গাফফার চৌধুরীর অবিস্মরণীয় এই গীতিকবিতাটি প্রথমে ‘একুশের গান’ শিরোনামে ছাপা হয়। আব্দুল গাফফার চৌধুরীর বয়স তখন ১৯-২০। পড়তেন ঢাকা কলেজে।
১৯৫৩ সাল
প্রথম কবিতা: কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি
রচনা: মাহবুব-উল-আলম চৌধুরী
প্রথম প্রকাশনা: একুশের প্রথম সংকলন
সম্পাদনা: হাসান হাফিজুর রহমান
প্রথম গান: আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি
রচনা: আব্দুল গাফফার চৌধুরী, সুর: আব্দুল লতিফ, পরবর্তীতে আলতাফ মাহমুদ
প্রথম নাটক: কবর, মুনীর চৌধুরী
প্রথম চলচ্চিত্র: জীবন থেকে নেয়া, জহির রায়হান।
প্রথম শহীদ মিনার:
নকশা: বদরুল আলম, ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেধাবী ছাত্র
১০ ফুট উচ্চ ও ৬ ফুট চওড়া।
২২শে ফেব্রুয়ারি, গুলিবর্ষণের জায়গাটিতে রাতারাতি গড়ে তোলা হয়েছিল এ মিনার
২৬শে ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সমর্থনপুষ্ট একদল সশস্ত্র পুলিশ লাল শালুতে ঢাকা অলঙ্কার আর পুষ্প শোভিত এ মিনারটি গুড়িয়ে দেয়।
উল্লেখ্য, এর আগেই ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২ রাজশাহী নিউ হোস্টেল প্রাঙ্গণে গড়ে তোলা হয় দেশের প্রথম শহীদ মিনার।
১৯৫৭ সাল
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার:
অবনত মস্তকে স্নেহময়ী মা ও শহীদ সন্তানের প্রতীকী মিনারের স্থপতি বাংলাদেশের বিখ্যাত চিত্রশিল্পী হামিদুর রহমান। ১৯৫৭ সালের নভেম্বরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। মূল নকশায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেলের সম্মুখভাগের বিস্তৃত এলাকা অন্তর্ভুক্ত ছিল। দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য পরবর্তীকালে মূল নকশা সংক্ষিপ্ত ও সরলীকরণ করা হয়। মূল নকশার ফোয়ারা ও নভেরা আহমেদ এর ম্যুরাল বাদ পড়ে। এই নকশার সাথে হামিদুর রহমানের পাশাপাশি নোভেরা আহমেদের নামও উচ্চারিত হয়।
শহীদদের পরিচিতি:
২১ একুশে ফেব্রুয়ারি ছাত্র-জনতাসহ ঠিক কতোজন শহীদ হয়েছিল তার সঠিক পরিসংখ্যান জানা যায় না। তবে কয়েকটি নাম সবার মুখে মুখে ফেরে। তাদের পরিচিতি তুলে ধরা হলো।
রফিক উদ্দিন আহমদ
পিতা: আব্দুল লতিফ
ঠিকানা: পারিল গ্রাম, সিঙ্গাইর, মানিকগঞ্জ
পেশা: বাণিজ্য বিভাগের ছাত্র, সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ, মানিকগঞ্জ
শফিউর রহমান
পিতা: মৌলভি মাহবুবুর রহমান
পেশা: হাইকোর্টের কর্মচারী ও আইনের ছাত্র
আব্দুস সালাম
পিতা: মোহাম্মদ ফাজিল মিয়া
ঠিকানা: লক্ষ্মীপুর গ্রাম, ফেনী
পেশা: শিল্প ডাইরেক্টরের কার্যরত পিওন
আবুল বরকত
পিতা: শামসুদ্দিন
ঠিকানা: বিষ্ণুপ্রিয়া ভবন, পুরানা পল্টন ঢাকা
পেশা: রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আব্দুল জব্বার
পিতা: আব্দুল কাদের
ঠিকানা: পাঁচাইরাগ্রাম, গফরগাঁও, ময়মনসিংহ
পেশা: ছাত্র (ভাষা আন্দোলনকারীদের তথ্যানুসারে)
তথ্য সংগ্রহ: উৎপল দত্ত
কবি ও সাংবাদিক