ডেস্ক রিপোর্ট: সিলেট নগরের কেন্দ্রস্থলের চৌহাট্টায় বুধবার দুপুর একটার দিকে অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদ নিয়ে সংঘর্ষের সময় আগ্নেয়াস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হন ফাহাদ নামে এক ব্যক্তি। সংঘর্ষের সময় চৌহাট্টা এলাকায় অবস্থান করছিলেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তার খুব কাছ থেকে ফাহাদকে বন্দুক ও ৩ রাউন্ড গুলিসহ পুলিশ আটক করেছে। এ সময় সিলেট সিটি করপোরেশনের কর্মচারিরা দাবি করেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর উপর হামলা চালাতে অস্ত্রধারী ওই যুবক প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। এমন সময় শ্রমিকরা তাকে ধরে পুলিশে দেন। তবে পরিবহন শ্রমিক নেতারা দাবি করেন গ্রেপ্তারকৃত ফাহাদ তাদের কেউ নন।
পরে আটক যুবকের পরিচয় মিলেছে। বন্দুক হাতে আটক যুবকের নাম ফয়সল আহমদ ওরফে ফাহাদ (৩৮)। তিনি সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক সম্পাদক। সিটি করপোরেশনের ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আফতাব হোসেন খানের পক্ষের একজন সক্রিয় নেতা।
বন্দুক হাতে ফাহাদ ঠিক কার পক্ষে সক্রিয় ছিলেন, এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে বক্তব্য পাওয়া গেছে। তবে একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, পরিবহনশ্রমিকদের পক্ষ নিয়ে বন্দুক উঁচিয়ে ধাওয়া করার সময় ফাহাদকে পুলিশ আটক করেছে।
কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, বুধবার সকালে চৌহাট্টা এলাকায় সিটি করপোরেশনের ফুটপাত ও সড়ক বিভাজক নির্মাণকাজে বাধা দেন কয়েকজন পরিবহনশ্রমিক। এ খবর পেয়ে বেলা একটার দিকে ওয়ার্ড কাউন্সিলর, ম্যাজিস্ট্রেট ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে ঘটনাস্থলে যান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আফতাব হোসেন খানসহ অন্যান্য ওয়ার্ড কাউন্সিলরও।
পরিবহনশ্রমিকদের সঙ্গে আলাপ করার সময় দ্বিতীয় দফা সংঘর্ষ বাধে। ওই সময় মেয়র-ওয়ার্ড কাউন্সিলররাও হামলার মুখে পড়ার উপক্রম হন। সেখান থেকে মেয়রকে হেলমেট পরিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করার প্রস্তুতির সময় পুলিশও ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। একটি একনলা বন্দুক হাতে ফাহাদকে হামলাস্থলে দেখা যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিটি করপোরেশনের একজন কর্মকর্তা বলেন, মেয়রের সঙ্গে যখন ওয়ার্ড কাউন্সিলর আফতাব ঘটনাস্থলে যান, সেই সময় ফাহাদও তার সঙ্গে ছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয় দফা সংঘর্ষের সময় ফাহাদকে বন্দুক হাতে পরিবহনশ্রমিকদের পক্ষ নিয়ে ধাওয়া করতে দেখা গেছে।
এ ব্যাপারে চৌহাট্টা শাখার কার-মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি অরুণ দেবনাথের দাবি, বন্দুকধারী যুবক পরিবহনশ্রমিক নন, এমনকি স্ট্যান্ডে রাখা কোনো গাড়ির মালিকও তিনি নন। কার পক্ষ নিয়ে তিনি সেখানে ছিলেন, কীভাবে ধরা পড়লেন, এর কিছুই তারা জানেন না।’
বন্দুকসহ ধরা পড়া ফাহাদ স্বেচ্ছাসেবক লীগের মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক সম্পাদক পদে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আফতাব হোসেন খান। বন্দুক নিয়ে তার সঙ্গে ফাহাদ ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন কি না, এ বিষয়ে আফতাব বলেন, ‘আমরা সেখানে কোনো রাজনৈতিক ঘটনায় যাইনি। আমার সঙ্গে অন্য কোনো নেতা বা কর্মী ছিলেন না। সিটি করপোরেশনের কাজে বাধা দেওয়া হচ্ছে শুনে মেয়রসহ আমরা সেখানে গিয়েছিলাম। আমি নগর উন্নয়ন কমিটিতে আছি। হঠাৎ হামলার মুখে পড়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এরপর শুনেছি একজন বন্দুকসহ আটক করার খবর। ফাহাদ সেখানে কেন গিয়েছিলেন, কার সঙ্গে, কার পক্ষ নিয়ে গিয়েছিলেন—এসবের কিছুই আমি জানি না।’
আফতাব আরও বলেন, পরিবহনশ্রমিকেরা যে ধরনের আচরণ করেছেন, তা সবাই দেখেছেন। তারা কাউকে মানতে চাননি। অনেকেই দেখেছেন, পরিবহনশ্রমিকেরা হামলার সময় বন্দুক উঁচিয়ে ধাওয়া করছেন। তিনি শুনেছেন, ফাহাদের হাতে বন্দুক রেখে পরিবহনশ্রমিকেরাই ফাঁসিয়ে দিয়েছেন। পুলিশকে ঘটনাটি তদন্ত করার আহ্বান জানান তিনি।
সিলেট কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম আবু ফরহাদ বলেন, বন্দুকসহ আটক ব্যক্তির (ফাহাদ) পরিচয় যা–ই থাকুক না কেন, অবৈধ অস্ত্র হাতে তাকে আটক করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র আইনে মামলা করা হবে।