ডেস্ক রিপোর্ট: পৃথিবীতে তেলাপোকার প্রজাতি অসংখ্য। প্রজাতিভেদে এদের আচরণও ভিন্ন হয়। এক প্রজাতির তেলাপোকা প্রজনন বা সঙ্গমের পর তার সঙ্গীর পাখার কিছু অংশ খেয়ে ফেলে। তেলাপোকার এই প্রজাতির নাম সালগানিয়া তাইওয়ানেন্সিস।
কাঠ খেয়ে বেঁচে থাকে তেলাপোকার এই প্রজাতির ওপর অনুসন্ধান করার সময় একজন জাপানি বিজ্ঞানীর নজরে আসে স্ত্রী ও পুরুষ উভয় লিঙ্গের তেলাপোকাই প্রজননের মুহূর্তে তাদের পাখনা খেয়ে ফেলে।
সঙ্গম পরবর্তীকালে তারা ভালোবাসার খেলায় মেতে ওঠে তারপর একে ওপরের পাখনা বা ডানা খাওয়ার পর্ব শুরু হয়।
পাখার কিছু অংশ খাওয়া হয়ে গেলে তেলাপোকা প্রবলভাবে শরীর ঝঁকিয়ে একটি অন্যটিকে ঝেড়ে ফেলে দেয়ার চেষ্টাও করে।
এই প্রজাতির তেলাপোকারা সঙ্গীর পাখা খেয়ে খুব ছোট করে ফেলে। সময়ের সাথে যখন তাদের বয়স বেড়ে যায়, তাদের পাখাও কুঁচকে যায়।
পরস্পরের ইচ্ছায় তাদের এই পাখনা খাওয়ার প্রবৃত্তি প্রজনন বা সঙ্গমের সময় একেবারেই আলাদা।
‘ সেক্সুয়াল ক্যানিবালিজম’ বলে বিজ্ঞানসম্মত একটি পর্যবেক্ষণ আছে যেখানে প্রভাবশালী মেয়ে তেলাপোকাটি যৌনকর্ম শেষ হয়ে যাওয়ার পর পুরুষ সঙ্গীকে হত্যা ও ভক্ষণ করে। সোজাকথায় মেরে খেয়ে ফেলে। তবে অন্য পতঙ্গদের তুলনায় এই প্রজাতির যৌন-আচরণ সম্পূর্ণ ভিন্ন।
এই প্রজাতির তেলাপোকা ‘মনোগ্যামাস’ হয়ে থাকতে পারে। অর্থাৎ সঙ্গী হিসেবে তারা সারাজীবন একজনকেই বেছে নেয়, বহুগামী নয়। গবেষণা এরকমই বলে।
প্রকৃত মনোগামি ‘সম্পূর্ণ এবং আজীবন’ শর্ত সাপেক্ষ, যেখানে সঙ্গম যৌন-যুদ্ধ থেকে মুক্ত। তবে বিজ্ঞানীদের অভিমত, প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে এই দ্বন্দ্বের আপস করা যেতে পারে।
গবেষণা বলছে, পরস্পরের পাখনা খাওয়া তাদের জীর্ণ -শীর্ণ করতে পারে এবং ওড়ার ক্ষমতাও নষ্ট করতে পারে। এই প্রবৃত্তি তাদের পুনরুৎপাদন বা বংশগতি সংরক্ষণকেও প্রভাবিত করতে পারে।
পরীক্ষাগারে তাদের ডানা পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় এই আচরণ তাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতি করতে পারে। মিথুনরত অবস্থায় কাঠভোজী তেলাপোকার এই প্রজাতি পরস্পরের সম্মতিতে একে অপরের পাখা খায় – কাইশু ইউনিভার্সিটির জীববিজ্ঞানের দু’জন বিজ্ঞানী তাদের এই পর্যবেক্ষণকে প্রথম দৃষ্টান্ত হিসেবে দাবি করেন।
মিলেমিশে পাখা-খাওয়ার ঘটনা পারস্পরিক সহযোগিতার উদাহরণ হতে পারে। নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে নারী এবং পুরুষদের মধ্যে মিথস্ক্রিয়া ব্যাখ্যা করতে সহায়তা করতে পারে।
সঙ্গমের পর ডানা খাওয়ার প্রবণতা যদি বাচ্চার দক্ষতা বৃদ্ধি করে, তবে এই আচরণ তার সঙ্গিনীর ক্ষেত্রেও স্বভাবজাত।
গবেষকদের মতে, ডানায় কোনও মাংস থাকে না, তাই খাদ্যের উৎস হিসেবে তা কোন গুরুত্বও বহন করে না।
এস তাইওয়ানেন্সিস প্রজাতির প্রাপ্তবয়স্ক তেলাপোকারা তাদের সঙ্গীর সন্ধানের জন্য প্রসবের কলোনি, যা আসলে বনের মধ্যে পঁচা কাঠের গুড়ি, সেখান সেখান থেকে দূরে উড়ে যায়।
পরীক্ষার জন্য জাপানের বিজ্ঞানীরা ২৪ জোড়া প্রজননক্ষম তেলাপোকা সংগ্রহ করে ল্যাবে নিয়ে যায়। তিন দিন ধরে তারা ভিডিও রেকর্ড করে।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, উভয় লিঙ্গের ১২ জোড়া তেলাপোকা ডানা খেতে শুরু করলো। তাদের ডানা মা-বাবার চেয়ে ছোট না হওয়া পর্যন্ত তারা তাদের ডানা খেতেই থাকলো।
বাদবাকি নয় জোড়া আংশিকভাবে ডানা খেয়েছিল। এদের মধ্যে তিন জোড়া প্রজাপতি ডানা খায়নি।
সেক্সুয়াল ক্যানিবালিজিম বা যৌন মিলনের সময় ইনসেক্ট বা পতঙ্গের মধ্যে পরস্পরকে খেয়ে ফেলার নজির আছে। ডমিন্যান্ট বা প্রভাবশালী সঙ্গিনীদের ক্ষেত্রে পুরুষ সঙ্গীকে হত্যা ও খেয়ে ফেলার প্রবণতাও দেখা গেছে।
আগের গবেষণাগুলিতে দেখা যায় যৌন মিলনের পর হত্যা বা যৌন সঙ্গীকে খেয়ে ফেলার ক্ষেত্রে দুটি বিষয় কাজ করে। প্রথমত, প্রজননকালীন সময়ে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সংগ্রহ করা। দ্বিতীয়ত, নিকৃষ্ট সঙ্গীর সাথে প্রজনন বা যৌন মিলন এড়িয়ে চলা।
পুরুষ পতঙ্গের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, ব্যাপারটি প্রয়োজনীয় পুষ্টি দিয়ে তার স্ত্রী-সঙ্গী ও সন্তানের কল্যাণের জন্যই এই আত্মত্যাগ, যা বিবর্তনের ক্ষেত্রেও সহায়ক ও উপযোগী।
দেখা যায়, পুরুষটি লড়াইয়ের পক্ষে সক্ষম হয়েছে, প্রায়শই প্রজননের প্রবৃত্তি পতঙ্গ জুটিকে সহিংস লড়াইয়ের দিকে পরিচালিত করে, সফল লড়াই তার সঙ্গমের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে।
জাপানী বিজ্ঞানী ওসাকি এবং কাসুয়া বলেন, ‘যৌন মিলনে মাংস ভক্ষণের ক্ষেত্রে সাধারণত স্ত্রী- সঙ্গী জড়িত। বিপরীত ঘটনা বিরল।
মিলনের আগে-পরে মাংস ভক্ষণের এই ব্যাপারটিকে বলা হয় ‘নাপশাল ফিডিং’। সেক্ষেত্রে পুরুষ সঙ্গী তার শরীরের কোনও ছোট অংশ স্ত্রী-সঙ্গীকে খাওয়ার জন্য উপহার দেয়।
মিলনকালে বীর্য ছাড়াও এই উপহার দেয়ার উদ্দেশ্য বাচ্চার সংখ্যা বাড়ানো।