অর্থনীতি ডেস্কঃ দেশের দুই শেয়ারবাজারে গত দুই দিনে দুই-তৃতীয়াংশ শেয়ারের দরপতন হয়েছে। টানা দু’দিন ভয়াবহ দরপতনে শেয়ারবাজারে আতঙ্ক বিরাজ করছে। দিশেহারা ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। যেসব শেয়ারের দরপতন হয়নি, তার সিংহভাগের দরপতনের কোনো সুযোগই ছিল না। কারণ সেগুলোতে ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেওয়া আছে।
গত এক মাস ধরে কমবেশি দরপতন চলছে শেয়ারবাজারে। মাত্রা কম থাকায় বিনিয়োগকারীরা এতদিন আতঙ্কিত না হলেও গত দু’দিনে নির্বিচার পতনের কারণে সবাই হতবাক হয়ে গেছেন। এ দু’দিনে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স হারিয়েছে পৌনে ৫ শতাংশ। বেঞ্চমার্ক সূচক ডিএস-৩০ এর পতন হয়েছে আরও বেশি, প্রায় ৭ শতাংশ।
করোনা মহামারির শুরুর পর অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়ে। ধসে পড়ে শেয়ারবাজার। অবশেষে ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ ও বাজারে লেনদেন স্থগিত রাখা হয়। এখন সেই ভয়াবহ পরিস্থিতির সঙ্গে বাজারকে অনেকে তুলনা করছেন। যদিও এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। করোনার টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরুর মধ্য দিয়ে মহামারির বিরুদ্ধে যুদ্ধে দৃশ্যমান অগ্রগতি আছে এবং অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে দরপতনের যৌক্তিক কোনো কারণই কেউ খুঁজে পাচ্ছেন না, তাই মেনেও নিতে পারছেন না।
নিয়ন্ত্রক সংস্থায় নতুন চেয়ারম্যান আসায় বাজারে গতি এসেছিল। অনেকে আশায় বুক বেঁধেছিলেন। এ সময় অনেকে বুঝে বা না বুঝে, উচ্চ মূল্যের শেয়ার কিনেছেন। আইপিও শেয়ারের দর আকাশচুম্বি হয়। বীমা খাতের কিছু শেয়ারের দর রাতারাতি ১০-১৫ গুণ হয়। পরবর্তী সময়ে মিউচুয়াল ফান্ডও একই ধারায় চলে। সর্বশেষ বৃহৎ মূলধনি কোম্পানির বেশ কিছু শেয়ারকে ঘিরে নানা গুজব ও গুঞ্জনে ওইসব শেয়ারও রাতারাতি ৫-৬ গুণ দর বেড়ে যায়। এখন রাতারাতি এসব শেয়ারের দাম পড়ে যাচ্ছে। আর নিস্ব হচ্ছেন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা।
ভয়াবহ এই পতনের জন্য কয়েকটি কারণ রয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন। চলতি বছরের শুরুতে করোনাভাইরাসের টিকা বাংলাদেশ কবে পাচ্ছে- এ নিয়ে একের পর এক বিভ্রান্তিকর খবর ও গুজবে ছন্দপতন হয় শেয়ারবাজারে। তারপর একে একে নানা নেতিবাচক ইস্যু তৈরি হতে থাকে। মার্জিন ঋণের সুদহার বেঁধে দেওয়া, নতুন ব্রোকারেজ লাইসেন্স ইস্যুর ঘোষণাসহ নানা ইস্যুর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে তারা মনে করছেন।
জানা গেছে, রোববার (৭ ফেব্রুয়ারি) – এ বড় দরপতনের পর সোমবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, তার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি ছিল শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই)। উভয় প্রতিষ্ঠানের সার্ভিল্যান্স বিভাগ এবং মার্কেট মনিটরিং দল সকাল ১০টায় লেনদেন শুরুর আগে থেকেই তৎপর হয়। তাতে কোনো লাভ হয়নি। মাত্র ২৩টি শেয়ারের দরবৃদ্ধির বিপরীতে ২৩৬টিরই দরপতন হয়েছে গতকাল। যে ৯১টির দর অপরিবর্তিত ছিল, তার ৮২টিরই ফ্লোর প্রাইসের কারণে দরপতনের সুযোগ ছিল না।
মার্জিন ঋণের সুদহার বেঁধে দেওয়াকেও বড় কারণ বলে মনে করেন ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তা জানান, মার্জিন ঋণের সুদহার সর্বোচ্চ ১২ শতাংশ বেঁধে দিয়ে নির্দেশনা জারির পর গত জানুয়ারিতেই অনেক ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংক মার্জিন ঋণ প্রদান বন্ধ করে দিয়েছিল। এর প্রভাবে বাজারে তারল্য প্রবাহে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। কারণ, ব্যক্তি শ্রেণির প্রায় সব বড় বিনিয়োগকারী মার্জিন ঋণ নিয়ে শেয়ার কেনাবেচা করেন। তাদের শেয়ার কেনাবেচা বাজারকে বেশি প্রভাবিত করে। মার্জিন না পাওয়ায়, তাদের বিনিয়োগ সীমিত হয়ে পড়েছে।
চলতি দরপতনকে ‘ইচ্ছাকৃত দরপতন’ বলেও মনে করেন কেউ কেউ। দেশের অর্থনীতি যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে শেয়ারবাজার আরও ভালো করার কথা। এ অবস্থায় প্রভাবশালীদের অনেকে বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা করছেন। কিন্তু শেয়ারদর অনেকটা বাড়তি থাকায় তারা সুযোগ পাচ্ছেন না। এজন্য কৌশলে দরপতনকে উসকে দেওয়া হচ্ছে।