• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০২:৪১ অপরাহ্ন
Notice
We are Updating Our Website

৩০০ বছরের ঐতিহ্য অষ্টগ্রামের পনির

নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেট : সোমবার, ২৫ জানুয়ারী, ২০২১
৩০০ বছরের ঐতিহ্য অষ্টগ্রামের পনির ২

ডেস্ক রিপোর্ট: হাওর অধ্যুষিত তিন উপজেলাসহ ১৩ উপজেলা নিয়ে গঠিত কিশোরগঞ্জ জেলা। হাওর অধ্যুষিত উপজেলাগুলোর একটি অষ্টগ্রাম। মোগল শাসনামলে মূল ভূখণ্ডে দত্তপাড়া নামে একটি বসতি অঞ্চল ছিল। বিস্তৃর্ণ হাওরের গবাদিপশু পালনের অনুকূল পরিবেশকে কাজে লাগিয়ে দত্তপাড়ার কয়েকজনের হাতে তৈরি হওয়া পনির বাণিজ্যিক সম্ভাবনা জাগায়। ঐতিহ্যের এই গল্প অন্তত ৩০০ বছর আগের। সেই সময় কয়েক বছরের মধ্যে গুণ, মান ও বর্ণে এই পনিরের পরিচিতি দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।

দেশ ও বিশ্ববাজারে অষ্টগ্রামের পনিরের চাহিদা দিন দিন বাড়লেও প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিকতার এই সময়ে এই পনিরের প্রসার সংকুচিত হয়ে এসেছে। অষ্টগ্রামের কারিগরদের বড় একটি অংশ এখন ঢাকা, চটগ্রাম ও সিলেটে স্থায়ী বসতি করে পনির ব্যবসা খুলে বসেছে। বড় একটি অংশ চলে গেলেও অষ্টগ্রামে পনির তৈরি বন্ধ হয়ে যায়নি। অসংখ্য প্রতিকূলতার মধ্যে এখনো বেশ কয়েকটি পরিবার সম্পূর্ণ হাতে তৈরি করে পনিরের স্বাদ ও মান ধরে রেখেছে। তাই রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ শৌখিন ব্যক্তিরা এখনো অষ্টগ্রামের পনিরের সন্ধান করেন এবং বাজার সম্ভাবনাও দেখেন।

পনির তৈরির প্রধান উপাদান দুধ। আর এই হাওর জনপদ অষ্টগ্রামের অর্থনীতি কৃষি ও মৎস্য নির্ভর। এই জনপদের জমি এক ফসলি। বর্ষার বিস্তৃর্ণ জলরাশি আর গ্রীষ্মে ফসলি মাঠ। চারণভূমি আর সবুজ ঘাসের সমারোহের কারণে হাওরে পর্যাপ্ত গরু ও মহিষের পালন হয়। হাওরের গবাদিপশুর দুধের গুণগত মান উৎকৃষ্ট। সেই কারণে অষ্টগ্রামে পনির তৈরির কাঁচামালের অভাব হয়নি কখনো।

অষ্টগ্রামের পনিরের বিশেষত্ব হল এখাকার গরু ও মহিষ বছরের বেশির ভাগ সময় সতেজ ঘাস খাওয়ার সুযোগ পায়। সেই কারণে দুধে ক্রিম থাকে প্রচুর। ফলে পনির তৈরির পর সুন্দর রং আসে এবং স্বাদেও ভিন্নতা থাকে।

অষ্টগ্রামের এই পনির যাচ্ছে বঙ্গভবন ও গণভবনেও। বিশেষ করে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের খাদ্যতালিকায় পনির অপরিহার্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে। গত বছর একটি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী অষ্টগ্রামের পনির নিয়ে তাঁর ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেন এবং বিদেশ রপ্তানির সম্ভাবনার কথা বলেন।

বর্তমানে এক কেজি পনির তৈরি করতে ১০ কেজি দুধের প্রয়োজন হয়। হাঁড়িতে দুধ গরম করে ছানা করা এবং ছেঁকে পনির তৈরি করতে হয়। সব মিলিয়ে উৎপাদন খরচ হয় ৬০০ টাকার মতো। ফলে ৭০০ টাকার নিচে বিক্রি করার সুযোগ থাকে না। কখনো কখনো এক হাজার টাকা কেজিদরে বিক্রি করা যায়।

জীভে জল আসা এই পনির একসময় ইউরোপের বাজারও দাপিয়ে বেড়ায়। দেশ-বিদেশে সুখ্যাতি অর্জন করা অষ্টগ্রামের পনির এখন হয়ে উঠেছে গোটা কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যের অন্যতম স্মারক।


আপনার মতামত লিখুন :
এ জাতীয় আরও খবর