ডেস্ক রিপোর্ট: রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কঠোর সমালোচক এবং বিরোধী দলীয় নেতা আলেক্সি নাভালনির মুক্তির দাবিতে দেশটিতে বড় ধরনের বিক্ষোভ হয়েছে। পুলিশের নিষেধাজ্ঞা এবং প্রবল শীত উপেক্ষা করে শনিবার হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেয়। বিক্ষোভ থেকে নাভালনির পনের শতাধিক সমর্থককে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আল জাজিরা।
নাভালনির স্ত্রী ইউলিয়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানান, মস্কোর বিক্ষোভ থেকে তাঁকে আটক করা হয়েছিলো। পরে তাঁকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। নাভালনির আইনজীবী লুভব সোবলকেও বিক্ষোভ থেকে আটক করা হয়।
১৭ জানুয়ারি জার্মানি থেকে রাশিয়ায় ফিরেই বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার হন নাভালনি। গত আগস্টে নাভালনির শরীরে বিষ প্রয়োগ করা হয়। তার দাবি, সরকারি নিরাপত্তা সংস্থা গোপনে তার অন্তর্বাসে বিষ প্রয়োগ করেছিলো। জার্মানিতে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তিনি।
জার্মানি থেকে ফিরলে নিরাপত্তা হেফাজতে নেওয়া হয় নাভালনিকে। রাশিয়ার কর্তৃপক্ষ জানায়, নাভালনি প্যারোলে মুক্তির শর্ত ভঙ্গ করেছেন। যদিও নাভালনির দাবি, তার মুখ বন্ধ করতে সাজানো মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে। এরপর শনিবার বিক্ষোভ করতে সমর্থকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
আলেক্সি নাভালনির ডাকে শনিবার রাশিয়াজুড়ে বিক্ষোভে নামেন তার হাজার হাজার সমর্থক।
বিবিসির অনলাইন প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, মস্কোর পুশকিন স্কয়ারে দশ হাজারের ওপরে বিক্ষোভকারী জড়ো হন। বিক্ষোভ ঠেকাতে প্রচুর সংখ্যক দাঙ্গা পুলিশ নিয়োগ করা হয়।
বিক্ষোভকারীরা ”নাভালনির মুক্তি চাই”, ”পুতিনের পদত্যাগ চাই” বলে স্লোগান দেন।
”বেআইনী” সমাবেশে ত্যাগ করে বিক্ষোভকারীদের চলে যেতে লাউডস্পিকারে ঘোষণা দিচ্ছিলো পুলিশ।
পরে পুলিশ লাঠিচার্জ করে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়।
বিশ্বব্যাপী বিক্ষোভ পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ওভিডি ইনফোর বরাতে আল জাজিরা জানায়, সারা দেশে বিক্ষোভ থেকে কমপক্ষে ১৬১৪ জনকে আটক করা হয়েছে। এদের মধ্যে মস্কোতে ৩০০ এবং সেন্ট পিটাসবার্গে ১৬২ জনকে আটক করে পুলিশ। সংস্থাটি জানায়, ৭০টির মত শহর থেকে বিক্ষোভকারীদের আটক করেছে পুলিশ। বিক্ষোভ থেকে আটকের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেও জানায় সংস্থাটি।
আল জাজিরা তাদের মস্কোর প্রতিবেদক আলেক্সান্ড্রা গডফ্রিডের বরাতে জানায়, বিক্ষোভে অংশ নেওয়া জনগণের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ বাঁধে। পুলিশ লাঠিপেটা করে তাদের সরিয়ে দেয়।
বিবিসি জানায়, রাজধানী মস্কোর পুশকিন স্কয়ারে নাভালনির মুক্তি দাবি জড়ো হওয়া মানুষের মধ্যে বড় অংশ ছিলো কিশোর। পুলিশ তাদের লাঠিচার্জ করলে তারা আশেপাশের রাস্তায় সরে পড়ে।
রাশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করেছেন, মস্কোতে চার হাজারে মত লোক বিক্ষোভে জড়ো হন। যদিও বিরোধী সূত্রগুলো এবং বিবিসির প্রতিবেদক জানান, বিক্ষোভকারীর সংখ্যা দোষ হাজারের অধিক।
বিক্ষোভের আগেই দেশটির কর্তৃপক্ষ কঠোর পদক্ষেপ নেয়। রাশিয়ার পুলিশ জানিয়েছিলো, অনুমতি ছাড়া যে কোন ধরনের বিক্ষোভের চেষ্টা করা হলে তা কঠোরভাবে দমন করা হবে। বিক্ষোভের আগেই নাভালনির মুখপাত্র কিরা ইয়ারমিশসহ তার কয়েকজন ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিকে আটক করেছিলো পুলিশ।
প্রথমবারের মত প্রবল শীত উপেক্ষা করে রাশিয়ার পূর্ব অঞ্চলে শনিবার নাভালনির সমর্থনে বিক্ষোভ হয়।
সাইবেরিয়া অঞ্চলের ইয়াকুতস শহরে মাইনাস ৫০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় বিক্ষোভে অংশ নেট কিছু মানুষ।
বিক্ষোভে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উস্কানির অভিযোগ তুলেছে রাশিয়া। শনিবার নাভালনির সমর্থনে বিক্ষোভের রুট ঠিক করে দেওয়ার জন্য মস্কোর মার্কিন দূতাবাসকে অভিযুক্ত করেছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এর জন্য মার্কিন দূতাবাসকে জবাব দিতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
যদিও মার্কিন দূতাবাস বলেছে, তারা প্রতিবাদ পর্যবেক্ষণ করেছে মাত্র। সেইসাথে জনগণের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি ওয়াশিংটনের সমর্থনের কথা বলা হয়।
রাশিয়ার সরকার জনগণের এসব অধিকার খর্ব করছে বলে টুইটে জানান মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র বেরেকা রস।