ডেস্ক রিপোর্ট: এবার ভারতীয় টিভি উপস্থাপক অর্নব গোস্বামী এবং ভারতীয় সম্প্রচার গবেষণা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ‘পার্থ দাশ গুপ্তের’ মধ্যে হোয়াটসঅ্যাপ কথোপকথন ফাঁস হয়েছে।
ভারতীয় এই গুরুত্বপূর্ণ দুই ব্যক্তিত্বের মধ্যে কথোপকথনে প্রকাশিত হয়েছে যে, ভারত পরিকল্পিতভাবে পুলওয়ামায় তার সৈন্যদের হত্যা করেছে৷ এবং পাকিস্তানের উপর দোষ চাপিয়ে দিয়েছে৷ এরপর ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী লাশের উপর মায়া কান্না কেঁদেছে৷ এসব তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানের উর্দু ডেইলি জং।
অপরদিকে ভারতের গণমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, “গত দুই দিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল সাংবাদিক অর্ণব গোস্বামীর সঙ্গে বার্কের প্রাক্তন সিইও পার্থ দাসগুপ্তের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট। টিআরপি দুর্নীতির তদন্ত করতে গিয়ে এই চ্যাটের সন্ধান পায় মুম্বই পুলিশ, যা ফাঁস হয়ে গিয়েছে অনলাইন। এবার সেই চ্যাটের বিভিন্ন অংশ নিয়ে তদন্তের দাবিতে সরব হয়েছেন বিরোধী দলের নেতারা। এই নিয়ে এখনও নীরব শাসক ভারতীয় জনতা পার্টি।”
বিবরণ অনুসারে, পুলওয়ামার হামলাটি পাকিস্তান ও কাশ্মীরি মুসলমানদেরকে ফাঁসানের জন্য সাজানো নাটক ছিলো , যা আজ সর্বস্তরে প্রকাশ পেয়ে গেছে।
হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট অনুসারে, অর্ণব গোস্বামী ভারতে সর্বোচ্চ স্তরে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, এবং যা ঘটতে যাচ্ছে সে সম্পর্কে পুরোপুরি অবগত ছিলো৷ অর্ণব গোস্বামী কেবল বালাকোটের হামলার ঘটনা সম্পর্কেই অবহিত ছিলো না, বরং ভারতীয় সংবিধান থেকে কাশ্মীরিদের বিশেষ অধিকার সংক্রান্ত ৩৭০ ধারা বাতিল করার বিষয়েও অবহিত ছিলো।
অর্ণব গোস্বামী তার চ্যানেলের রেটিং বাড়ানোর জন্য বি এ আরসি প্রধানের সাথে কাজ করছিলো। ২৩ শে ফেব্রুয়ারী, ২০১৯, পাকিস্তানের ব্যাপারে যা ঘটতে যাচ্ছে সে বিষয়েও অর্ণব ‘বি এ আরসির’ প্রধানকে অবহিত করেছিলো। গোস্বামী বলেছিলো পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বড় ধরণের কোনো অভিযান হবে। গোস্বামী জানতো যে, কাশ্মীরে অস্বাভাবিক কিছু ঘটতে চলেছে।
অর্ণব গোস্বামীর মতে, মোদী সরকার পাকিস্তান বিরোধী পদক্ষেপ নিয়ে জনগণকে সন্তুষ্ট করতে চেয়েছিল। বালাকোট হামলার পরে গোস্বামী বিএআরসি প্রধানকে বলেছিলো যে, আরও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে ভারতীয় এক অধ্যাপক ‘অশোক সোয়েন’ ঘটনাকে তখনি একটি নাটক বলে অভিহিত করেছিলেন। অধ্যাপক অশোক সোয়েনের মতে, ২০০২ সালে গুজরাটে মোদি যা করেছিলো, পুলওয়ামায় ও হুবহু তাই করলো৷
অশোক সোয়েনের মতে মোদী সরকার ভোট পাওয়ার জন্যই মূলত পুলওয়ামার নাটকটি করেছে৷
২০১৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের বালাকোটে অভিযান চালিয়েছিল ভারতীয় বিমানবাহিনী। চার্জশিট অনুযায়ী, ২৩ ফেব্রুয়ারি পার্থর সঙ্গে কথোপকথনের সময়ে অর্ণব পুলওয়ামা হামলার পরে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহের প্রথম সাক্ষাৎকার রিপাবলিক টিভি-তে সম্প্রচার নিয়ে ফলাও করে কথাবার্তা বলেন। তার পরেই তিনি বলেন, ‘‘বড় একটা কিছু হবে।’’ পার্থ জানতে চান, দাউদ প্রসঙ্গে কোনও পদক্ষেপ করবে সরকার? অর্ণব জবাবে জানান, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বড় অভিযান চালাবে ভারত। সেইসঙ্গে কাশ্মীরেও বড় পদক্ষেপ করবে সরকার। পার্থ জানান, এটা ‘বিগ ম্যান’-এর পক্ষে ভালই হবে। দেশবাসী খুশি হবেন। তিনি ভোটে বড় জয় পাবেন। খবর আনন্দবাজারের।
এ নিয়ে কংগ্রেস আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া এখনও জানায়নি। তবে কংগ্রেস নেতা ও আইনজীবী অভিযেক মনু সিঙ্ঘভির বক্তব্য, ‘‘২৩ ফেব্রুয়ারি অর্ণব যা বলেছেন তা থেকে বোঝা যাচ্ছে তিনি পাকিস্তান সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্য জানতেন। অর্থাৎ সরকারের কোনও শীর্ষ কর্তা গোপন তথ্য ফাঁস করেছিলেন। টিআরপি বাড়ানোর জন্য সেনাদের জীবনের ঝুঁকি বাড়ানো হয়েছে।’’
কংগ্রেস সাধারণ সম্পাদক জিতেন্দ্র সিংহের মতে, ‘‘দেখা যাচ্ছে অর্ণব কেবল সরকারের মুখপাত্র নন, তিনি সেনাপ্রধানের মতো প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত গোপন তথ্যও জানেন।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘দেশবাসী খুশি হবেন, এ কথা থেকে বোঝা যাচ্ছে কেন বিজেপি সরকার সামরিক অভিযান চালিয়েছিল।’’
অন্য দিকে এ দিন অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে টিআরপি জালিয়াতিতে গ্রেফতার রেটিং সংস্থা ‘ব্রডকাস্ট অডিয়েন্স পার্থ দাশগুপ্তকে। গত মাসে টিআরপি মামলায় বিএআরসি-র প্রাক্তন চিফ অপারেটিং অফিসার রোমিল রামগড়িয়াকে গ্রেফতার করেছিল মুম্বই পুলিশ। তার পর পরই গ্রেফতার হন পার্থ। অভিযোগ, তাঁরা দু’জন মিলে এমন ভাবে টিআরপি জালিয়াতি করেছিলেন যাতে রিপাবলিক টিভি টেলিভিশন রেটিংয়ে সেরা চ্যানেল হিসেবে উঠে আসে। পুলিশ জানিয়েছে, পার্থ নিয়মিত সুগারের ওষুধ খাননি। তাই সুগার বেড়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি।