স্ত্রীর মৃত্যুর খবর শুনে স্বামীরও মৃত্যু, অনাথ হয়ে গেল আট দিন বয়সী নবজাতক

স্ত্রীর মৃত্যুর খবর শুনে স্বামীরও মৃত্যু, অনাথ হয়ে গেল আট দিন বয়সী নবজাতক

ডেস্ক রিপোর্ট: এক সপ্তাহ আগে ফুটফুটে পুত্রসন্তানের জন্ম দেন নাদিয়া আনার কলি (২০)। আজ সকালে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। দ্রুত তাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে ওষুধ আনতে বেরিয়েছিলেন স্বামী মোস্তফা আকন। কিন্তু ফার্মেসিতে পৌঁছার আগেই মোবাইলে স্ত্রীর মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন মোস্তফাও।

বৃহস্পতিবার সকালে পটুয়াখালী ২৫০ শয্যা হাসপাতালে এই ঘটনা ঘটেছে। একসঙ্গে মা-বাবার মৃত্যুতে অনাথ হয়ে পড়েছে আট দিন বয়সী নবজাতকটি। এ ঘটনার পর এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুকে বুকে নিয়ে শুধুই মাতম করছেন মোস্তফা ও কলির পরিবারের সদস্যরা।

মোস্তফা আকনের বাড়ি পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার আমখোলা ইউনিয়নের দক্ষিণ-পশ্চিম বাঁশবুনিয়া গ্রামে। বৃহস্পতিবার দুপুরে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, স্বামী-স্ত্রীর অকালমৃত্যুর খবরে মোস্তফার বাড়িতে আশপাশের এলাকার লোকজন ভিড় করেছেন। সকালেই দুজনের মরদেহ মোস্তফাদের গ্রামে নিয়ে আসা হয়। দুই পরিবারের লোকজনের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে সেখানকার পরিবেশ। আট দিনের নবজাতককে বুকে নিয়ে অঝোরে কাঁদছেন কলির মা ছালমা বেগম ও মোস্তফার মা সাজেদা বেগম।

বাঁশবুনিয়া গ্রামের নুরুল হক আকনের চার ছেলের মধ্য মোস্তফা ছিলেন তৃতীয়। পটুয়াখালী শহরের ফজিলাতুন্নেছা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে খণ্ডকালীন ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে পাঠদান করে আসছিলেন মোস্তফা। প্রায় ছয় বছর আগে পারিবারিকভাবে শহরের টাউন কালিকাপুর এলাকার প্রয়াত মকবুল হোসেনের মেয়ে কলির সঙ্গে বিয়ে হয়।

পরিবারের সদস্যরা জানান, কলি গর্ভবতী হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সন্তান প্রসবের জন্য শহরের একটি ক্লিনিকে ভর্তি হন। ক্লিনিকে ৬ জানুয়ারি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পুত্রসন্তানের মা হন কলি। সুস্থ হয়ে ১১ জানুয়ারি ক্লিনিক থেকে শহরের শান্তিবাগ এলাকায় ভাড়া বাসায় ওঠেন তারা।

মোস্তফার ভাগনি মুক্তা বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কলি একাধিকবার বমি করেন ও তার খিঁচুনি ওঠে। স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়লে সকালেই মোস্তফা কলিকে নিয়ে পটুয়াখালী ২৫০ শয্যা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসকেরা তাৎক্ষণিক কলিকে গাইনি ওয়ার্ডে ভর্তি করে ওষুধের জন্য ব্যবস্থাপত্র লিখে দেন। মোস্তফা ওষুধ কিনতে হাসপাতালের সামনের ফার্মেসির দিকে যাওয়ার সময় মোবাইলে কলির মৃত্যুর খবর পান। সেখানেই ঢলে পড়েন মোস্তফা। লোকজন তাকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা ৫০ মিনিটের সময় গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় কলিকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। ভর্তি করার পর সকাল ৮টা ১০ মিনিটে কলি মারা যান। এরপর পরই স্বামী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।

পটুয়াখালী ২৫০ শয্যা হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা মাজাহারুল ইসলাম বলেন, গুরুতর অসুস্থ কলিকে হাসপাতালে নিয়ে এলে বারবার বমি করেন ও তার খিঁচুনি হচ্ছিল। বেডে নেওয়ার পরপরই রক্ত বমি হয় এবং মারা যান কলি। প্রসব-পরবর্তী অ্যাকলেমশিয়ায় কলির মৃত্যু হয় বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা। আর তার স্বামী মোস্তাফা স্ত্রীর মৃত্যুর খবরের শোক সইতে পারেননি। হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *