ডেস্ক রিপোর্ট: বাজারে মধ্যস্বত্বভোগীর নৈরাজ্য ঠেকাতে এবং কৃষকপর্যায়ে ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে এবার কঠোর অবস্থানে সরকার। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ১৪টি কৃষিপণ্য উৎপাদনের খরচ বেঁধে দিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। এরই অংশ হিসেবে কৃষিপণ্যের দাম মনিটরিংয়ের লক্ষ্যে কমিশন গঠন করা হয়েছে। যা অনুমোদনের জন্য এখন রয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়ে। সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে পণ্য বিক্রি হচ্ছে কি না, তা মনিটরিং করবে তদারদিক দল।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ বলেছেন, মূলত চারটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েই এমন উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রতিটি কৃষিপণ্যের কেজিপ্রতি উৎপাদনের সর্বোচ্চ খরচ নির্ধারণে বিবেচনায় আনা হয়েছে বর্গাজমির খরচ, কৃষি ঋণের সুদ, যন্ত্রপাতি আর সার বীজের ব্যয়, কৃষকের পারিশ্রমিক এবং পণ্য পরিবহন খরচ।
এদিকে এমন উদ্যোগে সাধুবাদ জানিয়েছেন কৃষক আর কৃষি বাণিজ্য ও বিপণন বিশেষজ্ঞরা। তারা আবাদ মৌসুমে কৃষি উপকরণের দাম নিয়ে অরাজকতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন।
অর্থনীতির নিয়মে, পণ্যের চাহিদা আর যোগানের উপরই নির্ধারিত হয় বাজারমূল্য। কিন্তু দেশের তৃণমূল পর্যায়ে সেসব নিয়ম-কানুন মানার কোনো বালাই নেই। এ কারণে ভরা মৌসুমেও নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ে অসন্তোষ, ভোক্তা কিংবা কৃষক দু’পক্ষেরই।
এবার এ অবস্থা পরিবর্তনেরই কঠোর ইঙ্গিত দিলো সরকার। যৌক্তিক বাজারমূল্য নির্ধারণে এবার বেঁধে দেয়া হয়েছে ১৪টি পণ্য উৎপাদনের সর্বোচ্চ খরচ। প্রতিকেজি রসুন ৩০ টাকা ৮৭ পয়সা, মরিচ ১৯ টাকা, সরিষা ৩৩টাকা ৮৪ পয়সা, মসুর ডাল ৪০ টাকা ৩২ পয়সা, পেঁয়াজ আবাদে সর্বোচ্চ খরচ ধরা হয়েছে ১৯ টাকা ২৪ পয়সা, টমেটো ৮টাকা ২১ পয়সা, শসা ৮টাকা ৪ পয়সা, বেগুন ৯টাকা ২০ পয়সা, লাউ ৫টাকা ৩৩ পয়সা, কাঁচাপেপে ৪টাকা ২৭ পয়সা, ফুলকপি ৭টাকা ৪২ পয়সা, বাঁধাকপি ৭টাকা ৭ পয়সা, শিম ১০টাকা ১৩ পয়সা এবং ঢেঁড়স ১০টাকা ৭৯ পয়সা।
এদিকে এ উদ্যোগকে ইতিবাচক বললেও, চাষাবাদের সময় কৃষি উপকরণের দামে লাগাম টানতে না পারলে সুফল আসবে না বলেই মনে করছেন কৃষকরা। শুধু উপকরণের দাম নয়, এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন কার্যকর উৎপাদনমুখী বাজার ব্যবস্থাপনাও দরকার বলে মনে করছেন কৃষি বিপণন বিশেষজ্ঞরা।
মহাপরিচালকের দাবি, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর বলছে, উৎপাদন খরচ অনুযায়ী দাম না পাওয়ায় চাষাবাদে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষক। খরচ বেঁধে দেয়ায় এবার কমবে মাঠ ও বাজারকেন্দ্রিক সব ধরণের অসন্তোষ।
পাশাপাশি, পর্যায়ক্রমে দুটি আবাদ মৌসুমে সব ধরণের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের উৎপাদন খরচ বেঁধে দেয়ার সঙ্গে পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রেও সর্বোচ্চ দাম নির্ধারণে সরকারের নানামুখী তৎপরতার কথাও জানিয়েছেন তিনি।