ডেস্ক রিপোর্ট: রাজধানীর কলাবাগানে ‘ও’ লেভেল শিক্ষার্থী আনুশকাকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত তানভীর ইফতেখার দিহানের তিন বন্ধুকে নিয়েও নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর এসব প্রশ্নের উত্তর মিলবে ফরেনসিক রিপোর্ট ও দিহানের ডিএনএ টেস্টের পরই।
যদিও ঐ তিন বন্ধুর বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। শুক্রবার রাতেই জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেয়া হলেও প্রয়োজনে আবারো জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদেরকে থানায় ডাকা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
আনুশকার এক স্বজন রোববার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকের ভাষ্য ও পুলিশের সুরতহাল প্রস্তুতকারী পুলিশ কর্মকর্তার তথ্য অনুযায়ী, মেয়েটির যৌনাঙ্গ ও পায়ুপথে গভীর ক্ষত ছিল। দেহের দুই অংশ থেকেই রক্তপাত হচ্ছিল। একজনের পক্ষে এমন নৃশংসতা চালানো সম্ভব নয়। দিহান যদি একাই এমন নৃশংসতা চালায়, তাহলে সে কি নেশাগ্রস্ত ছিল? নাকি নিজে ও মেয়েটাকে উত্তেজনাকর কিছু খাইয়েছিল?’
তবে দিহান একা, নাকি তার সঙ্গে তিন বন্ধু জড়িত তা নিশ্চিত হতে ফরেনসিক পরীক্ষার প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ কর্মকর্তারা। এরই মধ্যে পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে রোববার কারাগারে থাকা আসামি দিহানের ডিএনএ পরীক্ষার আদেশ দিয়েছেন আদালত।
রমনা জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার সাজ্জাদ হোসেন বলেন, প্রাথমিকভাবে ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়নি দিহানের তিন বন্ধুর বিরুদ্ধে। মামলার এজাহারেও দিহান ছাড়া অন্য কাউকে আসামি করা হয়নি। মুচলেকা দিয়ে পরিবারের সদস্যদের কাছে তুলে দেয়া হয় ৩ জনকে। তবে তদন্তের স্বার্থে যে কোনো তথ্যের জন্য জিজ্ঞাসাবাদে তাদের ডাকা হতে পারে বলেও জানান তিনি।
আনুশকার মরদেহ ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক বলেছেন, ‘মেয়েটি বিকৃত ও কুরুচিপূর্ণ যৌনাচারের শিকার হয়েছিল। তার যৌনাঙ্গ এবং পায়ুপথে ক্ষতচিহ্ন পাওয়া গেছে। এ কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে।’ এর পরই স্বজনরা প্রশ্ন তুলছেন- চিকিৎসকের বিবরণ অনুযায়ী এমন বর্বরোচিত পাশবিকতা একজনের পক্ষে করা সম্ভব কিনা?
এ বিষয়ে মেয়েটির বাবা অভিযোগ করেন, ‘তারা চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পেরেছেন, মেয়ের ওপর যে নৃশংস ঘটনা ঘটেছে।’
গত ৭ জানুয়ারি কলাবাগানে অভিযুক্ত দিহানের নিজ বাসায় ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় ও লেভেলের শিক্ষার্থীকে। পরে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে নিহতের বাবা বাদী হয়ে কলাবাগান থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলার এজাহারে যা আছে
মামলার এজাহারে মেয়েটির বাবা উল্লেখ করেছেন, ‘বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টায় আমার স্ত্রী অফিসে এবং আমি সকাল সাড়ে ৯টায় ব্যবসার কাজে বের হয়ে যাই। পরে আমার মেয়ে বেলা সাড়ে ১১টায় তার মাকে ফোন দিয়ে বলে সে কোচিংয়ের কাগজপত্র আনতে বাইরে যাচ্ছে। দুপুর ১টা ১৮ মিনিটে দিহান আমার স্ত্রীকে ফোন দিয়ে বলে আমার মেয়ে তার বাসায় গিয়েছিল। সেখানে হঠাৎ অচেতন হয়ে পড়ায় তাকে রাজধানীর আনোয়ার খান মডার্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করিয়েছে। এ কথা শুনে আমার স্ত্রী দুপুর ১টা ৫২ মিনিটের দিকে হাসপাতালে পৌঁছায়। সেখানে গিয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসকের কাছে জানতে পারে আমাদের মেয়েকে ধর্ষণ করে মেরে ফেলা হয়েছে। পরে আমরা বিভিন্নভাবে জানতে পারি দিহান আমার মেয়েকে প্রেমে প্রলুব্ধ করে ধর্ষণের উদ্দেশ্যে তার বাসায় ডেকে নিয়ে যায়। দিহান ফাঁকা বাসায় আমার মেয়েকে একা পেয়ে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের সময় প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়ে সে অচেতন হয়ে যায়। পরে ধর্ষণের ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে দিহান চালাকি করে আমার মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।’
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) রাতে কলাবাগান থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯-এর ২ ধারায় খুনসহ ধর্ষণ মামলা করেন মেয়েটির বাবা। এ আইনে বলা আছে, ‘যদি কোনও ব্যক্তি কর্তৃক ধর্ষণ বা ধর্ষণ পরবর্তী অন্যবিধ কার্যকলাপের ফলে (ধর্ষণের শিকার) নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটে, তাহলে ওই ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন। এর অতিরিক্ত কমপক্ষে এক লাখ টাকা অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন।’