বিনোদন ডেস্ক: তাহসান রহমান খান একই সঙ্গে দেশের জনপ্রিয় গায়ক ও অভিনেতা। তবে এই তারকাখ্যাতি কেবল দেশেই নয়, পশ্চিমবঙ্গেও রয়েছে তার অসংখ্য ভক্ত। ২০১৭ সালে স্ত্রী রাফিয়াত রশিদ মিথিলার সঙ্গে ১১ বছরের দাম্পত্য জীবনের বিচ্ছেদ হয় তাহসানের। এরপর গান, নাটক ও সিনেমা ঘিরেই আবর্তিত হচ্ছে তার জীবন।
সম্প্রতি ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিজের ব্যক্তিগত জীবনের পাশাপাশি সৃজিত, মিথিলা ও মেয়ে আয়রাকে নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। সেখানেই তাহসান জানালেন, সৃজিত মুখোপাধ্যায়কে তিনি ভীষণ পছন্দ করেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা না বলার কারণ সম্পর্কে জনপ্রিয় এ গায়ক বলেন, ‘আসলে আমি একটু কম সোশ্যাল। তাই সাংবাদিক বন্ধুদের সঙ্গে সে রকম যোগাযোগ রাখতে পারি না। এছাড়া এখনো পর্যন্ত ভারতে গিয়ে কোনো কাজ করা হয়নি। ফলে সেখানকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ থাকলেও ইন্ডাস্ট্রির কারও সঙ্গে আলাপ নেই। তাই সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ আসেনি।’
ভারতে কাজের সুযোগ সম্পর্কে জনপ্রিয় গায়ক ও অভিনেতা তাহসান বলেন, আসলে আমি যে ধরনের কাজ করতে চাই, সে ধরনের কাজের জন্য এখনো ডাক পাইনি। তাই কনসার্ট বা অভিনয়ের জন্যও যাওয়া হয়নি কখনো। তবে এখন কলকাতায় যাওয়ার একটা বড় কারণ পেয়েছি। আমার মেয়ে আইরা সেখানে তার মায়ের সঙ্গে থাকে। তাই কলকাতা আসার জন্য আমার মন এখন উড়ছে! জীবনের এমন একটা জায়গায় আছি, কলকাতায় যে কাজই পাব, লুফে নিয়ে চলে যাব।
এত কাজ নিয়ে থাকেন, কিন্তু প্রচারে তো খুব একটা দেখা যায় না এমন প্রশ্নের উত্তরে তাহসান বলেন, ‘অনেকেই আমাকে বলেন ‘স্টারডম’ ধরে রাখার জন্য আমার প্রচারে থাকা উচিত, মিডিয়ার সঙ্গেও কথা বলা উচিত। কিন্তু আমি মনে করি, কাজের মাধ্যমে ভক্তদের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি কানেক্ট করা যায়। শুধু খবরে থাকার জন্য কোনো কাজ করতে বা কথা বলতে আমি বিশ্বাসী নই। এছাড়াও বিগত কয়েক বছরে বেশ কিছু সংবাদমাধ্যম আমাকে নিয়ে এমন কিছু কথা লিখেছে, যেগুলো হয় তো আদৌ সত্যি নয়। সে কারণে আমি আরও একটু প্রচারবিমুখ হয়ে পড়েছি।’
আপনি সুযোগ পেলে ভারতের কোন পরিচালকের সঙ্গে কাজ করতে চাইবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি এ রকম রিজিড চিন্তাভাবনা করি না। আগে দেখি গল্পটা কেমন। তবে এখন সৃজিত আমার খুবই প্রিয়, কারণ আমার মেয়েরও খুব ভালো লাগে তাকে। যদিও আগে থেকেই তার কাজ বেশ পছন্দ করতাম। এছাড়াও রাজ চক্রবর্তীর কাজ দেখে বেশ ভালো লেগেছে।’
মিথিলার সঙ্গে বন্ধুত্বটা কীভাবে বজায় রেখেছেন এমন প্রশ্নে কিছুটা বিচলিত হয়ে জনপ্রিয় গায়ক ও অভিনেতা তাহসান বলেন, ‘এটা আসলে খুব কঠিন একটা প্রশ্ন। আমাদের প্রত্যেকেরই তো কিছু দোষ-গুণ আছে। আমাদের একটা সম্পর্ক ফেল করেছে মানে এই নয় যে বন্ধুত্ব থাকবে না। আমাদের মেয়েকে আমরা দুজনেই খুব ভালোবাসি। আমি মনে করি, আমরা দুজন আলাদা থেকেও আইরাকে সুন্দরভাবে বড় হওয়ার সুযোগ করে দিতে পারি।’
মিথিলার সঙ্গে কথা হয় কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতিনিয়ত যোগাযোগ আছে। ওরা তো এখন সিকিমে। আইরা বরফ দেখে ওখান থেকেই আমাকে ভিডিও কল করেছিল।’
সৃজিত মুখার্জি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পরিচালক হিসেবে সৃজিত আমার খুবই প্রিয়। কারণ আমার মেয়েরও খুব ভালো লাগে ওকে। যদিও আগে থেকেই ওর কাজ বেশ পছন্দ করতাম।’
তাহসান নতুন সিনেমা ‘নো ল্যান্ডস ম্যান’-এ কাজ করছেন নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকির সঙ্গে। তার সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ফারুকির সঙ্গে সেই কবে থেকে পরিচয়! বহু দিন ধরে ওর কাজেরও ভক্ত। এ ছবিতে অবশেষে ওর সঙ্গে কাজের সুযোগ আসে। আর নওয়াজউদ্দিন একজন অসামান্য অভিনেতা। ছবিতে আমার বেশির ভাগ দৃশ্যই তার সঙ্গে। কিন্তু ছবির গল্পটাই আমাকে সব থেকে বেশি আকর্ষণ করেছে। নওয়াজউদ্দিনের সঙ্গে কাজ করেও খুব ভালো লেগেছে।’
অভিনীত নাটকের সংখ্যা ১০০ পেরোলেও সিনেমা মাত্র একটা কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বড় পর্দার চুলচেরা বিশ্লেষণটা এমন হয় যে পারফেক্ট টিম না পেলে কাজ করতে চাই না। আমি আসলে এখনো কমার্শিয়াল ফিল্মের জন্য নিজেকে পুরোপুরি তৈরি বলে মনে করি না। তবে বাংলাদেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি বদলাচ্ছে। আশা করি, আগামী দিনে কাজের পরিধি আরও বাড়বে।’
উল্লেখ্য, তাহসান ও মিথিলা ২০০৬ সালে ৩ আগস্ট বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। আইরা তেহরীম খান তাহসান-মিথিলা দম্পতির একমাত্র সন্তান। তাহসান মিথিলার পরিচয় গানের মাধ্যমে। তাহসান তখন ব্ল্যাক ব্যান্ডের গায়ক। এক বন্ধুর সঙ্গে তাহসানের আড্ডায় গান শুনতে যান মিথিলা। এরপর ধীরে ধীরে সম্পর্ক পরিণয়ে গড়ায়। বিয়ের পর এ জুটি একাধিক নাটকে অভিনয় করেন। ‘আমার গল্পে তুমি’, ‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস’, ‘ল্যান্ডফোনের দিনগুলোতে প্রেম’, ‘মধুরেন সমাপয়েত’ নাটকসহ বেশ কয়েকটি নাটকে অভিনয় করেন এ জুটি। নাটক ছাড়াও এ জুটি একসঙ্গে গানও গেয়েছেন।