বিনোদন ডেস্ক: ভারতীয় কিংবদন্তী সংগীতশিল্পী দিলীপ কুমার। তিনি অর্জন করেছেন অস্কারসহ অনেক জাতীয়, বিদেশী পুরস্কার। আপনার মনে হয়তো একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, এই দিলীপ কুমারটা আবার কে? আসলে দিলীপ কুমার হলো ভারতীয় সঙ্গীত পরিচালক, গায়ক ও সঙ্গীত প্রযোজক এ আর রহমান।
গতকাল বুধবার (৬ জানুয়ারি) এ আর রহমানের ৫৪তম জন্মদিন ছিল। তবে তার জীবন নিয়ে একটি বড় প্রশ্ন রয়েছে অনেকের মনে। কেনই বা ধর্ম ও নাম পাল্টালেন তিনি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা জানায়, ‘এ আর রহমান: দ্য স্পিরিট অব মিউজিক’ বইয়ে এই সংগীতকারের জীবনী লিপিবদ্ধ করেছেন নাসরিন মুন্নি কবির। এ ছাড়া বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন এ আর রহমান।
১৯৬৭ সালের ৬ জানুয়ারিতে মাদ্রাজে সঙ্গীতজ্ঞ আর কে শেখরের দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম যখন হয় তিনি তখন তার নাম রাখেন এ এস দিলীপ কুমার। কিন্তু নিজের নামটা পছন্দ ছিল না তার। সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘কিংবদন্তি অভিনেতা দিলীপ কুমারের প্রতি কোনোভাবেই অসম্মান নেই আমার। কেবল আমার মনে হয়েছিল যে আমার সঙ্গে এই নামটা যাচ্ছে না।’
যে সময়ে নাম বদলানোর কথা ভাবছেন, সেই সময়ে তার বাবা আচমকা মারা যান। বাবার অকালমৃত্যুতে স্তব্ধ হয়ে যায় গোটা পরিবার।
এ আর রহমানের মা করিমা বেগম (ধর্মান্তরিত হওয়ার পরের নাম) সন্তানদের খাওয়া-পরার জোগান দিতে হিমশিম খেতে থাকেন। তিনি চিরকালই আস্তিক মানুষ। আজও রহমানের বাড়িতে হিন্দু দেবদেবীর ছবি রয়েছে। পাশাপাশি মা মেরির কোলে যিশুখ্রিষ্টের ছবিও রয়েছে।
খুব কম বয়সে কাজকর্ম শুরু করেন এ আর রহমান। ১৯৮৬ সালে রহমানের মা করিমা বেগম দেখা করতে যান সুফি পীর করিমুল্লাহ্ শাহ কাদরির সঙ্গে। পীর তখন অসুস্থ ছিলেন। করিমা বেগম তার শুশ্রূষা করেন। বাবা-মেয়ের মতো সম্পর্ক তৈরি হয় তাদের মধ্যে। তার কিছু বাণী ধীরে ধীরে করিমা ও রহমানের ব্যক্তিত্বে পরিবর্তন আনে। সুফির প্রভাব পড়ে তাদের ওপর। কিন্তু করিমুল্লাহ শাহ কোনোদিন তাদের ধর্মান্তরকরণের কথা বলেননি।
রহমান এক সাক্ষাৎকারে জানান, ‘সুফি আমাকে শিখিয়েছিল, যেভাবে সূর্য বা বৃষ্টি কখনো মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ করে না তেমনই মানুষেরও একে অপরের মধ্যে ভেদাভেদ করা উচিত না। তা সে যে ধর্ম বা বর্ণ হোক না কেন। কেউ নিজে থেকে না চাইলে কোনোদিন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার জন্য জোর করা হয় না। আমরাও স্বেচ্ছায় গ্রহণ করেছি ইসলামকে।’
ধর্ম পরিবর্তনের আগে নিজের নাম পরিবর্তন করেন রহমান। তার বোনের কোষ্ঠীবিচার করাতে করিমা বেগম এক জ্যোতিষীর কাছে যান। নাম পরিবর্তনের ইচ্ছা প্রকাশ করেন রহমান। জ্যোতিষি তাকে দুটি নামের কথা বলেন- আব্দুর রহমান ও আব্দুর রহিম। একজন হিন্দু জ্যোতিষ হয়েও তিনি মুসলিম নামের পরামর্শ দেন তাকে। শেষে তার মা ‘আল্লাহ্ রাখা’ নামটি রাখেন। আর সঙ্গে রহমান। আল্লাহ্ রাখা শব্দের অর্থ, খোদা যাকে রক্ষা করেন।
তারপরই মণিরত্নমের ছবি ‘রোজা’য় সুর দেন এ আর রহমান। এর পর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।
সম্প্রতি মা করিমা বেগমকে হারিয়েছেন এ আর রহমান। তাই এবারের জন্মদিনে নেই তেমন কোনো আয়োজন।