অদক্ষ মাস্টার পাইলট দিয়ে চট্টগ্রাম থেকে নৌপথে জাহাজে পণ্য পরিবহন চলছে। এতে প্রায় সময় পণ্যবাহী জাহাজ দুর্ঘটনার শিকার এবং জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। চট্টগ্রাম থেকে প্রতিদিন দুই শতাধিক পণ্যবাহী জাহাজ ছেড়ে যায়। এর বিপরীতে বিআইডব্লিউটিএতে স্থায়ী ও খণ্ডকালীন মাস্টার পাইলট রয়েছেন মাত্র ৩৮ জন। বিআইডব্লিউটিএ চট্টগ্রাম কার্যালয় জানায়, মাস্টার পাইলট নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।
পণ্য পরিবহনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে আমদানি করা পণ্যের প্রায় ৮০ শতাংশ নৌপথে পরিবহন হয়ে থাকে। পরিবহন খরচ কম হওয়ার কারণে নৌপথে পণ্য পরিবহন ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে বহরে জাহাজের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিআইডব্লিউটিএ যদি দৈনিক চাহিদা অনুপাতে পাইলট সরবরাহ দিতে পারে, তাহলে এই খাতে রাজস্ব আয় বছরে দ্বিগুণ বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি চ্যানেল নিরাপদ রাখতে বয়া, বাতি ও নাব্যতা বাড়াতে জোর দিতে হবে। বর্তমানে এসব বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর অনেক ঘাটতি রয়েছে।
বিদেশ থেকে আমদানি করা সব পণ্যবাহী মাদার ভ্যাসেল চট্টগ্রাম বন্দরের বহিঃর্নোঙরে পণ্য খালাসের জন্য নোঙর করে। পরে সেখান থেকে পণ্য খালাস করে লাইটারেজ জাহাজে করে নৌপথে দেশের ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। সংশ্লিষ্টরা জানান, চট্টগ্রাম থেকে প্রতিদিন দুই শতাধিক পণ্যবাহী লাইটারেজ জাহাজ চলাচল করে। কিন্তু এসব জাহাজ পরিচালনার জন্য বিআইডব্লিউটিএতে পর্যাপ্ত মাস্টার পাইলট নেই। বয়সজনিত কারণে অবসরে যাওয়া শূন্য পদে দীর্ঘদিন যাবত্ পাইলট নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না।
সংশ্লিষ্টরা জানান, চ্যানেলের নাব্যসংকটে নৌপথে জাহাজ চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বর্ষাকালে প্রায় সময়ে সাগর উত্তাল থাকে। চ্যানেলে বয়ার সংকটসহ নানা সমস্যা রয়েছে। ফলে এসব প্রতিকূল পরিবেশে অদক্ষ মাস্টার দিয়ে জাহাজ চলাচলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যায়। চ্যানেলের গতিপথ ঠিক রাখতে না পারায় প্রায়ই পণ্যবাহী জাহাজ দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। বিআইডবিউটিএ জানায়, অনেক আগেই দেড়শ মাস্টার পাইলট নিয়োগের জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু অনুমোদিত পদ না থাকায় মন্ত্রণালয় পাইলট নিয়োগ দিচ্ছে না। পাইলট মাস্টার নিয়োগের আগে পদ সৃজন করতে হবে। সম্প্রতি খণ্ডকালীন ১৯ জন পাইলট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়,পণ্যবাহী জাহাজে মাস্টার পাইলট নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে, কিন্তু পর্যাপ্ত মাস্টার পাইলট কর্মরত নেই। পাইলট না নিলেও জাহাজ চলাচল করলেই পাইলট ফি প্রদান করতে হবে। চ্যানেলে একাধিক বিট রয়েছে। প্রতি বিটের জন্য এক যাত্রায় পাইলট ফি বাবদ ৫০০ টাকা পরিশোধ করতে হয়। পাইলট সংকটের কারণে যে জাহাজ পাইলট পরিচালনা করছেন, সেই জাহাজকে পেছনের একাধিক জাহাজ অনুসরণ করে চলাচল করছে। জাহাজ পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, অনেক পণ্যবাহী লাইটারেট জাহাজ পাইলট ফি না দিয়ে চলাচল করছে। বৃহত্ শিল্প গ্রুপগুলোর মালিকানাধীন কয়েক শ লাইটারেজ জাহাজ নিয়মিত চলাচল করছে। সঠিকভাবে তদারকির মাধ্যমে পাইলট ফি নিশ্চিত করা গেলে রাজস্ব আয় আরো বৃদ্ধি পাবে।
এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএ চট্টগ্রাম কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. সেলিম বলেন, বাধ্যবাধকতা থাকলেও দৈনিক চলাচলরত সব জাহাজে পাইলট সরবরাহ দেওয়া যাচ্ছে না। বর্তমানে স্থায়ী, খণ্ডকালীনসহ ৩৮ জন পাইলট রয়েছেন। নতুন ১৫০ জন পাইলট নিয়োগের জন্য মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিয়েছে। এখন ফাইল অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
সূত্র: ইত্তেফাক